গরমের তীব্রতা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে গ্রীষ্মকালীন রোগগুলোও। গ্রীষ্মকালীন রোগের মধ্যে প্রতিবছরই মাথা চাড়া দিয়ে উঠে ডায়রিয়া বা উদরাময় রোগটি। তবে অন্য বছরের তুলনায় এই বছর ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে। ঘরে ঘরে এখন ডায়রিয়া রোগীর দেখা মিলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূষিত পানি পান করা কিংবা অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলেই ডায়রিয়া রোগ হতে পারে।
ডায়রিয়া কী
স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে মূত্র ত্যাগ এবং তা পানির মতো পাতলা হওয়াই হচ্ছে ডায়রিয়া। বলে। বিশেষজ্ঞরা জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩ বা তার বেশি বার মূত্র ত্যাগ হলেই ডায়রিয়া রোগ শনাক্ত করা যাবে। এই রোগে শরীর থেকে প্রচুর পারিমাণে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। রোগী পানি শূন্যতায় ভোগে। এই সময় রোগীকে সঠিকমাত্রায় পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা করতে হয়। অন্যথায় মারাত্মক কিডনীজনিত অসুখের ঝুঁকি থাকে। পরে তা প্রাণহানির দিকে ঠেলে দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ৫ বছরের কম বয়সী অধিকাংশ শিশুর মৃত্যুর অন্যতম কারণ এই ডায়রিয়া। বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১৭০ কোটি শিশু এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রায় ৫ লাখ ২৫ হাজার শিশুর প্রাণ যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা যায়, নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ৩ বছর বয়সী শিশুরা বছরে প্রায় ৩ বার ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
ডায়রিয়ার লক্ষণে যা থাকে
ডায়রিয়া রোগ কিছু লক্ষণে শনাক্ত করা যাবে। সাধারণত মলত্যাগ পাতলা হলেই আমরা ধরে নেই ডায়রিয়া হয়েছে। কিন্তু এর বাইরে রোগটি শনাক্তে বেশ কিছু উপসর্গ থাকবে। প্রাপ্তবয়স্কদের ডায়রিয়া হলে_
- হঠাৎ করে মলত্যাগের প্রেসার হবে।
- মলত্যাগে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না। অনেকসময় জামাকাপড়েও পড়ে যেতে পারে। অপেক্ষা করা যাবে না।
- তলপেটে কামড় বা তীব্র ব্যথা অনুভব হবে।
- বমি-বমি ভাব লাগবে।
- পানিশূন্যতায় শরীর দুর্বল হয়ে যাবে।
শিশু-কিশোরদের মধ্যে ডায়রিয়ার লক্ষণে যা থাকে_
- ঘণ ঘণ পিপাসা লাগবে।
- স্বাভাবিকের চেয়ে কম প্রস্রাব হবে। একটানা ৩ ঘন্টা বা তার বেশি সময় প্রস্রাব না হওয়ার লক্ষণ দেখা যাবে।
- পানিশূণ্যতায় শারীর দুর্বলতা হয়ে যাবে।
- ত্বক শুষ্ক দেখাবে। আবার ত্বকের কার্যক্ষমতা কমে গিয়ে কুচকে যেতে পারে।
ভাইরাস সংক্রমণের কারণে ডায়রিয়া যে লক্ষণগুলো থাকবে_
- মলত্যাগের সময় সঙ্গে রক্ত যেতে পারে।
- জ্বর হতে পারে।
- ঠাণ্ডা অনুভূতি বেশি হবে।
- মাথা ব্যথা হবে।
- বমি ভাব হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে বমিও হতে পারে।
- রোগী শরীর নিস্তেজ হয়ে যেতে পারে। কখনো কখনো পেটও ফুলে যায়।
ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ_
বিশেষজ্ঞরা জানান, ডায়রিয়া রোগটি বিভিন্ন কারণেই হতে পারে। জীবাণু সংক্রামিত হলে, দূষিত পানি পান করলে, বাশি খাবার খেলে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা না মেনে চললে, অস্বাস্থ্য পরিবেশে খাবার গ্রহণ করলে ডায়রিয়া রোগটি হতে পারে। সাধারণত রোটা ভাইরাস, এস্ট্রো ভাইরাস, এডেনোভাইরাস ইত্যাদির সংক্রমণ হলে ডায়রিয়া হতে পারে। সালমোনেলা, শিগেলা, ই কলাই, ভিব্রিও কলেরি, ক্যামপাইলোব্যাকটর ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে ডায়ারিয়া হতে পারে।
আবার ডাইভার্টিকুলাইটিস, পায়ুপথে বা অন্ত্রে ক্যানসার, আইবিএস, আলসারেটিভ কলাইটিস রোগের কারণে ডায়রিয়া হতে পারে। আবার কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও ডায়রিয়া হয়।
ডায়রিয়া হলে যা করণীয়_
ডায়রিয়া হলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। রোগীকে পানিশূন্যতা পূরণে কিছুক্ষণ পর পরই খাবার স্যালাইনসহ তরল খাবার খাওয়াতে হবে। যতবার মলত্যাগ বা বমি হবে ততোবারই সমপরিমাণ খাওয়ার স্যালাইন খেতে হবে। বমি হলেও স্যালাইন খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না। অনেক সময় স্যালাইন খওয়া মাত্রই বমি হতে পারে। এক্ষেত্রে অল্প অল্প পরিমাণে ডায়রিয়ায় খাওয়ার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।সেই সঙ্গে স্বাভাবিক ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া হলে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে যা করবেন_
ডায়রিয়া প্রতিরোধে বিশুদ্ধ পানি পান করুন। অতিরিক্ত গরমে বেশি সময় থাকা যাবে না। যথাসম্ভব ঠাণ্ডা পরিবেশে বিশ্রাম নিতে হবে। খোলামেলা পরিস্কার পরিবেশে থাকতে হবে। মলত্যাগ শেষে বের হয়ে এবং খাবারের আগে হ্যান্ড ওয়াশ বা সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। নিয়মিত গোসল করতে হবে। তেলজাতীয় বা বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার গ্রহণ করা যাবে না। নিরাপদ পানি পান নিশ্চিত করতে হবে।