প্রতিবছরই বিশ্বজুড়ে কিছু রোগের প্রভাব বেশি থাকে। বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে রীতিমতো হুমকি মুখে ফেলে দেয় কিছু সংক্রমিত রোগ। এর মধ্যে কিছু রোগের পুনরাবৃত্তি হয়। আবার কিছু নতুন রোগের আবির্ভাব ঘটে। যা পুরো বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে দাড়ায়। ২০২৪ সালও ব্যতিক্রম যায়নি। নতুন-পুরোনো রোগের প্রভাব নিয়ে কেটেছে এই বছর। বিশ্বব্যাপী বেশ কিছু সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। যা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে গেছে।
এমপক্স (মাঙ্কিপক্স)
এমপক্স, যা মাঙ্কিপক্স নামেও পরিচিত। ২০২৪ সালে এটি আফ্রিকা মহাদেশে বিশেষ করে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এই বছর আগস্ট পর্যন্ত আফ্রিকায় ১৭,০০০-এর বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৫১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এই প্রাদুর্ভাবকে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক উদ্বেগজনক জরুরি অবস্থা (PHEIC) হিসেবে ঘোষণা করে।
ডেঙ্গু জ্বর
২০২৪ সালে এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে ভারী বর্ষণের কারণে এশিয়ার দেশগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। বাংলাদেশেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল বেশি। এই রোগে আক্রান্ত যেমন ভয়াবহ ছিল, তেমনি ছিল মৃত্যুর সংখ্যাও। বছরের শেষ সময়েও ডেঙ্গু আতঙ্কের মধ্যেই রয়েছে এই দেশের মানুষ।
নিপা ভাইরাস
দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যে ২০২৪ সালে নিপা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এই ভাইরাস বাদুড় ও শূকর দ্বারা ছড়ায়। দ্রুত একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। কেরালায় এই ভাইরাসের কারণে বেশ কিছু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
মারবার্গ ভাইরাস
মারবার্গ ভাইরাস একটি বিরল এবং মারাত্মক ভাইরাল হেমোরেজিক জ্বর। যা ২০২৪ সালে কিছু অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এটি সংক্রামিত শরীরের তরল যেমন রক্ত, লালা, ঘাম ইত্যাদির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ছড়ায়। লক্ষণগুলোর মধ্যে হঠাৎ জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা, ক্লান্তি, ডায়রিয়া এবং পেটে ব্যথা অন্তর্ভুক্ত।
চন্ডিপুরা ভাইরাস
ভারতের মহারাষ্ট্রের চাঁদিপুরা গ্রামে ১৯৬৫ সালে প্রথম শনাক্ত হয় চন্ডিপুরা ভাইরাস (CHPV)। ২০২৪ সালে এর পুনরায় প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এই ভাইরাস মাছি, মশা এবং অন্যান্য পোকামাকড়ের কামড়ে ছড়ায়। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, শরীরে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া।
কোভিড-এর XBB রূপ
২০২৪ সালে COVID-19-এর নতুন রূপ XBB সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই রূপটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বরাবরের মতোই শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হয়েছেন।
স্তন ক্যানসার
২০২৪ সালে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বিশেষ করে স্তন ক্যানসার। এই রোগে স্তনের টিস্যুতে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা
প্রতি বছরের মতো ২০২৪ সালেও ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে শীতকালীন সময়ে এটির প্রকোপ বেড়েছে। এই রোগটি সাধারণত শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ সৃষ্টি করে এবং বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে জটিলতা বাড়ায়।
হাম
বিশ্বের কিছু দেশে টিকাদান কর্মসূচির ঘাটতির কারণে ২০২৪ সালে হাম রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ বেশি হয়।
ইবোলা
পশ্চিম আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে ২০২৪ সালে ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ পুনরায় দেখা দেয়। এই মারাত্মক রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং উচ্চ মৃত্যুহার সৃষ্টি করে।
জিকা ভাইরাস
কিছু দক্ষিণ আমেরিকান দেশে ২০২৪ সালে জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা গেছে। যা গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষ ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
এমআরএসএ (MRSA)
২০২৪ সালে হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে মেথিসিলিন-প্রতিরোধী স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস (MRSA) সংক্রমণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের কারণে চিকিৎসায় জটিলতা সৃষ্টি করে।
২০২৪ সালে এই রোগগুলোর প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এসব রোগের মোকাবিলা করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।