প্রত্যেক নারী পিরিয়ড সার্কেল ভিন্ন হয়। কারো নিয়মিত হয়, কারো হয় অনিয়মিত। সাধারণত ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে প্রতিমাসে নারীদের পিরিয়ড শুরু হয়। ২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। অনেকের আবার দেরীতে পিরিয়ড হয়। যা নিয়ে বেশ চিন্তিত থাকেন তারা। বিলম্বিত বা পিরিয়ডের সময় বারবার পাল্টে যাওয়া শরীরের নানা কারণে হতে পারে। হঠাৎ জীবনধারা পরিবর্তন, স্থূলতা, উদ্বেগ, বা হতে পারে সেই নারী পিসিওএস (PCOS) ভুগছেন।
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা পিসিওএস একটি জটিল ব্যাধি। এটি নারীদের হরমোনজনিত বিশৃঙ্খলার একটি। যা সারা বিশ্বে নারীদের মধ্যে এখন বেশি ছড়িয়ে পড়েছে।
ভারতের ডার্মালিংকের মেডিক্যাল হেড ডার্মাটোলজিস্ট ট্রাইকোলজিস্ট ডার বিদুশি জৈন বলেন, “এটি একটি ভিন্নধর্মী ব্যাধি হিসাবে স্বীকৃত। যা প্রাথমিকভাবে ডিম্বাশয় থেকে পুরুষ হরমোনের অত্যাধিক উৎপাদন ঘটায় এবং এটি ইনসুলিন প্রতিরোধের সঙ্গে যুক্ত।"
এই রোগে আক্রান্ত প্রতিটি রোগীর চিকিৎসার পদ্ধতি ভিন্ন। বিদুশি জৈন বলেন, “পিসিওএস মহিলাদের এন্ডোক্রিনোলজিক্যাল ত্রুটির ইঙ্গিতযুক্ত ক্লিনিকাল বৈশিষ্ট্যগুলোর উপর ভিত্তি করে উপযুক্ত চিকিত্সা পদ্ধতি বেছে নেওয়া যেতে পারে।"
"পিসিওএস প্যাথলজির মূল ভিত্তি হলো ইনসুলিন প্রতিরোধ। শরীর স্বাভাবিকভাবে ইনসুলিনের প্রতি সাড়া দেয় না। এর ফলে অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। যা প্রদাহ এবং ওজন বাড়ায়। উচ্চ ইনসুলিন অ্যানোভুলেশন সৃষ্টি করে এবং ডিম্বাশয় থেকে টেস্টোস্টেরন নিঃসরণকে উৎসাহিত করে (হাইপার্যান্ড্রোজেনিজম)।"
পিসিওএস ত্বক ও চুলে উপরও প্রভাব ফেলে। চুল পড়া বেড়ে যায় এবং ত্বকের অবাঞ্চিত নানা সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে_
- পিসিওএস এর কারণে অ্যাকান্থোসিস নিগ্রিকানস নামে এক ধরনের ত্বকের ব্যাধি হতে পারে। যা ত্বকের কালচে দাগ পড়ে। সাধারণত বগলে, কুঁচকিতে এবং ঘাড়ের পিছনে ত্বকের ভাঁজে এই দাগ দেখা যায়। প্রায়ই এটি ময়লা ভেবে ভুল করছেন অনেকে। কিন্তু এটি পিসিওএস-এর কারণেই হচ্ছে। ওষুধ সেবনে এটি আরও বেড়ে যেতে পারে। এর চিকিত্সা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ওজন হ্রাস করা, ডায়েট এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ইনসুলিন প্রতিরোধ হ্রাস করাই একমাত্র উপায়। এছাড়া রেটিনয়েডস, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড এবং টিসিএ পিল ত্বকের কিছুটাউন্নতি করতে পারে।
- হাইপারেনড্রোজেনিজম বা অতিরিক্ত পুরুষ হরমোন নি:সরণের ফলে চিবুক, বুক, উরু এবং এমনকি স্তনবৃন্তে চুল গজাতে পারে। সিরাম সেক্স হরমোন-বাইন্ডিং গ্লোবুলিন (এসএইচবিজি) নিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসার ওজন কমানোর প্রয়োজন। যা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এন্ড্রোজেন কমানোর ওষুধ যেমন স্পিরোনোল্যাকটোন, ওসিপি এবং লেজারের মাধ্যমে এর চিকিত্সা করা যেতে পারে।
- ব্রণ বা ফুসকুড়ি হতে পারে। ২৫ বছর বয়সের পর প্রথমবার ব্রণ দেখা দিলে পিসিওএস মূল্যায়ন করতে হবে। এটি সাধারণত মাসিকের পূর্বে বেশি হয়।এর চিকিত্সার ফলাফল পেতে ৩ মাসেরও বেশি সময় লেগে যেতে পারে। হাইপারেন্ড্রোজেনিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যান্টি-এন্ড্রোজেন প্রোজেস্টেরন-এর মতো ড্রোস্পাইরেনন এবং সাইপ্রোটেরন অ্যাসেটেটের পাশাপাশি স্পিরোনোল্যাক্টনের সঙ্গে সম্মিলিত মৌখিক গর্ভনিরোধক যুক্ত করা সর্বোত্তম পদ্ধতি।
- ডার্মাটাইটিস প্রায়ই মাথার তৈলাক্ত ত্বক এবং খুশকি হিসাবে উপস্থিত হয়। এক্ষেত্রে কেটোকোনাজোল শ্যাম্পু দিয়ে মাথার ত্বক পরিষ্কার করা প্রয়োজন। চুল পাতলা হতে শুরু করে। একটি প্রতিরোধমূলক থেরাপি হিসাবে মিনোক্সিডিল শুরু করা এবং প্লেটলেট সমৃদ্ধ প্লাজমা সেশন করা সহায়ক হতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি