মনি মন্ডল থেকে মনি কিশোর। মনি কিশোর এক সাক্ষাৎকারে নিজের শিল্পী সত্তা নিয়ে বলেছিলেন, “অসাধারণ গায়ক শিল্পী মনি কিশোর, আমি রাতের পর রাত, দিনের পর দিন শিল্পী মনি কিশোরের গান শুনেছি। এ দেশে আর মনি কিশোর জন্মাবে না, আমি হলফ করে বলতে পারি।’ নিজের প্রতি কতটা বিশ্বাস থাকলে কথাগুলো বলতে পারেন একজন শিল্পী।
কথায় কথায় জানালেন, মনি কিশোর তার পোশাকি নাম। প্রকৃত নাম মনি মণ্ডল। কিশোর কুমারের ভক্ত ছিলেন বলে নামের সঙ্গে ‘কিশোর’ জুড়ে নিয়েছিলেন। ‘কুমার শানু নিয়েছেন “ওস্তাদের” নামের একাংশ। আমি নিয়েছি তার নামের আরেক অংশ,’ হাসতে হাসতে বললেন মনি কিশোর।
মাত্র ছয় লাইনে গান হয় নাকি! গানটিকে অ্যালবামে রাখতেই চাননি শিল্পী। সেই গান ‘কী ছিলে আমার বলো না তুমি’ শ্রোতারা লুফে নিল। রাত পোহানোর আগেই মনি কিশোরের নাম জেনে গেল গোটা দেশ। নব্বই দশকের শুরুতে ‘চার্মিং বউ’ অ্যালবামের এক গান তাকে দাঁড় করিয়ে দিল বাজারকাটতি অ্যালবামের শিল্পী হিসেবে। একে একে ৩০টির বেশি একক অ্যালবাম করে ফেললেন। তারপর একসময় অডিও জগতে ঘটল পালাবদল। এখন কোথাও মনি কিশোরের দেখা মেলে না।
‘এই তুমি সেই তুমি নেই তুমি’, ‘কী করে ভাবলে’, ‘আমাকে ভালোবাসা সে তোমার প্রথম ভুল’-এর মতো সফল অ্যালবামের শিল্পী? আছেন এই ঢাকা শহরেই। থাকেন বাসাবো এলাকায়। জড়িত আছেন কাপড়ের ব্যবসার সঙ্গে। অবশ্য ব্যবসাটাই বরাবর করেছেন। গানের জগতে আসার আগেও ব্যবসা করতেন। যখন ব্যস্ত শিল্পী ছিলেন, তখনো ব্যবসাটাকে ছাড়েননি। গানের সঙ্গে তার সব সম্পর্ক চুকে গেল?
মনি কিশোর পাঁচ শতাধিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। রেডিও, টিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী হলেও গান গেয়েছেন অল্প। সিনেমায়ও তেমন গাননি। মূলত, অডিওতে চুটিয়ে কাজ করেছেন। তাঁর জনপ্রিয় গানের মধ্যে ‘কী ছিলে আমার’, ‘সেই দুটি চোখ কোথায় তোমার’, ‘তুমি শুধু আমারই জন্য’, ‘মুখে বলো ভালোবাসি’, ‘আমি মরে গেলে জানি তুমি’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তাঁর সবচেয়ে শ্রোতৃপ্রিয় গান ‘কী ছিলে আমার’ তারই সুর করা, তাঁরই লেখা। ২০টির মতো গান লিখেছেন ও সুর করেছেন মনি কিশোর।
ইউটিউবে প্রচুর ভিউ। স্টেজে গেয়ে থাকেন তরুণেরা। কিন্তু গানের মূল গায়ককে তাঁরা চেনেন না। গানটির সুরকার ও গীতিকার কে, তা জানেন না। এই রকম জায়গা থেকে ভেবেছেন, এ প্রজন্মের কাছেও গানটি পরিচিত হোক। তাঁদের মধ্যে এটি ছড়িয়ে দেওয়া দরকার। এ ছাড়া আলাদা করে দেড় শ গান তৈরি করেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘গানগুলো আমার জীবদ্দশায় প্রকাশ করতে চাই না। কিছু গান মৃত্যুর পরও প্রকাশ পাবে।’ জীবদ্দশায় মনি কিশোর তাঁর এই গানগুলো প্রকাশের আগেই চলে গেলেন অনন্তযাত্রায়। এই শিল্পী যেমনটি চেয়েছিলেন, হয়তোবা সেই ইচ্ছা পূরণ করবে তাঁর পরিবার। তাঁর তৈরি হওয়া গানগুলো হয়তোবা সামনে প্রকাশিত হবে।
রাজধানীর রামপুরার বাসা থেকে শনিবার তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, চার থেকে পাঁচ দিন আগে তার মৃত্যু হয়েছে। একসময়ের জনপ্রিয় এই গায়কের মৃত্যুর কারণ এখনো নিশ্চিত নয়। তবে রামপুরা থানার পুলিশ জানিয়েছে, শিল্পী মনি কিশোরের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।