রমজান মাসে রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজ। নির্দিষ্ট বয়স পার হলেই রোজা ফরজ হয়ে যায়। তবে কিছু সমস্যার কারণে অনেকে রোজা রাখতে পারেন না। যেমন গুরুতর অসুস্থ হলে রোজা রাখা কষ্টকর হয়ে যায়। আবার অনেকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য় রোজা পালনে নিষেধ করে চিকিত্সকরা। বিশেষ করে গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী মায়ের জন্য রোজা রাখার বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। মায়েদের রোজা রাখা নিয়ে ধর্মীয়ভাবেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেখানে মায়ের স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করেই রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে।
চিকিত্সরা জানান, গর্ভবতী মায়ের শারীরিক অবস্থা ভালো থাকলে রোজা রাখায় কোনো বাধা থাকে না। কিন্তু শারীরিক জটিলতা থাকলে রোজা না রাখাই উত্তম। রোজা রাখা যাবে কি যাবে না, তা রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করছে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই রোজা রাখতে হবে গর্ভবতী মাকে। গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্যে কোনো বিরূপ প্রভাব না পড়লে মা রোজা রাখতে পারবে। অন্যথায় দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা গর্ভের সন্তানের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এদিকে যারা সন্তানকে স্তন্য পান করাচ্ছেন তাদেরও রোজা রাখার বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। অনেকে মনে করেন, রোজা রাখলে মায়ের স্তন্যে দুধ কমে যায়। এটা ভুল ধারণা। মায়ের শারীরিক জটিলতা না থাকলে তিনি রোজা রাখতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে মাকে অবশ্যই সাহরি ও ইফতারে তরল খাবার বেশি খেতে হবে।
গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীর সুস্থতায় ডাক্তারের পরামর্শে রোজা রাখলে খাবারে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। মাকে সাহরিতে স্বাভাবিক সুষম খাবার খেতে হবে। ক্যালরি ও আঁশযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। অ্যাসিডিটি হবে এমন খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। সবজি, স্যুপ, সালাদ, মাছ, মাংস, প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন ডাল, বাদামি চালের ভাত এবং গমের রুটি রাখতে পারেন। ইফতারে খেজুর, ফলের জুস, আপেল, কলা, দুধ খেতে পারেন গর্ভবতী মা। তাছাড়া সুষম সব খাবারই মায়েদের জন্য় ভালো হবে। বেশি বেশি আঁশযুক্ত, প্রোটিনযুক্ত ও ফ্যাটসম্পন্ন খাবার খেতে হবে। এসব উপাদান ধীরে পরিপাক হয়। মায়ের ক্ষুধা কম লাগে।
গর্ভবতী মায়ের রোজা রাখা_
গর্ভবতী মায়ের শারীরিক অবস্থার উপরই রোজা রাখা না রাখা নির্ভর করে। গর্ভকালীন তিনটি স্টেজ পার করে নারীরা। একেক সময় নারীদের শারীরিক পরিবর্তনগুলো একেক ধরণের হয়। তাই রোজা রাখার বিষয়টিও এর উপর অনেকটাই নির্ভর করে।
গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস
বিশেষজ্ঞরা জানান, গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস রোজা রাখা মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাও হতে পারে। এই সময় গর্ভে অনাগত শিশুর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠিত হয়। মায়ের শরীরে সঠিক মাত্রায় নির্দিষ্ট পরিমাণে পুষ্টির প্রয়োজন হয়। মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন, ক্যালসিয়াম নিশ্চিত করতে হয়। প্রচুর পানি পান করতে হয়। অনাগত সন্তান মায়ের শরীর থেকেই পুষ্টি পায়। তাই মায়ের শরীরে কোনো ঘাটতি থাকলে তা শিশুর ক্ষতি করতে পারে। গর্ভাবস্থায় মায়ের রক্তচাপ বেশি থাকলে কিছু ওষুধ খেতে হয়। মায়ের শরীর দুর্বল থাকে। বমি ভাব, মাথা ঘুরানো, খেতে না পারাসহ নানা সমস্যা থাকে মায়ের। তাই এই সময় রোজা রাখলে মায়ের শরীর আরও দুর্বল হয়ে যায়।
গর্ভকালীন মধ্যবর্তী তিন মাস
গর্ভকালীন মধ্যবর্তী তিন মাস মায়ের শরীর কিছুটা আরাম পায়। এই সময় গর্ভে থাকা অনাগত শিশুর গঠনও তৈরি হয়ে যায়। মায়ের শরীরে শক্তিও কিছুটা ফিরে আসে। তাই শারীরিক অন্য কোনো জটিলতা না থাকলে গর্ভবতী মা এই সময় রোজা রাখতে পারেন। তবে যেসব মায়ের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের রোজা না রাখাই ভালো। রোজা রাখা না রাখার বিষয়ে অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে।
গর্ভকালীন শেষ তিন মাস
গর্ভকালীন শেষ তিন মাস গর্ভবতী মাকে খুবই সতর্ক থাকতে হয়। এই সময় গর্ভের অনাগত সন্তান দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তাই গর্ভবতী মা ও তার অনাগত সন্তানের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হয়। শেষ তিন মাস মাকে পর্যাপ্ত খাবার ও বিশ্রাম নিতে হয়। কিছুক্ষণ পর পর খাবার খেতে হয়। তাই এই সময় রোজা না রাখাই উত্তম।
গর্ভকালীন হাইরিস্ক
যেসব মায়ের গর্ভকালীন হাই রিস্ক রয়েছে তাদের বেশি সতর্ক থাকতে হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, হাইরিস্ক প্রেগনেন্সিতে রোজা না রাখাই ভালো।