• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দেশের হাসপাতালে বার্ন ইউনিট ও একজন সামন্ত লাল সেন


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৪, ০৪:০৯ পিএম
দেশের হাসপাতালে বার্ন ইউনিট ও একজন সামন্ত লাল সেন
ডা. সামন্ত লাল সেন। ছবি : সংগৃহীত

মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় কখনো ভাবেননি একদিন আগুনে পোড়া রোগীর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হবেন। সামন্ত লাল সেন বলেন, “যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু ডা. গার্স্টকে এনেছিলেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। সেখানে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি শুরু হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে বানিয়াচং থেকে বদলি হয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আসি। স্বপ্ন নিয়ে প্লাস্টিক সার্জারিতে কাজ শুরু করি।”

১৯৮০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি হয়ে আসেন সামন্ত লাল সেন। পোড়া রোগীদের তখন ছড়িয়ে–ছিটিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে রাখা হতো। এমনকি বারান্দায় বা বাথরুমের পাশেও রোগীদের ঠাঁই হতো। তখন সার্জারি বিভাগের প্রধান ছিলেন অধ্যাপক কবির উদ্দীন আহমেদ। আগুনে পোড়া রোগীদের জন্য পৃথক কিছু করার চিন্তা শুরু করেন তারা। মাত্র পাঁচটি শয্যা দিয়ে ৩৪/বি নামে একটি ওয়ার্ড চালু করেন।

ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পোড়া চিকিৎসার আয়োজন। ২০০০ সালে ঢাকা মেডিকেলে ৫০ শয্যার বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০০৩ সালে সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করে ওই ইউনিট। চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন অধ্যাপক সেন।

২০১২ সালে ইউনিটকে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয় এবং দেশের ১৪টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালু করা হয় স্বতন্ত্র বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। সারা দেশে তিন শর বেশি পদ সৃষ্টি করা হয়। একপর্যায়ে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের শয্যাসংখ্যা বেড়ে হয় ৩০০।

সামন্ত লাল সেন বলেন, “দুর্গন্ধের কারণে রোগীদের পাশে কেউ যেতে চায় না। পোড়া রোগীদের কী কষ্ট, তা আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। এসব রোগীর চিকিৎসার জটিলতা আমি জানি। তাই সব সময় চেয়েছি মানুষ সচেতন হোক, মানুষ আগুনে না পুড়ুক, মানুষ হাসপাতালে না আসুক।”

অগ্নিদগ্ধদের উন্নত চিকিৎসা, পোড়া রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’–এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি ১৮ তলা ভবনের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে অতিদরিদ্র রোগীও চিকিৎসা পাচ্ছেন। সামন্ত লাল সেন বলেন, “কিছু পোড়া রোগীর যন্ত্রণা লাঘবের জন্য শীতল পরিবেশ খুবই দরকার। সেই পরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বহু বছর ধরে ভেবেছি। আজ কিছুটা স্বস্তি বোধ করছি।”

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। নতুন মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে ডাক পেয়েছেন জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটগুলোর সমন্বয়ক অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাবেন।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দেশবরেণ্য এই চিকিৎসক জানান, ফোন পাওয়ায় তিনি খুবই আশ্চর্য হয়েছেন। তিনি বলেন, “এ ঘটনায় আমি খুবই আশ্চর্য হয়ে গেছি। আমি জানি না আমি কতটুকু পারব। আমার বার্ন নিয়ে আমি কাজ করি। সেখানে নতুন করে আবার একটা দায়িত্ব, দেখি। এখনও বলতে পারছি না!”

তিনি বলেন, আমি মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করলে বার্নের কি হবে সেটা নিয়েই আমার চিন্তা। বঙ্গবন্ধু আমাকে বার্ন ইউনিটের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, এখান থেকেই আমি মানুষের জন্য কাজ করেছি। বার্ন ইউনিট থেকে শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিউটের দায়িত্ব নিয়েছি। দেশের অন্য মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্ন ইউনিট ও আরও ইনিস্টিউটের কাজ বাকি আছে। সেগুলো করতে হবে।

ডা. সামন্ত লাল আরও বলেন, “শেখ কামাল আমার বন্ধু ছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মন্ত্রীর দায়িত্ব দিচ্ছেন। আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা। আগে যা ছিলাম আমি তাই থাকব। মানুষের জন্য কাজ করব।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি প্রশাসনিক দায়িত্ব নেওয়ার পরে বলতে পারব কোথায় কি করতে হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের চিকিৎসকরা খুবই দক্ষ এবং আন্তরিক। তাদের নলেজ মেধা সবই আছে। তাদেরকে যদি সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় তাহলে বাংলাদেশের যে কোনো মেডিকেল কলেজে ভালো সেবা পাওয়া যাবে। আমি চেষ্টা করব গ্রাস রুট লেভেল থেকে কাজ করতে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি তো জানি কোথায় কি অসুবিধা। আমি চেষ্টা করব সেগুলো নিয়ে কাজ করে চিকিৎসকদের জন্য একটা ভালো পরিবেশ দেওয়ার। তারা যেন ভালোভাবে কাজ করতে পারে এবং দেশের মানুষ যেন ভালো সেবা পায়।”

ডা. সামন্ত লাল বলেন, “রাজনীতির মানুষ না হলেও কোনো চাপ অনুভব করছি না। আমি আমার মতো কাজ করে যাব।”

ডা. সামন্ত লাল সেন বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারিতে দেশের পরিচিত মুখ। তিনি বাংলাদেশে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটগুলোর সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন।

অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন ১৯৪৯ সালের ২৪ নভেম্বর হবিগঞ্জের নাগুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন সামন্ত লাল সেন। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সার্জারিতে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।

চিকিৎসাসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয় বাংলা একাডেমি। ডা. সামন্তল লাল সেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক সার্জন সোসাইটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

Link copied!