• ঢাকা
  • বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১, ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

বিশ্ব নার্স দিবস: কে এই ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ১২, ২০২২, ১২:১২ পিএম
বিশ্ব নার্স দিবস: কে এই ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল

১২ মে, বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। এবারও বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে দিবসটি। প্রতি বছর এই দিনটি একটি থিম গৃহীত হয়। এবছরের প্রতিপাদ্য হলো- ‘নার্সেস- আ ভয়েস টু লিড- ইনভেস্ট ইন নার্সিং অ্যান্ড রেসপেক্ট রাইট টু সিকিওর গ্লোবাল হেলথ (Nurses: a voice of lead- invest in nursing and respect rights to secure global health)’। অর্থাত্ ‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় শক্তিশালী নার্স নেতৃত্বের বিকল্প নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নার্সিং খাতে বিনিয়োগ বাড়ান এবং নার্সদের অধিকার সংরক্ষণ করুন।’

বিশ্বের সব নার্সের প্রতি সম্মান জানাতে দিবসটি পালিত হয় প্রতিবছর। তাদের কঠিন পরিশ্রম আর সেবা সুস্থ করে তোলে রোগীকে। কঠিন রোগে আক্রান্ত রোগীরাও নার্সদের সেবায় সুস্থ হয়ে ফিরছেন। দিন-রাত নিরলস সেবা দেন তারা। বিশেষ এই দিনটি তাদের শ্রদ্ধা জানানোর দিন। 

বিশ্ব নার্স দিবসটির কীভাবে এলো? এর পেছনে রয়েছে আধুনিক নার্সিং সেবার এক প্রতিষ্ঠাতার ইতিহাস। তার নাম ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। ১৮২০ সালে ১২ মে ইতালির আভিজাত পরিবারে জন্ম হয় তার। ১৯৭৪ সাল থেকে তার জন্মদিনটি ইন্টারনেশনাল নার্সেস ডে হিসেবে পালন করা হচ্ছে। তিনি ছিলেন আধুনিক নার্সিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা। 

ডার্বিশায়ার থেকে ১৭ বছর বয়সে লন্ডনে আসেন ফ্লোরেন্স। লন্ডনের হাসপাতালে তখন খুবই খারাপ অবস্থা ছিল। কোনও নার্স সেখানে কাজ করেন না সেই সময়। কারণ ওই সময় নার্সিং সেবাকে  সামাজিক ভাবে মর্যাদা দেওয়া হতো না। ফ্লোরেন্স এই সময়ের হাল ধরেছিলেন। মানবসেবার প্রতি তিনি প্রথম টান অনুভব করেন।  ১৮৫১ সালে নার্সের প্রশিক্ষণ নিতে জার্মানি যান।

এদিকে সেবাকে জীবনের ব্রত হিসাবে নেওয়ায় প্রবল আপত্তি জানায় তার পরিবার। সমাজে নিম্নবিত্ত, অসহায়, বিধবা মহিলাদের পেশা হিসাবে গণ্য করা হতো নার্সিংকে।  তবে পরিবারের আপত্তিকে পাশ কাটিয়ে নিজেকে নার্সিংয়ের কৌশল ও জ্ঞানে দক্ষ করে তোলেন ফ্লোরেন্স। বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন। সেসব দেশের সেবা ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা ও প্রশিক্ষণ নেন। পরে ১৮৫৩ সালে লন্ডনের মেয়েদের একটি হাসপাতালে নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব নেন তিনি।

ফ্লোরেন্সের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল ক্রিমিয়ার যুদ্ধে। ওই সময় অসুস্থ সৈন্যদের পাশে দাঁড়ান তিনি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের এই যুদ্ধে সৈন্যদের অবস্থা ছিল বিপন্ন। প্রতিরক্ষা দপ্তরের সেক্রেটারি সিডনি হার্বাট ফ্লোরেন্সেকে লিখেন- ‘যুদ্ধের এই বিশৃঙ্খল অবস্থায় আহত সৈন্যদের তত্ত্বাবধান করার মতো একজনও উপযুক্ত ব্যক্তি নেই। যদি আপনি এ কাজের ভার গ্রহণ করেন, দেশ আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।’ সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ফ্লোরেন্স নিজ উদ্যোগে নার্সিংয়ের জন্য ৩৮ জনের স্বেচ্ছাসেবী দল নিয়ে সেখানে ছুটে যান। যোদ্ধাদের সেবা দেন। যা এক অনন্য উদাহরণ।

১৮৬০ সালে নার্সিংকে সম্পূর্ণ পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে নাইটিঙ্গেল ট্রেনিং স্কুল স্থাপন করেন। ১৮৬৭ সালে নিউইয়র্কে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ চালু করেন। সেখানে পড়ানো শুরু করেন নার্সিং সেবা সম্পর্কে।

ধীরে ধীরে নার্সিং সেবার গুরুত্ব পৌছে দেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত। ১৮৮৩ সালে এই কাজের জন্য তিনি রয়েল রেডক্রস সম্মানও পান। কয়েকটি সম্মানে তাকে ভূষিত করা হয়। 

ফ্লোরেন্স তার সময় থেকেই নার্সিং সেবার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। যুগের পর যুগ নার্সদের অবদান সবার কাছে প্রশংসনীয় হয়ে উঠে। নার্সদের অবদান বিশ্বজুড়ে প্রমাণ মিলেছে করোনার মহামারির সময়েও। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করেছে।

Link copied!