প্রতি বছর দেশে হেপাটাইটিস ‘বি’ এবং ‘সি’ ভাইরাসজনিত লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসারে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ৩০ কোটি ৪০ লাখ মানুষ হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’-তে আক্রান্ত। এছাড়াও হেপাটাইটিস ‘এ’ এবং ‘ই’ ভাইরাসেও আক্রান্ত হন অনেকে। জন্ডিসের অন্যতম কারণ হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাস। সাধারণত দুটিই দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। এরা স্বল্পমেয়াদি সংক্রমণ করে থাকে। ভালো সেবা ও বিশ্রামে এই সংক্রমণ সেরে যায়।
তবে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ করে থাকে। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস শরীরের বিভিন্ন তরল যেমন রক্ত, লালা, যোনী তরল ও বীর্যের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমাদের দেশে ইনজেকশনের মাধ্যমে বেশি ছড়ায়। যারা মাদক নেন তাদের মধ্যে ছড়ায় বেশি। কারণ তারা একই সুঁই অনেকে বা বারবার ব্যবহার করেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমেও হয়। এ থেকে লিভার ক্যানসারও হতে পারে।
নিরব ঘাতক হেপাটাইটিস থেকে জনগণকে সচেতন করতে প্রতিবছর ২৮ জুলাই হেপাটাইটিস দিবস পালন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য, ‘ইটস টাইম টু অ্যাক্ট’ বা (এই রোগ নিয়ে) ‘কাজ করার এখনই সময়’।
তাই সবাইকে হেপাটাইটিস থেকে বাঁচতে সচেতন হবে হবে। হেপাটাইটিস প্রতিরোধ করতে হবে। জেনে নিন এ থেকে বাঁচতে করণীয় কী-
- পানিবাহিত হেপাটাইটিস রোধ করতে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। সম্ভব হলে পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে পান করতে হবে। কারণ পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খেলে ‘এ’ এবং ‘ই’ ভাইরাস নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া বাইরের খোলা খাবার ও পানি, শরবত, জুস থেকে দূরে থাকুন।
- রান্না, পরিবেশন ও ধোঁয়ার কাজে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। টয়লেট ব্যবহারের পর, খাবার আগে ও পরে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
- স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। স্ট্রিটফুড, জাঙ্কফুড, ফাস্টফুড- যেসব খাবার অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ থেকে তৈরি সেবস খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।
- মাদক থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
- রক্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। রক্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।
- অনিরাপদ যৌনসংসর্গ থেকে দূরে থাকা উচিত।
- যাদের শরীরে ভাইরাস নেই, তাদেরকে টিকা দিয়ে দিতে হবে। এই টিকা হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘বি’ ভাইরাস প্রতিরোধ করার অন্যতম প্রধান উপায়। তবে শিশুদের হেপাটাইটিস ‘বি’ টিকা বর্তমানে জাতীয় টিকা প্রকল্পেও দেওয়া হচ্ছে।