দাঁতের ব্যথায় মারাত্মক যন্ত্রণা হয়। সাধারণত দাঁতের ক্ষয়জনিত রোগ ও মাড়ির সমস্যা থেকেই ব্যথা হয়। খাবার দাঁতের ফাঁকে জমে থাকলেই ক্ষয় হওয়া শুরু হয়। কারণ খাবার থেকে দাঁতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়। এতে অ্যাসিড তৈরি হয় এবং দাঁতের ওপরের অ্যানামেল অংশ নষ্ট হয়। সেই থেকে দাঁতে ক্যাভিটি বা গর্ত দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দাঁত পরিষ্কার না করা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা থেকেই দাঁতের ক্যাভিটির সমস্যা হয়।
ক্যাভিটি কী? ক্যাভিটি হলো দাঁতের ছিদ্র। দাঁতের ওপরের চকচকে অংশ ক্ষয় হয়ে ছিদ্র তৈরি হতে পারে। একেই ক্যাভিটি বলে, যা দাঁতের গোড়া পর্যন্ত ছড়িয়ে গেলে সমস্যা বেড়ে যায়। কারণ, সেই ছিদ্রে খাবারের কণা জমে দাঁতের ক্ষতি করে।
ধীরে ধীরে দাঁতের ছিদ্র বড় হতে শুরু করলে দাঁতে ব্যথা, শিরশির অনুভূতি, ঠান্ডা-গরম এবং মিষ্টিজাতীয় কিছু খাবার খেলেই চিনচিন ব্যথা অনুভূত হয়। ক্রমে এই অংশটি কালো হয়ে দৃশ্যমান হতে থাকে।
দাঁতের ক্যাভিটি সারাতে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। এটি বেশ ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ।
দাঁতের ক্যাভিটি হওয়ার কারণ কী? খাদ্যে ভিটামিন ডি-এর অভাবের কারণে এ সমস্যা হতে পারে। মিষ্টি খাবার দাঁতের পৃষ্ঠে লেগে থাকলে কিংবা কোমল পানীয়, জাঙ্ক ফুড বেশি খেলে দাঁতের ক্যাভিটি হতে পারে। অ্যাসিডিটির সমস্যা কিংবা পানি কম খাওয়া থেকেও এই সমস্যা হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে ঘুমের সময় বোতলে দুধ খাওয়ানো থেকে দাঁতের ক্ষয় হতে পারে।
দাঁতের ক্যাভিটির সমাধান
দাঁতের ক্ষয় বড় ধরনের হলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। কিন্তু যদি হালকা হয় কিংবা শুরুতেই টের পাচ্ছেন দাঁত ক্ষয় হচ্ছে, তখন কিছু ঘরোয়া প্রতিকার চেষ্টা করতে পারেন।
- প্রাকৃতিক ঘরোয়া টুথপেস্ট বা ফ্লোরাইড টুথপেস্টের নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন। এক চামচ কালো লবণ, এক চামচ বেকিং সোডা, এক চামচ স্টিভিয়া এবং এক কাপ নারকেল তেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। নিয়মিত এটি দিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন।
- বাজারে পাওয়া ফ্লুরাইড টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। ফ্লোরাইড এনামেলের পুনর্নির্মাণ এবং দাঁতের ক্যাভিটির প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- খাবারের পর ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করুন। এটি দাঁতের ক্যাভিটি রোধ হয়।
- চিনিযুক্ত ও চটচটে খাবার পরিহার করুন। ক্লিনিক্যাল গবেষণায় দেখা গেছে যে খাবারের পর চিনি মুক্ত গাম চিবানো এনামেলের পুনর্নির্মাণে সহায়তা করে।
- লবঙ্গ তেল ব্যবহার করতে পারেন। লবঙ্গে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং এন্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে।এটি দাঁতের ফাঁকে লাগিয়ে নিন।
- নিমের ডাল ব্যবহার করে দাঁত ব্রাশ করতে পারেন।
- ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খান। স্যামন মাছ খেতে পারেন। এটি শরীরে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে।
- গবেষণায় দেখা গেছে, দাঁতসংক্রান্ত সমস্যার জন্য সর্বোত্তম প্রতিকার হিসেবে পরিচিত দই। ভালো অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী।
- গবেষণা অনুযায়ী, নিয়মিত কালো চা খেলে দাঁতের সমস্যা কমে যায় এবং মাড়ি শক্ত হয়। এটি ভালো পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধারণ করে।
- অ্যালোভেরার ব্যবহার করতে পারেন। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। অ্যালোভেরা পাতা কেটে, পাতা থেকে জেল বের করে, তারপর একটি পাত্রে রাখুন। এটি কিছু সময়ের জন্য ফ্রিজে রাখুন এবং তারপরে আঙুলের সাহায্যে এটি আক্রান্ত দাঁতে লাগান। দশ মিনিট পর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
- দাঁতে তিলের তেল বা নারকেল তেল লাগান। প্রায় ২০ মিনিট রেখে দিন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- দাঁতের ক্যাভিটি কমাতে লিকোরিস ব্যবহার করা যায়। লাইকরিস মুখ থেকে ব্যাকটেরিয়া অপসারণ করতে সাহায্য করে, যার ফলে সংক্রমণ হ্রাস পায়। লিকোরিসের কাঠ পিষে নিন এবং তারপরে কয়েক ফোঁটা পানির সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ দাঁতে ঘষুন।
- লবণ পানিতে গার্গল করুন। হালকা গরম পানির সঙ্গে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে গার্গল করুন। গবেষণায় দেখা যায়, এই পদ্ধতিতে দাঁতের ক্ষয় কমে।
সূত্র: স্মার্ট মাউথ