• ঢাকা
  • বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৬

যে ৭ কারণে বিকল হয়ে যেতে পারে কিডনি


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৫, ২০২৫, ০১:৩৩ পিএম
যে ৭ কারণে বিকল হয়ে যেতে পারে কিডনি
ছবি: সংগৃহীত

মানবদেহে অনেকটা ফিল্টারের মতো কাজ করে কিডনি। যেমন রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়, রক্তচাপ ও লোহিত রক্তকণিকা নিয়ন্ত্রণ করে, হাড়ের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কিডনি খারাপ হয়ে গেলে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের হতে পারে না। ফলে দেখা দেয় নানা সমস্যা। রক্তচাপ বেড়ে যায়, হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ে, এমনকি কিডনি ধীরে ধীরে একেবারে অকেজো হয়ে যেতে পারে। তবে কিছু বদভ্যাস আছে, সেসব কারণে কিডনি বিকল পর্যন্ত হতে পারে।

ব্যথানাশক ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার

আমরা প্রায়ই সাধারণ সমস্যায় ফার্মেসি থেকে ব্যথানাশক ওষুধ কিনে খাই। যেমন আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসপিরিন। এসব ওষুধ বেশি পরিমাণে বা অনেক দিন ধরে খেলে কিডনির ভেতরের ছোট নালিগুলোর ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে যারা বয়স্ক বা যাদের আগে থেকেই কোনো রোগ আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এসব ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়। এ ধরনের ওষুধ কিডনির রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দেয়। যদি ব্যথা কমাতে হয়, তাহলে কম ডোজের ওষুধ এবং অবশ্যই অল্প সময়ের জন্য খাবেন। তবে সবচেয়ে ভালো হয় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেলে।

যথেষ্ট পানি না খাওয়া

কিডনির প্রধান কাজ হলো পানির সাহায্যে শরীরের বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া। পানি কম খেলে কিডনি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। গরমের দিনে পানি না খেলে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তখন প্রস্রাব ঘন ও গাঢ় হয়ে যায় এবং তাতে খনিজ উপাদান ও বর্জ্যের মাত্রা বেড়ে কিডনিতে পাথর বা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তাই প্রতিদিন অন্তত দেড় থেকে দুই লিটার বা ছয়-আট গ্লাস পানি খাওয়া ভালো। অবশ্য গরমের দিনে বা ব্যায়াম করার সময় আরও বেশি পানি খাওয়া ভালো। তবে হৃদ্‌রোগ বা লিভারের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পানি খেতে হবে।

অতিরিক্ত মদ্যপান

অ্যালকোহল আমাদের শরীরকে পানিশূন্য করে ফেলে। ফলে কিডনির স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হয়। বেশি অ্যালকোহল পান করলে রক্তচাপও বেড়ে যায়। এটা কিডনির জন্য ক্ষতিকর। আমরা জানি, অ্যালকোহল লিভারের ক্ষতি করে। লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেই চাপ পড়ে কিডনির ওপর। তাই অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকাই ভালো।

ধূমপান করা

ধূমপান করলে ফুসফুসের সঙ্গে কিডনিরও ক্ষতি হয়। সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা বিষাক্ত পদার্থ কিডনির কোষগুলোকে সরাসরি আঘাত করতে পারে। এ ছাড়া ধূমপাপের ফলে রক্তনালিগুলো সরু হয় এবং কিডনিতে রক্ত চলাচল কমিয়ে দেয়। ফলে কিডনি ঠিকভাবে করতে পারে না। ধূমপান ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও বাড়ায়। এই দুটি রোগই কিডনির ক্ষতির অন্যতম কারণ। তাই ধূমপান ত্যাগ করা সবচেয়ে ভালো।

অতিরিক্ত ওজন

যাঁদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, তাঁদের কিডনি রোগের ঝুঁকি বেশি। অতিরিক্ত ওজন হৃদ্‌রোগ ও ডায়াবেটিসের মতো রোগ ডেকে আনে। এতে কিডনির কার্যকারিতা কমে যায়। শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কিডনির স্বাভাবিক কাজে বাধা দিতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরি। পেটের চর্বি বাড়াও কিডনির জন্য ক্ষতিকর। বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) অনুযায়ী ১৮.৫–২৪.৯–এর মধ্যে স্কোর থাকলে তা স্বাস্থ্যকর ধরা হয়। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং ব্যায়াম করলে ওজন কমে। গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে পাঁচ দিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁট বা হালকা দৌড়ানো কিডনির জন্য উপকারী।

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন ফাস্ট ফুড বা কোমল পানীয় কিডনির জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। এমনকি বেশি লবণ খাওয়াও বিপজ্জনক। ফাস্ট ফুডে প্রচুর লবণ, চিনি, ক্ষতিকর চর্বি ও রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। বেশি লবণ খেলে শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং রক্তচাপ বাড়ে। আর আগেই বলেছি, রক্তচাপ বাড়া কিডনির জন্য ক্ষতিকর। প্রতিদিন ৬ গ্রামের (এক চা চামচ) বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।

পর্যাপ্ত না ঘুমানো

ঘুমের অভাবেও কিডনির সমস্যা হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা প্রতিদিন ৬ ঘণ্টার কম বা ১০ ঘণ্টার বেশি ঘুমায়, তাঁদের দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাই বেশির ভাগ মানুষের জন্য প্রতিদিন ৭–৯ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শরীরকে বিশ্রাম দেয় এবং কিডনিকেও ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। অনিদ্রা বা বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়ার মতো ঘুমের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট ও দ্য কনভারসেশন

Link copied!