সারা দিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা গুরুত্বপূর্ণ। তবে সুস্বাস্থ্যের জন্য় পানি পান করার পাত্রটিও সঠিক হতে হবে। প্লাস্টিক বা কাচের পাত্রে পানি পান না করাই ভালো বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের পরামর্শ, পানি পানের সঠিক পাত্রটি তামা বা মাটির পাত্র হওয়া উত্তম।
প্রাচীনকালে তামার পাত্রের ব্যবহার বেশি দেখা যেত। তামার পাত্রে খাবার খাওয়া হতো। পানিও পান করা হতো তামার গ্লাসে। একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছে এই রীতি অনেকটাই বিলীন। এখন আধুনিক নকশার পাত্র দিয়ে পানি পান করা হয়। আধুনিক প্রযুক্তিতে বিভিন্ন উপায়ে তৈরি হয় এসব পাত্র, যা স্বাস্থ্যের জন্য় ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা জানান, সারা রাত তামার পাত্রে রাখা পানি খালি পেটে খাওয়া উপকারী। তামাতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি টক্সিন অপসারণ করতেও সাহায্য করে। তাই তামার পাত্র ব্যবহার করা স্বাস্থ্যসম্মত।
তামার পাত্রে পানি পান করলে শরীরের যেসব উপকার পাওয়া যাবে তা জানাব এই আয়োজনে।
- তামার পাত্রে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ফ্রি ব়্যাডিকালের বিরুদ্ধে লড়াই করে। তামা মেলানিন উৎপাদনে সহায়তা করে। মেলানিন ত্বক এবং চোখকে রক্ষা করে। পাশাপাশি সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকেও রক্ষা করে।
- আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে, তামা কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হ্রাস করে। শরীরে কপারের ঘাটতি থাকলে তা হাইপোটেনশন বিকাশের দিকে পরিচালিত করে। তবে প্রাপ্তবয়স্করা যদি তামার ঘাটতিতে ভোগেন, তাহলে তাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হয়। তামার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
- তামার পাত্রে খেলে বা পানি পান করলে থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তামা থাইরয়েড গ্রন্থির অসংগতি ব্যালেন্স রাখতে পারে, যা থাইরয়েড গ্রন্থিকে ভালোভাবে কাজ করার জন্য শক্তি জোগায়। এই গ্রন্থি থেকে অত্যধিক ক্ষরণের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলো বিরুদ্ধেও লড়াই করে।
- রক্ত স্বল্পতা প্রতিরোধ করে তামা হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে পারে। শরীরকে আয়রন শোষণ করতেও এটি সহায়তা করে। দেহে তামার ঘাটতি হলে হেমাটোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার হতে পারে, যা শ্বেত রক্তকণিকা কমে যাওয়ার মতো সমস্যার সৃষ্টি করে।
- তামাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা দ্রুত ক্ষত নিরাময় করতে পারে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও শক্তিশালী করে।
- তামার পাত্রে পানি পানে আর্থ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত রোগীরাও স্বস্তি বোধ করবে। কারণ এতে হাড়ও মজবুত হয়।
- প্রাচীন রোমান সভ্যতা থেকে শুরু করে বর্তমান চিকিৎসাবিদ্যায় উঠে এসেছে, তামার পাত্রে পানি পানে হজম শক্তি বাড়ে। প্রাচীন রোমান গ্রন্থগুলোতে বলা হয়েছে, পেটের জীবাণু মেরে ফেলার জন্য তামা-ভিত্তিক ওষুধের কথা। অন্যদিকে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা মতে, তামার পাত্রে পানি পানে পেট ডিটক্সিফাই ও পরিষ্কার হয়। তামা পেটের আস্তরণের প্রদাহকে কমায় এবং হজম ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। আলসার, বদহজম এবং পাকস্থলীর চিকিৎসায় এরন সুফল পাওয়া যায়।
- তামার পাত্রে পানি পান বা খাবার খেলে হার্টের রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি হয়। পাশাপাশি রক্তনালিগুলোকে প্রসারিত করে। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, তামার ঘাটতির ফলে হৃৎপিণ্ডের পেশিগুলো কর্মহীন হয়ে পড়ে। এতে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়।
- তামার পাত্রে খাবার খেলে ওজন কমে। শরীরের অতিরিক্ত চর্বিকে দ্রবীভূত করতে পারে এপি। বিশ্রামের সময়ও এটি শরীরে অতিরিক্ত চর্বিকে দহন করে।
সূত্র: হেলথ লাইন