• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অয়ন্তিকার মন্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২২, ০৪:৩৭ পিএম
অয়ন্তিকার মন্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে

“বাংলা মিডিয়ামে পড়া ছেলেমেয়েরা ইন্টারভিউ ক্র্যাক করতে পারে না”, অয়ন্তিকার মন্তব্যের জেরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলকালাম! বড় বড় তারকা থেকে শুরু করে সাধারণ, সকলে মিলে নেমেছে এই অভিনেত্রীর মন্তব্যের চুলচেরা বিশ্লেষণে।

এর মধ্যে সোমবার (৪ এপ্রিল) অয়ন্তিকা ফেসবুক লাইভে এসে দিয়েছেন তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা। তবুও থেমে নেই নেটিজেনরা। তুমুল সমালোচনায় অভিনেত্রীকে দাঁড় করাচ্ছেন কাঠগড়ায়।

নেটিজেনদের দাবি, বাংলা মিডিয়াম নিয়ে ওই মন্তব্য করে বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতিকে অপমান করেছেন একসময়ের দাপুটে রেডিও জকি।

রোববার (৩ এপ্রিল) এক টেলিভিশন বির্তক সভায় অংশগ্রহণ করেন অয়ন্তিকা। বিতর্ক সভার বিষয়টি ছিল, 'বাংলা ভাষা কি চ্যাটিংয়ের একটা মাধ্যম হয়ে দাঁড়াচ্ছে নাকি ভাষা নিয়ে চর্চা এখনও জীবিত আছে?'

সেই প্রসঙ্গে অয়ন্তিকা বলেন, “বিষয়টি পুরোটাই গোড়ায় গলদ। এই গোড়ায় গলদের জন্যই বাংলা রাজ্য হিসেবে কিছু করছে না। সেই জন্যই এখনও আমাদের এখানে কেউ চাকরির ইন্টারভিউয়ে গেলে তাকে প্রশ্নগুলো ইংলিশেই করা হয়, জবাবটাও সেই একই ভাষায় দিতে হয়। যদি সত্যিই কিছু বদলানোর জায়গা থাকে তাহলে সেই জিনিসটা আগে বদলানো দরকার। আমার বক্তব্য, তাহলে এরকম নিয়ম করা হোক, যে পশ্চিমবঙ্গে চাকরির পরীক্ষা দিতে গেলে প্রশ্নগুলিও বাংলায় করা হবে।”

এই বক্তেব্যের একটি ছোট্ট অংশ প্রচারিত হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মুহুর্তেই ভাইরাল হয় ভিডিওটি। আর এরপরই শুরু হয় অয়ন্তিকাকে নিয়ে ট্রল ও তীর্যক মন্তব্য। অয়ন্তিকার সমালোচনায় নিজেদের ফেসবুক পোস্ট করেন কোলকাতার তারকারাও।

অয়ন্তিকার সমালোচনা করেছেন কোলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। ভিডিও পোস্ট করে তিনি বলেন, “ইউরোপেও এমন দেশ রয়েছে, যেখানে ইংরেজিতে কথা বলতে চান না। শুধু এই দেশেই ইংরেজি না জানলে খাটো চোখে দেখা হয়। মাতৃভাষার প্রতি সম্মান থাকাটা সবচেয়ে বড় বিষয়।”

অয়ন্তিকার সহশিল্পী রাহুল ব্যানার্জি বিষয়টি নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি ব্যঙ্গ করে বলেন, “অয়ন্তিকা, আমি তোমার সঙ্গে একমত। বাংলা মিডিয়াম থেকে কেউ সফল হয় না আবির, অনির্বাণ, ঋত্বিক বাংলা মিডিয়ামের ছাত্র; ওরা কি আর তোমার মতো সফল বলো? একদিন না আমার সামনে এসো, এই নাকতলা হাই স্কুলের নিপাট বাংলা মিডিয়াম তোমার সঙ্গে বিশ্ব সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করবো, অবশ্য যদি তুমি অনুমতি দাও।”

