মায়ের গর্ভধারণের ছয় সপ্তাহ থেকে শুরু হয় শিশুর দাঁতের গঠন প্রক্রিয়া। জন্মের পর শিশুর দাঁত উঠতে শুরু করে। সেগুলোকেই বলা হয় দুধ দাঁত। দুধ দাঁত দিয়েই শিশু খাবার খেতে শেখে। খাবারের স্বাদ পেতে শুরু করে। সাধারণত শিশুর ৬ মাস থেকে আড়াই বছরের মধ্যেই সবগুলো দুধ দাঁত উঠে যায়।
শিশুর জন্মের পর উঠা এই দুধ দাঁতগুলো একটা সময় পড়ে যায়। আবারও নতুন করে দাঁত উঠে। যা বয়স বাড়ার পরও স্থায়ী হয়। প্রাথমিকভাবে দুধ দাঁত পড়ে যায় বলে এর যত্নে অনেকেই অবহেলা করেন। অথচ ক্ষণস্থায়ী এই দাঁতের যত্নও দরকার। কারণ দুধ দাঁতের যত্ন না নিলে ভবিষ্যতে নতুন ওঠা দাঁতগুলোতে এর প্রভাব পড়ে। এমনকি দুধ দাঁত অযত্নের মাশুল দিতে হয় সারাজীবন।
শিশুর দুধ দাঁতের যত্ন কেন জরুরি এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ-এর সঙ্গে কথা বলেছেন এম এইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রভাষক ডা: ঈষিকা নাজনীন।
ডা: ঈষিকা নাজনীন বলেন, “সঠিক পরিচর্যার অভাবে শিশুর দুধদাঁত অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আবার শিশুরা খেলাধুলা করতে গিয়ে দাঁত অনেক সময় ভেঙ্গে ফেলে। তাই শিশুরা যখন খেলাধুলা করবে তখন অভিভাবকদের পাশেই থাকতে হবে।“
“সঠিক সময়ের আগে যদি দুধ দাঁত পরে যায় তাহলে অনেক সমস্যা হতে পারে। যেমন স্থায়ী দাঁতগুলো এলোমেলো কিংবা উঁচু নিচু হয়ে উঠতে পারে। দুধ দাঁত স্থায়ী দাঁতকে সঠিক স্থানে উঠার দিক নির্দেশনা দেয়। তাই অসাবধানতাবশত দুধ দাঁত যদি ভেঙেই যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।“
ডা: ঈষিকা নাজনীন জানান, সাধারণত নবজাতকের ৪ থেকে ৮ মাসের মধ্যে দুধ দাঁত উঠে। ৬ মাস থেকে ২ বছর ৫ মাসের মধ্যে মাড়ির ওপর ১০টি ও নিচে ১০টি করে মোট ২০টি দাঁত উঠে। পরে ৬ থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যেই এই দুধ দাঁত পড়ে যায় এবং শিশুর নতুন করে স্থায়ী দাঁত উঠে। শিশুর এই দুধ দাঁতের যত্ন প্রয়োজন। এর জন্য যা যা করতে হবে_
“ভবিষ্যতে সুস্থ দাঁত পেতে হলে দুধ দাঁতও নিয়মিত ব্রাশ করতে হবে। এর জন্য অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে।“
“জন্মের ৬ মাস পযর্ন্ত শিশুকে বোতলে দুধ না খাওয়ানো উত্তম। অনেক কর্মজীবী মায়েরা সময়ের অভাবে বোতল ফিডিং করান। এক্ষেত্রে শিশুর বাড়তি যত্ন নিতে হবে। যেভাবেই দুধ খাওয়ান না কেন প্রতিবার খাওয়ানো শেষ হলে পরিষ্কার নরম পাতলা কাপড় দিয়ে মুখের ভেতরে মাড়িসহ দাঁতগুলো ভালোভাবে মুছে নিতে হবে। যতদিন শিশু নিজেই কুলি করা শিখবে না ততদিন এভাবে যত্ন নিতে হবে। পরে শিশুকে নিজেই কুলি করানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।“
