• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নবজাতকের জন্ডিস


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২২, ১১:৪০ এএম
নবজাতকের জন্ডিস

শিশুর শরীরের ত্বক, চোখের সাদা অংশ কিংবা মিউকাস ঝিল্লি হলুদাভ বর্ণ ধারণ করাকেই বলা হয় জন্ডিস। অনেকেই হেপাটাইটিস এবং জন্ডিসকে এক ভেবে থাকেন। আসলে জন্ডিসের একটি কারণ হলো হেপাটাইটিস এবং হেপাটাইটিস ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন কারণে শিশু জন্ডিস হতে পারে।

প্রাপ্তবয়স্কদের মতো নবজাতকরাও বিভিন্ন কারণে জন্ডিসে আক্রান্ত হতে পারে। জন্ডিসে আক্রান্ত হলে শিশুর হাতের তালু হলুদ হয়ে যেতে পারে। সাধারণত শিশুর মুখ, হাত ও বুক বা পেটের ওপর পর্যন্ত হলুদ হতে দেখা যায়। পাশাপাশি জন্ডিসে আক্রান্ত নবজাতকের মলের রং সবুজ হতে পারে। সাধারণত নবজাতকের ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস ও প্যাথোলজিক্যাল জন্ডিস এই দুইধরনের জন্ডিস হয়ে থাকে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক নবজাতকের জন্ডিস ও তার চিকিৎসা সম্পর্কে-

যে কারণে শিশুর ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস হয়ে থাকে

৬০ শতাংশ পূর্ণ গর্ভকাল বা টার্ম নবজাতকের এবং ৮০ শতাংশ প্রি-টার্ম অর্থাৎ অকালজাত নবজাতকের মধ্যে জন্মের প্রথম সপ্তাহেই জন্ডিস দেখা যায়। কম ওজনে ভূমিষ্ঠ শিশু বা সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুরাই জন্ডিসে আক্রান্ত হয় বেশি। প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে এটি স্বাভাবিক জন্ডিস বা ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস অর্থাৎ নির্দোষ জন্ডিস। জন্মের পর শিশুর যকৃৎ পুরোপুরি কর্মক্ষম হয়ে উঠতে একটু দেরি হলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে এই জন্ডিস জন্ডিস দেখা দেয়।

ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিসের বৈশিষ্ট্য

  • ভূমিষ্ঠ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর শুরু হয়।
  • টার্ম নবজাতকের ৩-৫ দিন বয়সে এবং প্রি-টার্ম নবজাতকের ৫-৭ দিনের মধ্যে বেশি বাড়ে।
  • ২ সপ্তাহ বয়সের মধ্যে এমনিই সেরে যায়।
  • রক্তে বিলিরুবিন মাত্রা ১৫ মি গ্রাম/ডেসির নিচে থাকে।
  • এটা সাময়িক জন্ডিস,  তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।

ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিসের চিকিৎসা

শিশুকে নিয়মিত ২-৩ ঘণ্টা পর পর মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। কারণ বিশেষত ফিজিওলজিক্যাল বা স্বাভাবিক জন্ডিসের মূল চিকিৎসাই হচ্ছে শিশুকে ঠিকমতো বুকের দুধ খাওয়ানো। এছাড়া প্রতিদিন সকালে নবজাতককে আধা ঘণ্টা করে রোদ পোহাতেও পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে এর চেয়ে বেশি সময় শিশুকে রোদে না রাখাই ভালো। কারণ সূর্যের কড়া রোদ ও অতিবেগুনি রশ্মি শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে শিশুকে ফটোথেরাপি বা আলোক চিকিৎসা দেওয়া যায়।

যে কারণে শিশুর প্যাথোলজিক্যাল জন্ডিস হয়ে থাকে

বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নবজাতক জন্মের পর প্যাথোলজিক্যাল জন্ডিসেও আক্রান্ত হয়ে থাকে। মায়ের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ এবং শিশুর রক্তের গ্রুপ পজেটিভ হলে কিংবা গর্ভাবস্থায় মায়ের কোনো সংক্রমণের ইতিহাস থাকলেও শিশুর এধরনের জন্ডিস হতে পারে।

এ ছাড়াও শিশু জন্মগত কোনো রোগে আক্রান্ত হলে বা জন্মগতভাবে শিশুর যকৃৎ বা পিত্তথলিতে কোনো সমস্যা থাকলে কিংবা জন্মের পর শিশুর রক্তে সংক্রমণ বা সেপটিসেমিয়াহলে আক্রান্ত নবজাতকের প্যাথোলজিক্যাল জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ঝুঁকিসম্পন্ন জন্ডিস বা প্যাথলজিক্যাল জন্ডিসের বৈশিষ্ট্য

  • নবজাতকের জন্ডিসের ৩৫-৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে তা প্যাথোলজিক্যাল বা ঝুঁকিপূর্ণ জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেখা দেওয়া।
  • বিলিরুবিনের মাত্রা ১৫ মি গ্রাম/ডেসির বেশি।
  • ২ সপ্তাহ বয়সের পরও শিশু স্বাভাবিক হয় না।
  • যদি বিলিরুবিন মাত্রা ০.৫ মি গ্রাম/ডেসি/প্রতি ঘণ্টায় বাড়তে থাকে বা ২৫ মি গ্রাম/ডেসির বেশি হয় তবে তা বিপজ্জনক বলে গ্রহণ করতে হবে।

প্যাথলজিক্যাল জন্ডিসের চিকিৎসা

শিশু খাওয়া বন্ধ করে দিলে বা কমিয়ে দিলে, জ্বর বা সংক্রমণের লক্ষণ থাকলে কিংবা রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা দ্রুত বাড়তে থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে৷ এছাড়াও যেসব নবজাতক উচ্চমাত্রার জন্ডিসে আক্রান্ত ছিলো, পরবর্তী জীবনে তাদের শ্রবণশক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটছে কি-না সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

শিশু জন্ডিস প্রতিরোধে যা করবেন

  • গর্ভাবস্থায় অবশ্যই মায়ের এবিও, আরএইচ রক্ত গ্রুপ পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।
  • সকল নবজাতকের জন্ডিসের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ৩-৫ দিন বয়সে বিলিরুবিন পরীক্ষা করা উচিত।
  • হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর শিশুকে হলদেটে মনে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
  • শিশুকে যথাযথভাবে মাতৃদুগ্ধ পান চালিয়ে যেতে হবে।
  • যেসব নবজাতক উচ্চমাত্রার জন্ডিসে আক্রান্ত ছিল, পরে তাদের শ্রবণশক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঠিকভাবে হচ্ছে কি না, তা নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

সূত্র: প্রথমআলো

Link copied!