আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। সারাদেশে প্রতিদিন রেকর্ড পরিমান রোগীর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। এই রোগের ভয়াবহতা এতটাই যে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষা মৌসুম শুরু আগ থেকেই ডেঙ্গুর বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
ডেঙ্গু ভাইরাসের দ্বারাই ডেঙ্গু জ্বর হয়। ভাইরাসবাহিত এডিস ইজিপ্টাই মশার কামড়ে এই রোগ একজন থেকে অন্যজনের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। এডিস মশা কামড়ানোর ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হোন। ওই আক্রান্ত ব্যক্তিকে জীবাণুবিহীন কোনো এডিস মশা কামড়ালে সেই মশা ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এবার ওই মশা যাকে কামড়াবে সেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি বলে মনে করেন স্বাস্থ্যবিদরা। এর জন্য় ডেঙ্গুর লক্ষণ ও এর করণীয় বিষয়েও জানতে হবে। সুনির্দিষ্ট জ্ঞান থাকলেই সাবধানতা অবলম্বন করা সম্ভব বলে ধারণা স্বাস্থ্যবিদদের।
ডেঙ্গুর লক্ষণ যা থাকে-
- ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের প্রধান লক্ষণ জ্বর থাকবে। জ্বর কম হতে পারে। আবার বেশিও হতে পারে।
- জ্বরের সঙ্গে গায়ে ব্যথা হবে।
- প্লেটিলেট কমতে থাকবে।
- মাঝে জ্বর কমে যেতে পারে। এরপর বিরতি দিয়ে আবারও জ্বর আসবে।
- জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা এবং চোখের পেছনে ব্যথা করবে।
- শরীরের জয়েন্টে ব্যথা থাকবে। মনে হবে যেন কেউ হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে।
- শরীরের বিভিন্ন জায়গায় র্যাশ দেখা দেবে।
- মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।
- রক্তবমি হতে পারে।
- কারো কারো ক্ষেত্রে পায়খানার সঙ্গে রক্ত যেতে পারে।
- শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
- আপার অ্যাবডোমিনে বা ওপরের পেটে পানি চলে আসতে পারে।
- জ্বরে পানিশূন্যতা বেশি হয়। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যেতে পারে। তাই কিডনি বিকল হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
- প্রচন্ড ঘাম হতে পারে।
- বমি বমি ভাব হতে পারে।
- খাবারে অরুচি হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে যা করবেন-
- ডেঙ্গু জ্বর ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি জ্বর হলে চিকিতসকের পরামর্শ নিন।
- রক্ত পরীক্ষা করতে হবে।
- ডেঙ্গু জ্বরে পানিশূন্যতার দেখা দেয়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
- ব্লাড প্রেসার কমে যাচ্ছে কি না খেয়াল দেখতে হবে।
- স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে পানি, খাওয়ার স্যালাইন, স্যুপ, দুধ, তাজা ফলের রস বেশি বেশি পান করবেন।
- ডেঙ্গু সারাতে পেঁপের পাতার রস পান করতে পারেন। পেঁপে পাতার রসে কাইমোপ্যাপিন ও প্যাপাইন রয়েছে৷ যা রক্তের প্লেটলেটের সংখ্যা ও রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। প্রতিদিন তিন বেলা তিন কাপ পরিমাণ পান করতে পারেন।
- রোগীকে মশারির ভেতরে রাখুন।
ডেঙ্গু সংক্রমণ রোধে যে ব্যবস্থা নেওয়া যায়-
- এডিস মশা অন্ধকারে কামড় দেয় না। এটি দিনে কামড়ায়। তাই দিনের বেলায় ঘুমালেও মশারি ব্যবহার করুন।
- ঘর-বাড়ি ও চারপাশে অব্যবহৃত ক্যান, টিনের কৌটা, মাটির পাত্র, টব, বোতল বা পানি ধারণ করতে পারে এমন পাত্র রাখবেন না।
- নিজেদের উদ্যোগে নিয়মিত মশার স্প্রে বা ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা করুন।
- বর্ষার মৌসুমে দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন। সম্ভব হলে জানালায় নেট ব্যবহার করুন। বিকেল থেকেই মশার উপদ্রব বাড়ে। এই সময় ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন।