অ্যালোভেরাকেই ঘৃতকুমারী বলে। প্রায় প্রতিটি ঘরেই অ্যালোভেরা থাকে। নানান রোগবালাই সারিয়ে তুলতে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী অতুলনীয়। এই উদ্ভিদ খাদ্য-পানীয় হিসেবে যেমন কার্যকর। চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক ঘৃতকুমারীর কিছু উপকারিতা-
খনিজ ও ভিটামিন
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী নানা ধরনের ভিটামিন ও খনিজের এক সমৃদ্ধ উৎস। ভিটামিন-এ, সি, ই, ফলিক অ্যাসিড, বি-১, বি-২, বি-৩ (নিয়াসিন) ও ভিটামিন বি-৬–এর দারুণ উৎস। ঘৃতকুমারীতে ভিটামিন বি-১২ আছে। প্রায় ২০ ধরনের খনিজ আছে এতে। আরও আছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক, ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়াম, সোডিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, কপার ও ম্যাংগানিজ।
রোগ প্রতিরোধ
ঘৃতকুমারী দারুণ অ্যাডাপ্টোজেন হিসেবে কাজ করে। শরীরের প্রাকৃতিক ক্ষমতাকে বাড়িয়ে বাহ্যিক নানা চাপ ও রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালনকারী উপাদানকে অ্যাডাপ্টোজেন বলা হয়। ঘৃতকুমারী দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও সক্রিয় করে তোলে এবং দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে। শারীরিক ও মানসিক চাপ মোকাবিলার পাশাপাশি পরিবেশগত দূষণের হাত থেকেও দেহকে সুরক্ষা দেয়।
হজমে সহায়তা করে
হজমের সমস্যা থেকেই শরীরে অনেক রোগ বাসা বাঁধে। সেইসঙ্গে হজমের প্রক্রিয়াটিও ঠিকঠাক রাখে। পরিপাক যন্ত্রকে পরিষ্কার করে হজম শক্তি বাড়াতে ঘৃতকুমারী অত্যন্ত কার্যকর। ঘৃতকুমারীর রস খাওয়ার দারুণ ব্যাপার হলো, এটা কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া দুই ক্ষেত্রেই কার্যকর। পরিপাক ও রেচন যন্ত্রকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্ত রাখে বলে ঘৃতকুমারীর রস খেলে কৃমি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না, কিংবা কৃমি থাকলেও সেটা দূর হয়।
দূষণ মুক্ত রাখে
ঘৃতকুমারীর রস খুবই আঠালো। এসব উদ্ভিদের আঠালো রস খাওয়ার সবচেয়ে ভালো দিক হলো খাদ্যনালীর ভেতর দিয়ে দেহের ভেতরে প্রবেশের সময় থেকেই পুরো পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার করতে করতে যায়। এই রস দেহের অভ্যন্তরীণ নানা দূষিত উপাদান শুষে নিয়ে মলাশয় দিয়ে বের হয়ে যায়। ফলে দেহকে ভেতর থেকে দূষণমুক্ত করতে ঘৃতকুমারীর তুলনা নেই।
অ্যালক্যালাইন সমৃদ্ধ
সুস্বাস্থ্যের জন্য খাবার-দাবারে অ্যালক্যালাইন ও অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবারের ভারসাম্য বজায় রাখার কথা বলা হয়। এ ক্ষেত্রে ৮০/২০ বা ৮০ ভাগ অ্যালক্যালাইন সমৃদ্ধ খাবার ও ২০ ভাগ অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদেরা। ঘৃতকুমারী এমন খাবার, যা অ্যালক্যালাইন তৈরি করে।
ত্বক ও চুলের যত্নে
ত্বক ও চুলের জন্য এটা দারুণ উপকারী ঘৃতকুমারী। এটি ত্বকের নানা ক্ষত সারিয়ে তুলতে কার্যকরী। রোদে পোড়া, ত্বকে ফুসকুড়ি পড়া ও পোকার কামড়ের মতো বাহ্যিক সমস্যাগুলো সারিয়ে তুলতে পারে সহায়ক। এমন বাহ্যিক ক্ষতে ঘৃতকুমারীর রস মাখলেও ব্যথার উপশম হবে, কেননা বেদনানাশক হিসেবেও এটা অতুলনীয়।
প্রদাহ ও ব্যথা কমায়
শরীরে নানা ধরনের প্রদাহ দূর করতে খুবই কার্যকর ঘৃতকুমারী। এতে বি-সিসটারোলসহ এমন ১২টি উপাদান আছে, যা প্রদাহ তৈরি হওয়া ঠেকায় এবং প্রদাহ হয়ে গেলে তা কমিয়ে আনে। ঘৃতকুমারীর এসব গুণ হাত-পায়ের সন্ধিস্থলের জড়তা দূর করে এবং গিঁটের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।
অ্যামাইনো ও ফ্যাটি অ্যাসিড
মানবদেহের নানা প্রয়োজনীয় প্রোটিনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ অ্যামাইনো অ্যাসিড। এমন ২২টি অ্যামাইনো অ্যাসিডকে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, এর মধ্যে ৮টিকে অত্যাবশ্যক। ঘৃতকুমারীতে শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক এই ৮টি অ্যামাইনো অ্যাসিডই আছে। আর এতে মোট অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে ১৮ থেকে ২০ ধরনের। এ ছাড়া নানা ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিডেরও দারুণ উৎস।
সূত্র: প্রথম আলো