• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩০, ১৩ রমজান ১৪৪৬

ফ্রোজেন ফুড থেকেই দেহে প্রবেশ করেছে করোনা!


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২১, ০৯:৫৬ এএম
ফ্রোজেন ফুড থেকেই দেহে প্রবেশ করেছে করোনা!

ফ্রোজেন ফুডের মাধ্যমেই মানবদেহে প্রবেশ করেছে করোনা ভাইরাস,এমনটাই অনুমান করছেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও চিনা তদন্তকারীদের দল। চলতিবছর সার্স কোভ-২-এর উৎপত্তি সংক্রান্ত তদন্তে নেমে এমনই এই ধারণা করে দলটি। খবর বিবিসি।

তদন্তকারী দলটি জানায়, চীনের উহান প্রদেশ হুনান মার্কেটে ফ্রোজেন ফুড বিক্রি করা হতো। এই উহান প্রদেশেই প্রথম করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে।

তদন্তকারী দলের প্রধান পিটার বেন এমবারেক বলেন, ‘আমরা জানি যে, শীতল ফ্রোজেন পরিবেশে এই ভাইরাসগুলো বেঁচে থাকতে পারে। তবে সেখান থেকে মানবদেহে সংক্রমিত হতে পারে কী না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’

এদিকে চীন সরকার জানায়,  ধারণা প্রকাশ করা হচ্ছে, ফ্রোজেন ফুডের ভেতরে বা তার উপরিতলে করোনা থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে অন্য কোনও দেশ থেকে ফ্রোজেন ফুড বা  মাংস আমদানি করে থাকলে ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল অন্য কোনও দেশও হতে পারে।

তবে এই ভাইরাসটি ফ্রোজেন ফুডের সংক্রামক হিসেবে বেঁচে থাকতে পারে কী না, এ বিষয়ে কোনও স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়নি।

ইউকে-র ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে হিউমেন ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ লরেন্স ইয়াঙ্গ বলেন, ‘ফ্রোজেন ফুডের দিয়ে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া অত্যন্ত কঠিন।’

ইয়াংয়ের মতে, সার্স কোভ-২ একটি এনভেলাপড ভাইরাস। অর্থাৎ এটি একটি ফ্যাটি, লিপিড মেমব্রেন্সের আবরণে ঢাকা থাকে। যা মানব শরীরকে আক্রান্ত করতে ব্যবহার করে। আমদানিকৃত ফ্রোজেন মাংসের রক্ষণাবেক্ষণ থেকে শুরু করে বাজারে বিক্রি করা পর্যন্ত এই মাংসগুলোকে ফ্রিজ করা এবং গলানো হয়। ভাইরাসের মেমব্রেন্সগুলো সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার সময় দুর্বল হয়ে পড়ে। এই আবরণ থেকে বেরিয়ে গেলে ভাইরাসগুলো মানব শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে পারে না।

এদিকে ঝিয়ান জিয়াওটঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জি হান ও ঝিউ ঝাঙ্গ এবং তাদের সহকর্মীরা ফ্রোজেন ফুডের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর বিষয়টি রিভিউ করেন। তারা জানান, ফ্রোজেন ফুড সংরক্ষণ ও পরিবহনের সময় বারবার তাপমাত্রার তারতম্য দেখা যায়। ফ্রিজিং তাপমাত্রা (-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে -২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস)-এ সার্স কোভ-২ কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে, সে সম্পর্কে কোনও ডেটা পাওয়া যায়নি।

 এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে একটি সমীক্ষা করেছেন গবেষকরা। সমীক্ষায় গবেষকরা পর্ক, চিকেন ও স্যালমনের কিউবে ভাইরাসটি সংযোজিত করেন। -২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের স্ট্যান্ডার্ড ফ্রিজিং টেম্পারেচার অথবা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের রেফ্রিজারেশনের তামপাত্রায় ২১ দিন পর্যন্ত এই মাংসগুলো রাখে। তা সত্ত্বেও ভাইরাল লোডে কোনও ঘাটতি ধরা পড়েনি। তবে এটি এখনও স্পষ্ট ভাবে জানা যায়নি যে এই ভাইরাল লোডটি কোনও ব্যক্তিকে সংক্রমিত করতে পারে কী না। 

ইউকে-র লেসেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জুলিয়ান ট্যাঙ্গ জানান, ফ্রোজেন ফুডে পরিবহনের সময় পেতে পারে সার্স কোভ-২। আকাশ পথে পরিবহণ করা হলে তাপমাত্রা -২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে -৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যেতে পারে। আবার ল্যান্ডিংয়ের সময় তাপমাত্রা বেড়ে যায়। সমুদ্র পথে পরিবহণ করার সময় ভাইরাসের ক্ষেত্রে নোনা বায়ুর সমস্যা দেখা দেয়। যা ফ্রোজেন ফুডে বর্তমান ভাইরাসের সংখ্যাকে প্রভাবিত করতে পারে। আবার পরিবহনের সময় আর্দ্রতার তারতম্যের ফলেও সার্স কোভ-২-এর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ এ সময় বায়ু থেকে তরল পদার্থ সংগৃহীত হলে লিপিড মেমব্রেন্স ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ফ্রোজেন ফুড প্যাকেজিংয়ে ভাইরাসগুলো অবস্থান করতে পারে। ২০২০-র সেপ্টেম্বর মাসে চিনের কিঙ্গডাও পোর্টে কর্মরত দুজন কর্মী কোভিড পজিটিভ ধরা পড়েন। ৪২১টি ফ্রোজেন কড প্যাকেজিংয়ের স্যাম্পেলের মধ্যে ৫০টি স্যাম্পেলে সার্স কোভ-২ রয়েছে। এই ভাইরাসের আর একটি সম্ভাব্য পথ হতে পারে যে, ফ্রোজেন মাংস বা মাছের মধ্যে দিয়ে এই ভাইরাস এসেছে।

ট্যাঙ্গ বলেন, ‘এটি যদি মাংসের অংশ হয়, তা হলে অধিক নিরাপদে থাকবে।’

এদিকে টেক্সাস স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে রডনি রোহড জানান,প্যাকেজিংয়ের ওপর ভাইরাসটি পাওয়ার মানে এই নয় যে, এর সাহায্যে এটি মানব শরীরের কোষগুলোকে সংক্রমিত করতে পারে।

ইয়াঙ্গ জানান, রান্না করলে ভাইরাসগুলো মারা যায়। ঠিক এভাবেই আমাদের পেটে উপস্থিত গ্যাসট্রিক অ্যাসিডও ভাইরাসকে নষ্ট করে দেয়। তবে মাংসটি যদি কাঁচা থাকে বা ভালোভাবে রান্না করা না-হয়, তা হলে রান্নার সময়ের সার্ফেস বা খাবার চেবানোর সময় আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্টের মাধ্যমেও ব্যক্তি সংক্রমিত হতে পারে।

ট্যাঙ্গের মতে, ‘ফ্রোজেন ফুডের মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে একজনের সঙ্গে একবারও যদি এমন ঘটে, তা হলে তা সমগ্র মানবজাতির মধ্যে ভাইরাসছড়িয়েদেওয়ার জন্য যথেষ্ট।'

Link copied!