অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর মৃত্যু ঘিরে ইতোমধ্যে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। এ ঘটনায় অভিনেত্রীর প্রেমিক জিয়াউদ্দিন রুফিকে আটক করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ এটিকে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বলেও ধারণা করছেন। মৃত্যুর তিন থেকে চার মাস আগে থেকেই হিমু হতাশায় ভুগছিলেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে অভিনেত্রী স্বর্ণলতা দেবনাথ বলেন, “তিন থেকে চার মাস আগে ‘স্বপ্নের রানী’ শুটিং সেটের মেকআপ রুমে আপু হঠাৎ করেই বলছিল, আচ্ছা আমি যদি মারা যাই বা চলে যাই তাহলে এই যে আমার গাড়ি, ফ্ল্যাটটা এটা কি আমি অনাথ আশ্রমে দিয়ে যেতে পারব? আপুর ওই কথা শুনে আমরা সবাই বিচলিত হয়ে পড়েছিলাম। যে হঠাৎ করে কেন এই কথা বলছে। ওইদিন আমাদের পরিচালক থেকে শুরু করে মেকআপ রুমে অনেকেই ছিলেন। তারপর আপুকে আমরা জিজ্ঞেস করছিলাম, কেন এসব কথা বলছ? তখন আপু বলেছিল, ‘মানুষের তো অনেক কিছু হতে পারে। আমার না আর বাঁচতে ইচ্ছে হচ্ছে না। আমি যদি মরে যাই তাহলে এগুলো অনাথ আশ্রমে দিয়ে যেতে চাই।’ তখন আমরা আপুকে অনেক কিছু বোঝানোর চেষ্টা করি। যতদিন শুটিং থাকত, আপুকে খুব ব্যস্ত রাখতাম।”
হিমুর সঙ্গে একাধিক নাটকে কাজ করা এই অভিনেত্রী আরও বলেন, “তখন বুঝতে পেরেছিলাম যে, আপু একা থাকতে থাকতে অনেকটা ডিপ্রেসড হয়ে গেছেন। প্রথম প্রথম যখন তার সঙ্গে কাজ করতাম, তখন আপু বিগো অ্যাপসে অনেক ব্যস্ত থাকতেন। কিন্তু শেষ দিনগুলোতে তিনি অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিলেন। একটু চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলেন, কাজে মনোযোগী ছিলেন। আমরা যে চঞ্চল হিমু আপুকে দেখেছি, শেষ সময়ে ওই চঞ্চলতা পাইনি।”
হিমুর মৃত্যুর ঘটনাটি আদালতে গড়িয়েছে। আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলায় কারাগারে আছেন অভিযুক্ত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রুফি। যেহেতু এ ঘটনায় মামলা চলমান। এছাড়া হিমুর পরিবারের সদস্যরাও বেঁচে নেই, তাই তার সম্পত্তি (ফ্ল্যাট-গাড়ি) আদালতের নির্দেশেই বণ্টন হবে। এমনটাই জানিয়েছেন অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম।
গণমাধ্যমকে আহসান হাবিব নাসিম বলেন, “পুলিশের সঙ্গে এ বিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে। যেহেতু হিমুর বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই, তাই আদালত থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতেই থাকবে তার সম্পত্তি। দলিলপত্র চেক করে দেখা হবে, কোনো উইল আছে কি না। পরে আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেই মোতাবেকই সব কিছু হবে।”
লক্ষ্মীপুরে মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় সমাহিত হয়েছেন হুমায়রা হিমু। তখন গ্রামের বাড়িতে কারও সঙ্গে কথা হয়েছিল কি না জানতে চাইলে আহসান হাবিব নাসিম বলেন, “হিমুর পরিবার বলতে খালা ও খালাতো ভাই আছেন। গ্রামে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।”
এর আগে, গত ২ নভেম্বর মারা যান ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু। নিজ বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় তাকে উত্তরার আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। তখন হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন তার প্রেমিক জিয়াউদ্দিন রুফি। পরদিন র্যাবের হাতে আটক হন তিনি।