শুধূ তারকারাই নন, সাধারণ মানুষরাও সামাজিক যোগামাধ্যমে এই বিতর্কে অয়ন্তিকার পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের অনেকের দাবি অয়ন্তিকা তার বক্তব্যে বাংলা ভাষাকে অপমানিত করেছেন। আবার এর উল্টো হিসেবও আছে, অনেকেই অয়ন্তিকাকে সমর্থন দিচ্ছেন।

তাদের দাবি, অয়ন্তিকার পুরো বক্তব্য শুনলে সবাই তার বক্তব্যকেই সমর্থন দিবেন। রাহুল বিশ্বাস নামে একজন লিখেছেন, একেবারে যথাযথ বলেছেন অয়ন্তিকা, সস্তার হাততালি পাওয়ার জন্য বহু ‘বাংলা প্রেমি’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসরে নেমেছেন।

এদিকে এমন জোর সমালোচনার মধ্যে ফেসবুক লাইভে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন অয়ন্তিকা। তার দাবি, বক্তব্যের কিছু অংশ বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, “এখানকার বাবা-মায়েরা নিজের সন্তানকে বাংলার বদলে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর চেষ্টা করেন। এমনকি কখনও কখনও ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর জন্য নিজের সামর্থ্যের বাইরে যেতেও পরোয়া করেন না। তাদের এই সিদ্ধান্তের পিছনে কোথাও না কোথাও এই ভাবনা কাজ করে যে ভবিষ্যতে বাইরে অথবা পশ্চিমবঙ্গেই চাকরি করতে গেলে শুধুমাত্র বাংলা জানলে হবে না। বাংলার সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজিটাও পারতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমার অনেক বাংলা মিডিয়ামে পড়া বন্ধুবান্ধব রয়েছে। যারা একটা সময়ের পর শুধুমাত্র ইংলিশটা ঠিক মতো বলতে না পারার জন্য চাকরিক্ষেত্রে অনেক সুযোগ হারিয়েছেন। অনেকে আবার ইংরেজিটা ভালো করে লিখতে জানলেও বলতে না পারার জন্য অসুবিধায় পড়ছেন। তবে এর ব্যতিক্রম তো অবশ্যই আছে। অনেকে বাংলা মিডিয়ামে পড়েও ইংরেজিতে ভীষণই ভালো। বাইরে চাকরি হোক বা এদেশে ইংলিশ বলা নিয়ে কোনও অসুবিধায় পড়েননি। সেই অংশটার কথা আমি বলছি না।”

ইংরেজি বলতে না পারার কারণে অনেকেই ঝামেলায় পড়েছেন বলে উল্লেখ করে অয়ন্তিকা বলেন, “আমি এমন অনেকেই চিনি, যারা বাংলা মি়ডিয়ামে পড়ে ইংরেজিটা ঝড়ঝড় করে বলতে না পারার কারণে একটা সময়ের পর চাকরি ক্ষেত্রে খানিকটা বাধা-বৈষম্যের মুখে পড়েছেন। শুধুমাত্র ইংরেজিতে অভ্যস্ত না হওয়ার কারণে অনেকে কর্পোরেট ছেড়ে সরকারি চাকরির দিকে ঝুঁকেছেন। তবে ব্যতিক্রম সব কিছুতেই আছে, তাকে অস্বীকার করার কিছু নেই।”

তবে অয়ন্তিকার এমন ব্যাখ্যায়ও কিন্তু থামছে না এই বির্তক। অয়ন্তিকার বক্তব্যের ব্যাখ্যার ভিডিওতেই তাকে নিয়ে ট্রল করছেন নেটিজেনরা। উল্টো তাদের দাবি, সমালোচনার মুখে নিজের বক্তব্যের সুর বদলেছেন অয়ন্তিকা।

Link copied!