ডা: ঈষিকা নাজনীন আরও বলেন, ”শিশুকে শুধু কুলি করালেই চলবে না। ব্রাশ করানোর অভ্যাসও তৈরি করতে হবে। প্রথমে অভিভাবককে সাবধানতা অবলম্বন করে শিশুকে ব্রাশ করাতে হবে। পরে শিশুকে নিজেই ব্রাশ করার উপযোগী করতে হবে। শিশু নিয়মিত ব্রাশ করছে কি না তাও খেয়াল রাখতে হবে অভিভাবকদের। সকালে ও রাতে ঘুমানোর আগে নিয়ম করে ব্রাশ করানোর অভ্যাস করতে হবে। এক্ষেত্রে শিশুদের উপযোগী আরামদায়ক ব্রাশ বেছে নিতে হবে।
শিশুদের দুধ দাঁত যত্নের ক্ষেত্রে টুথপেস্ট বাছাইও জরুরি বলে জানিয়েছেন ডা: ঈষিকা নাজনীন। তিনি বলেন, “শিশু কী ধরণের টুথপেস্ট ব্যবহার করবে এটাও নির্বাচন করা জরুরি। কারণ বেশিরভাগ শিশু দাঁত ব্রাশ করার সময় টুথপেস্ট গিলে ফেলে। কেউ ইচ্ছে করে দুষ্টুুমি করে খায়। আবার কেউ অসাবধানতাবশত এটা করে ফেলে। তাই সন্তান দাঁত ব্রাশের সময় অভিভাবকের এটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। ভালো টুথপেস্ট নির্বাচন করতে হবে।"
“ঝাঁঝ আছে এমন টুথপেস্ট অবশ্যই শিশুকে দেওয়া যাবে না। বাজারে অনেক ধরণের টুথপেস্ট আছে। এরমধ্যে সাদা রঙের টুথপেস্ট শিশুদের জন্য উত্তম।“
সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশের বিষয়েও পরামর্শ দিয়ে ডা: ঈষিকা নাজনীন বলেন, “শুধু টুথপেস্ট ঠিকঠাক কিনলে চলবে না। শিশুকে দাঁত ব্রাশ করানোর সঠিক নিয়মও শেখাতে হবে। প্রথমে সামনের দাঁতগুলো ওপর থেকে নিচে ব্রাশ করাতে হবে। পরে মাড়ির ভেতরে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। ব্রাশ করা হলে ভালো করে কুলি করাতে হবে। জিভ ও পুরো মুখ পানি দিয়ে পরিষ্কার করাতে হবে।“
মিষ্টিজাতীয় খাবার খা্ওয়ার পর শিশুর দুধ দাঁতের বিশেষ যত্ন প্রয়োজন জানিয়ে ঈষিকা নাজনীন বলেন, “শিশুদের খাদ্যাভ্যাসে চিনি, চকলেট, আইসক্রিম, মিষ্টি থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে খা্ওয়ার পর অবশ্যই মুখ ভালোভাবে কুলি করতে হবে।“
“সঠিক সময়ে দাঁত ওঠার জন্য শিশুকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উপযোগী খাবার খাওয়াতে হবে। খাবার চিবিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে। দুধ দাঁতের শেকড়ের নিচেই স্থায়ী দাঁতের গঠন শুরু হয়। তাই স্থায়ী দাঁতের স্বাস্থ্যরক্ষায় শিশুর দুধদাঁতের প্রতি বেশি বেশি যত্ন নিতে হবে।"
জন্মের পর থেকেই তাই নিজের শিশুর দাঁতের যত্ন নিন। এতে সন্তান বড় হলে নিজ দাঁতের যত্ন নেওয়া শিখবে। দাঁতও বহুদিন স্থায়ী হবে।