করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ বিশ্বজুড়ে আরও এক দফা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশে এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন দেশ সীমান্তে নিরাপত্তাও জারি করেছে। নতুন ভ্যারিয়েন্টের উপসর্গ কেমন এবং সংক্রমণের গতি কতটা তা নিয়ে চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে বিশ্ব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার এই ভ্যারিয়েন্টটি অন্তত ৩২টি মিউটেশন (জিনগত গঠনের পরিবর্তন) ঘটিয়েছে। যার বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.১.৫২৯। এটি অত্যন্ত দ্রুত এবং সহজে ছড়ায়। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয়। এমনকি এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে চলমান করোনার টিকাও কম কার্যকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা এরই মধ্যে নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত পরীক্ষা করেছেন তারা। প্রাথমিক তথ্য প্রমাণের পর বিশেষজ্ঞরা জানান, যারা পূর্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের পুনরায় ওমিক্রনে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
বিশ্বে চলমান করোনা টিকা ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না, সিনোভ্যাক, স্পুটনিক- এসব টিকা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এই ভাইরাস সবসময়ই পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত মিউটেশনের মাধ্যমে নতুন রূপ নিচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড লেসেলস বলছেন, ‘এই ভাইরাসটির সংক্রমণের ক্ষমতা শঙ্কার মধ্যে ফেলেছে। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভেদ করার কিছু ক্ষমতাও সম্ভবত এর আছে।’
‘ওমিক্রন'-এ আক্রান্ত হলে কেমন উপসর্গ হতে পারে এ নিয়েও গবেষণা চলছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মৃদু উপসর্গেই আঘাত হানে ওমিক্রন। স্বাদ, গন্ধে পরিবর্তন ছাড়াই এটি শরীরে বাসা বাঁধে। তবে প্রচণ্ড ক্লান্তি অনুভব করবেন আক্রান্ত ব্যক্তি। অনেকের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টও দেখা যায় না।
চিকিৎসকদের মতে, ওমিক্রনের কিছু লক্ষণ আছে যা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যদিও আক্রান্তদের মধ্যে ওমিক্রনের লক্ষণ মৃদু। কিছু রোগী হাসপাতালে ভর্তি না হয়েই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (সামা) প্রধান ডা. অ্যাঞ্জেলিক কোয়েজি বলেছেন, ‘ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে চরম ক্লান্তি, গলা ব্যথা, পেশী ব্যথা ও শুকনো কাশির মতো সমস্যা দেখা গেছে। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে এর লক্ষণগুলো বেশ ভিন্ন।"
ডা. অ্যাঞ্জেলিক কোয়েজি আরও জানান, এখন পর্যন্ত যত রোগী পাওয়া গেছে, তাদের সবার টিকা নেওয়া হয়নি। তাদের ওমিক্রনের মৃদু লক্ষণ ছিল। তার মতে, ইউরোপের বিপুল সংখ্যক মানুষ করোনার এই নতুন প্রজাতি দ্বারা সংক্রামিত। এখনও পর্যন্ত ওমিক্রন দ্বারা সংক্রামিত বেশিরভাগ রোগীর বয়স ৪০ বছরের কম। এই ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে করোনা রোগীর রক্তে অক্সিজেন মাত্রাও হঠাৎ নেমে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
তবে আফ্রিকা হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটির ফ্যাকাল্টি সদস্য অ্যালেক্স সিগাল ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, এখনই কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোটা ভুল হবে, তবে বলা যায় যে আমরা আগে যা দেখেছি, এটা তার চেয়ে খুব বেশি ভিন্ন বলে মনে হচ্ছে না। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু করবে এমন কোন ইঙ্গিত এখনো নেই।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাক্তাররা প্রমাণ পেয়েছেন, যারা ইতোমধ্যেই টিকা নিয়েছেন তারা ওমিক্রনে আক্রান্ত বেশি হচ্ছেন। তবে ওমিক্রনের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কম হলেও টিকা পুরোপুরি অকার্যকর নয়। টিকার কার্যকারিতা কিছুটা অক্ষুণ্ণ থাকবে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, বিপজ্জনক ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে টিকা নেওয়া, মাস্ক পরা, সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
সূত্র: বিবিসি