রমজান মাসজুড়ে রোজা রাখেন মুসলিমরা। সিয়াম সাধনা করেন। রোজা অবস্থায় করা যাবে না এমন কাজ থেকেও বিরত থাকেন। ধর্মীয় নিয়মানুসারে, কিছু কিছু কাজে রোজা ভেঙে যায়। আবার কিছু কাজ রয়েছে যা রোজা ভেঙে যায় বলে ভ্রান্ত ধারণা থাকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে রক্ত দেওয়া। অনেকের ধারণা, রক্ত দিলে রোজা ভেঙে যায়। অথচ বিশেষজ্ঞরা জানান, রোজা অবস্থায় রক্ত দেওয়া নিরাপদ এবং রোজাও ভেঙে যাবে না।
সাধারণত মূমুর্ষ রোগীর জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়। রক্ত দিয়ে মরণাপন্ন রোগীকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব। রমজান মাসে কোনো মূমুর্ষ রোগীর রক্তের প্রয়োজন হলে অনেকেই দ্বিধায় থাকেন। কারণ রোজা থাকা অবস্থায় রক্ত দেওয়া ঠিক হবে কিনা তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট ধারণা থাকে না। তাই রক্তের গ্রুপ মিলে গেলেও মূমুর্ষ রোগীকে রক্তদান করতে চান না।
বিশেষজ্ঞরা জানান, রোজা থাকা অবস্থায় শরীর থেকে অন্য ব্যক্তিকে রক্ত দিলে রোজা ভাঙে না। রক্ত বের করে নেওয়া হয় বলে তা রোজা ভাঙার কারণ হয় না। সুস্থ–সবল ব্যক্তির শরীরে প্রায় ১ থেকে দেড় লিটার বাড়তি রক্ত থাকে। জরুরি অবস্থায় রক্তদান করলে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না।
তবে রক্তদানের পরবর্তী সময়ে নিজের দিকে বাড়তি যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে রক্তদানের পর রক্তদান কেন্দ্রে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হবে। বিশ্রাম নিলে শরীর ঝিমঝিম করা, মাথা হালকা হয়ে যাওয়া রেহাই পাওয়া যাবে। ২৪ ঘণ্টায় ৩-৪ লিটার পানি বেশি খেতে হবে। রক্তদানের পর ২-৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ভারী কোনো কাজ করা যাবে না। শারীরিক পরিশ্রম, সাইকেল চালানো, অধিক উচ্চতায় কাজ করা যাবে না। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে।
অন্যদিকে যদি কেউ দুর্বল অনুভব করেন নিজেকে তবে রোজা অবস্থায় না দিয়ে ইফতারের পর রক্ত দেওয়া ভালো হবে।
রক্ত দিলে রোজা না ভাঙার কারণ হিসাবে বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, সাধারণত পেটে বা মস্তিষ্কে কোনো কিছু গেলে রোজা ভেঙে যায়। কিন্তু শরীর থেকে কোনো কিছু বের হলে রোজা ভাঙবে না। কিন্তু রক্ত গড়িয়ে পড়লে অজু ভেঙে যাবে। এদিকে যিনি রক্ত দেবেন তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে। রক্তদানের আগে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকা প্রয়োচজন। ভালোভাবে ঘুমিয়ে নিতে হবে এবং চিন্তামুক্ত থাকতে হবে। মনে রাখবেন, সুস্থ ব্যক্তি রক্তদানের জন্য উপযুক্ত।