• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩০,

প্রচণ্ড পেটে ব্যথায় প্যানক্রিয়াটাইটিসের জটিলতা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২১, ০৩:৫২ পিএম
প্রচণ্ড পেটে ব্যথায় প্যানক্রিয়াটাইটিসের জটিলতা

পেট ব্যথা হলে বেশিরভাগ সময়ই আমরা ভাবি গ্যাস বা অম্বলের ব্যথা। কোনো ওষুধ খেয়ে নেই। তবে পেট ব্যথা যে সব সময় গ্যাস বা অম্বলের কারণেই হয় তা কিন্তু নয়। পেট ব্যথার অন্যতম কারণ অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহজনিত ব্যথাও হতে পারে। চিকিতসা ভাষায় যাকে প্যানক্রিয়াটাইটিস বলা হয়। একে অবহেলা করা ঠিক নয়। এর থেকে বড় সমস্যাও হতে পারে।

গ্রিক শব্দ প্যানক্রিয়াস অর্থ হলো ‘অল ফ্লেশ’। প্যানক্রিয়াস শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এর বাংলা নাম অগ্ন্যাশয়। প্যানক্রিয়াটাইটিস হলো প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ।

প্যানক্রিয়াসের কাজ হলো দু’টি। পাচক রস বা এনজ়াইম তৈরি করা। যা আমাদের খাবার হজম করতে সাহায্য করে। অগ্ন্যাশয়ে তৈরি হওয়া এই উৎসেচক শর্করা, আমিষ এবং স্নেহ তিন ধরনের খাবার হজমেই সাহায্য করে। প্যানক্রিয়াসের সঙ্গে কিছু ডাক্টের মাধ্যমে ইনটেস্টাইন বা অন্ত্রের সংযোগও রয়েছে। এগুলো প্যানক্রিয়াসে তৈরি পাচক রস অন্ত্রে পৌঁছায়। এরপরই খাবার হজমের প্রক্রিয়া শুরু হয়। একে এক্সোক্রিন প্যানক্রিয়াস বলে।

প্যানক্রিয়াসের আর একটি কাজ হলো ইনসুলিন বা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন তৈরি করা। একে এন্ডোক্রিন প্যানক্রিয়াস বলে।

প্যানক্রিয়াটাইটিস সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে- অ্যাকিউট এবং ক্রনিক। এটি সাধারণত দুই কারণে হয়। গল ব্লাডারে স্টোন বেরিয়ে গেলে এবং অতিরিক্ত মদ্যপান করলে। এছাড়াও অতিরিক্ত ধুমপান ও ওবেসিটি এই রোগের ঝুকি অনেকটাই বাড়ায়। কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও প্যানক্রিয়াটাইটিস হতে পারে।

প্যানক্রিয়াটাইটিস থেকে ব্যথা হলে হঠাত্ করেই পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব হয়। এই ব্যথা পিঠের সামনে থেকে পেছনের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। বমি ও জ্বরও হতে পারে।

ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় প্যানক্রিয়াটাইটিস উপসর্গ দেখা দিলে রক্ত পরীক্ষা ও আলট্রাসোনোগ্রাফি করা হয়। প্রয়োজনে সিটি স্ক্যান করতে হয়। গল ব্লাডারে স্টোন থাকলে এন্ডোস্কোপি বা ইআরসিপি করতে হয়।

প্যানক্রিয়াটাইটিস সঠিক সময় চিকিতসা করতে হয়। অনেক সময় এটি মারাত্মক আকার ধারন করে। শরীরের বিভিন্ন অংশের কার্যক্ষমতা হারায়। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। প্যানক্রিয়াটাইটিসে আক্রান্ত রোগীকে তাই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চিকিতসা করাতে হয়। সঠিক চিকিতসায় সুস্থ জীবনে ফেরা সহজ হয়।

প্যানক্রিয়াটাইটিসে সিস্টেম অফ ইনফ্ল্যামেটারি রেসপন্স সিনড্রোম (SIRS) হতে পারে। যা শরীরের ব্লাড ভেসেল বা রক্তনালির রক্ত বা ফ্লুয়িড ধরে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এতে রক্তনালিগুলো লিক করতে শুরু করে। ফ্লুয়িড লিক করে টিসুতে জমলে রোগীর শক তৈরি হয়। এই শক থেকেই প্রাথমিক অবস্থায় প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে।

অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিসের তিনটি ভাগ রয়েছে। মাইল্ড, মডারেট এবং সিভিয়র। ৯০ শতাংশ রোগীই মাইল্ড বা মডারেটের আওতায় পড়েন। ১০ শতাংশ রোগীর সিভিয়র প্যানক্রিয়াটাইটিস হয়ে থাকে।

রক্তনালি থেকে রক্ত এবং ফ্লুয়িড বেরিয়ে যাওয়ায় পুরো শরীরে সার্কুলেশনের জন্য রক্তের অভাব দেখা দেয়। সেই সঙ্গে এসআইআরএস হলে শরীরের প্রধান পাঁচটি অঙ্গ, যেমন— হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি, লিভার, ব্রেন ধীরে ধীরে বিকল হতে পারে।

  • ডায়াবিটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • পিত্তনালি সরু হয়ে যায়। ফলে জন্ডিস হওয়ার ভয়ও থেকে যায়।
  • ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস অনেক দিন থাকলে, প্যানক্রিয়াসে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।

 

প্যানক্রিয়াটাইটিস প্রতিরোধে যা করা যায়_

  • মদ্যপান ও ধুমপান বন্ধ করুন। অতিরিক্ত ধূমপান এর প্রধান কারণ হতে পারে।
  • শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
  • নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে।
  • ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস হলে চর্বিজাতীয় খাবার যেমন ডিম, দুধ, রেড মিট এড়িয়ে চলতে হবে।

 

সূত্র: দ্য ওয়াল

Link copied!