থ্যালাসেমিয়া এক ধরনের রক্তশূন্যতা। যা মূলত বংশগতভাবে বিস্তার লাভ করে। এমন রোগীর শরীরে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হিমোগ্লোবিন তৈরির হার কমে যায়। এটি প্রধানত দু’ধরনের। আলফা থ্যালাসেমিয়া ও বিটা থ্যালাসেমিয়া। এর মধ্যে বিটা থ্যালাসেমিয়া বেশি গুরুতর। অন্যদিকে আলফা থ্যালাসেমিয়ার তীব্রতা কম হলেও এতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।
থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ কম মাত্রায় প্রকাশ পায়। এ কারণে সহজে থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে না। এমন রোগীদেরকে থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট বা কেরিয়ার বলে। আর যাদের দুটি জিনই খারাপ অর্থাৎ মা ও বাবা উভয়ই থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট, তাদের মধ্যে রোগের লক্ষণসমূহ শিশুকালেই প্রকাশ পায়। ফলে তাদের রোগ নির্ণয় দ্রুত হয়। এদেরকে থ্যালাসেমিয়া মেজর বা হোমোজিয়াস স্টেট কিংবা থ্যালাসেমিয়া ইন্টারমেডিয়া বলা হয়। বাংলাদেশে হিমোগ্লোবিন-ই ও হিমোগ্লোবিন বিটা থ্যালাসেমিয়া ট্রেইটের প্রকোপ বেশি।
জেনে নিন থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণসমূহ-
- রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া
- ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া বা জন্ডিস
- দেহে অতিরিক্ত আয়রন জমা হওয়া
- স্প্লিন বা প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া
- অবসাদগ্রস্ততা
- দুর্বলতা ও অস্বস্তি
- শ্বাসকষ্ট
- মুখের হাড়ের বিকৃতি, মুখে অস্বাভাবিক পরিবর্তন
- শারীরিক বৃদ্ধি কমে যাওয়া
- পেট বেড়ে যাওয়া
- প্রস্রাব গাঢ় রংয়ের হওয়া
- হৃৎপিণ্ডের সমস্যা
থ্যালাসেমিয়া নির্ণয়
- বিটা থ্যালাসেমিয়া নির্ণয়ের ক্ষেত্রে চিকিৎসক আপনার লোহিত রক্ত কণিকার আকার পরীক্ষা করার পরামর্শ দেবেন। এটি আপনার সম্পূর্ণ রক্তকণিকা গণনার (সিবিসি) মিন কর্পাস্কুলার ভলিউমের (এমসিভি) মাধ্যমে দেখানো হয়।
- যদি আপনার এমসিভি রিডিং ৮০ বা তার কম হয় ও আপনার লোহার ঘাটতি না থাকে তাহলে বিটা থ্যালাসেমিয়ার প্রলক্ষণ থাকতে পারে।
- হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস, কোয়ান্টিটেটিভ হিমোগ্লোবিন এ ২ ও কোয়ান্টিটেটিভ হিমোগ্লোবিন এফ পরীক্ষার মাধ্যমেও বিটা থ্যালাসেমিয়ার প্রলক্ষণ আছে কিনা তা জানা যায়।
থ্যালাসেমিয়া রোগের চিকিৎসা
- থ্যালাসেমিয়া মাইনরে (ট্রেইট) সাধারণত কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে থ্যালাসেমিয়া মেজরে নিয়মিত রক্তসঞ্চালন হলো প্রধান চিকিৎসা।
- আয়রন চিলেশন থেরাপি এবং খাদ্যগ্রহণের পর চা পানের অভ্যাসকে উৎসাহিত করা হয়। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন থ্যালাসেমিয়ার একটি কার্যকর আধুনিক চিকিৎসা কিন্তু ব্যয়সাপেক্ষ। অনেক সময় প্লিহা বেশি বড় হয়ে গেলে সার্জারির মাধ্যমে প্লিহা অপসারণেরও প্রয়োজন পড়তে পারে।
- থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধকল্পে বিবাহপূর্ব রক্ত পরীক্ষার বিষয়টি উৎসাহিত এবং বাহকদের মধ্যে বিবাহ নিরুৎসাহিত করতে হবে।
- সিবিসি ও হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিসের মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার বাহক শনাক্ত করা যায়। গর্ভস্থ সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত কি না জানার জন্য ফিটাল ব্লাড স্যাম্পলিং, অ্যামনিওসেনটেসিস, কোরিওনিক ভিলাস স্যাম্পলিং প্রভৃতি পরীক্ষা করা যায়, তবে এসব পরীক্ষা গর্ভাবস্থার ১৬-১৮ সপ্তাহে করানো উচিত।
সূত্র: থ্যালাসেমিয়া ডট অর্গ