শরীর ও মন দুটোরই সুস্থতা জরুরি। শরীরের কোনও অংশের ক্ষতি হলে যেমন চিকিৎসা করতে হয়। তেমনি মনের ক্ষত হলেও চিকিৎসা জরুরি। আমাদের সমাজে অনেকেই মানসিক সমস্যাকে হেয় করে দেখেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে নিজেদের মানসিক সমস্যা চেপে রাখেন এবং ধীরে ধীরে আরও অসুস্থ হয়ে যান। এক সময় মানসিক সমস্যা প্রকট হয়ে দীর্ঘস্থায়ী রোগে পরিণত হয়।
মানসিক সমস্যা অবহেলা না করে আগেই সতর্ক হতে হবে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে প্রতিটি পদক্ষেপ মেনে চলতে হবে। মানসিক সমস্যায় কোন উপসর্গে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এবং থেরাপি নিতে হবে তা অনেকেই জানেন না। মনোচিকিৎসকদের মতে, মানসিক সমস্যার প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিৎসা নিতে হবে। তবে এটি বেড়ে গেলে থেরাপির পর্যায়ে যেতে হয়।
মানুষের যখন মনের অসুখ হয়, চিকিৎসার জন্য সাইকিয়াট্রিস্ট বা সাইকোলোজিস্টের শরণাপন্ন হয়। মনোচিকিৎসকেরা ব্যাধির ধরণভেদে সঠিক পদ্ধতি নির্ধারণ করেন। সাধারণত দুইভাবে তারা চিকিৎসা করেন। একটি হলো ফার্মাকোথেরাপি এবং অপরটি সাইকোথেরাপি।
ফার্মাকোথেরাপিতে মূলত ওষুধের মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করা হয়। অপরদিকে সাইকোথেরাপিতে বিভিন্ন সাইকোলজিক্যাল মেথড ব্যবহার করা হয়। সাইকোথেরাপি হচ্ছে এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে একজন প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত সাইকোথেরাপিস্ট মানসিক সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। সেটি চিহ্নিত করেন। এরপর বিভিন্ন মনোবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও জ্ঞানের আলোকে তা সমাধান করেন। সাইকোথেরাপি মূলত কাউন্সেলিং বা কথা বলার মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করে তোলা হয়।
অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্য কোন পর্যায়ে গেলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে বা কোন থেরাপি নিতে হবে তা বুঝে উঠতে পারেন না। যদিও চিকিৎসকই রোগীর ধরন অনুযায়ী থেরাপি নির্ধারণ করে দেন। চিকিৎসকই জানেন কোন থেরাপি নেওয়ার প্রয়োজন।
তবে এই বিষয়ে সাধারণ কিছু ধারণা রাখা যেতে পারে। যেমন বিষন্নতায় থাকলে,অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় ভুগলে, মাত্রাতিরিক্ত অনিয়ন্ত্রিত রাগ হলে আমাদের মানসিক থেরাপি নিতে হবে। এছাড়াও যেসব উপসর্গ দেখলে মনো চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে-
- দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে প্রচন্ড অসহায় অনুভব করলে।
- মানসিকভাবে আঘাত বা দুর্ঘটনার স্বীকার হলে।
- পারিবারিক সম্পর্কে জটিলতা সৃষ্টি হলে। যেমন- দাম্পত্য কলহ, ডিভোর্স।
- অতিরিক্ত মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে।
- কোনো শারীরিক কারন ছাড়াই ঘুমের সমস্যা হলে।
- যেকোনও সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হলে।
- মানসিক চাপ মোকাবেলা করার চেষ্টা করেও লাগাতার অপারগ হলে।
- কারো সঙ্গ ভালো না লাগলে। একাকিত্ব ঘিরে ফেললে।
- প্রতিদিনের কাজকর্মে মনোযোগ দিতে না পারলে।
- আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা গেলে।
- সন্দেহপ্রবণতা দেখা দিলে।