নন্দিত অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। ২০ ডিসেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে তার অভিনীত সিনেমা ‘প্রিয় মালতী’। এ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হচ্ছে নায়িকা হিসেবে। এ উপলক্ষে ১৫ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর একটি ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয় এক সংবাদ সম্মেলনের। সেখানেই নিজের ক্যারিয়ার ও সিনেমা নিয়ে কথা বলেন অভিনেত্রী। জানান, ছোট্ট করে একটা গল্প শুনিয়েছিলেন নির্মাতা। সেটাই এত ভালো লেগেছিল যে কাজের জন্য মানা করতে পারেননি। বিশেষ দিনে নিজের সব সহশিল্পী, সহকর্মী, নির্মাতাদের ধন্যবাদ জানান মেহজাবীন।
এই সংবাদ সম্মেলনের চমক হিসেবে ছিল মেহজাবীনের উপস্থাপনা। নিজের অভিনীত সিনেমার সঞ্চালনা নিজেই করলেন মেহজাবীন। মূল আয়োজনটি তিনি নিজেই পরিচালনা করেন, দেন স্বাগত বক্তব্য, আলোচনার মাধ্যমে সিনেমাটির নানা দিক তুলে ধরেন অভিনেত্রী, জানান নিজের সম্পর্কেও।
এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন নির্মাতা শঙ্খ দাশগুপ্ত, প্রযোজক আদনান আল রাজীব, অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম ও শাহজাহান সম্রাট। আয়োজনে এসেছিলেন রিজভি রিজু, আনিসুল হক বরুণ, নাদের চৌধুরী প্রমুখ।
যার নির্দেশনায় বড় পর্দায় অভিষিক্ত হচ্ছেন মেহজাবীন, সেই শঙ্খ দাশগুপ্তও নির্মাণে বহুদিন। বিজ্ঞাপন তো বটেই, হালে ওয়েব সিরিজ নির্মাণেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। ‘প্রিয় মালতী’ সিনেমার মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে বড় পর্দায় অভিষিক্ত হচ্ছেন তিনিও। জানান, মালতী চরিত্রে তিনি মেহজাবীনকেই ভেবেছিলেন এবং তাকেই পেয়েছেন।
‘প্রিয় মালতী’ যাপিত জীবনের গল্প। সিনেমায় নিম্ন–মধ্যবিত্ত লড়াকু নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন মেহজাবীন চৌধুরী। সিনেমায় তার নাম মালতী রানী দাশ। পলাশ কুমার দাশের সঙ্গে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেছিলেন তিনি। দশটা নিম্ন–মধ্যবিত্ত দম্পতির মতো সংসার জীবনের ছোট ছোট স্বপ্ন বুনছিলেন তারা। বিয়ে বার্ষিকী উপলক্ষে নৌকাতে ভাসতে ভাসতে কেক কাটা, সন্ধ্যায় একটু ঘোরাঘুরি, মালতীকে অবাক করে দিয়ে পলাশের উপহার দেয়া, স্বামী–স্ত্রীর খুনসুটি– সবকিছুই চলছিল সুন্দর ছন্দে। হঠাৎই একটি মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনায় সেই ছন্দ কাটে।
‘প্রিয় মালতী’ সিনেমার গল্পকার ও চিত্রনাট্যকার শঙ্খ দাশগুপ্ত জানান, সিনেমায় মালতী চরিত্রটি সংগ্রামের। সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানসিক সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় চরিত্রটিকে। দেশের অনেক নারীর জীবনেই এমন ঘটনা আছে। জীবন সংগ্রামের পাশাপাশি প্রচলিত কিছু নিয়মকেও প্রশ্ন করেছেন পরিচালক।
‘সিনেমার গল্পটি সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত। সত্য যেমন কঠিন, সিনেমার বিভিন্ন মুহূর্তও তেমন কঠিন ও সমস্যার। মালতীর সমস্যা–সংগ্রামগুলো শুধু তার একার না, এগুলো দেশের মানুষের সমস্যা–সংগ্রাম। মালতী চরিত্রটি একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর। বিশৃঙ্খল এই শহরে তার লড়াই করতে হয় শ্বশুরবাড়ি, সমাজ এবং ধর্মীয় রীতিনীতির বিরুদ্ধে।
অভিনেত্রী, পরিচালক ছাড়াও ফিচার ফিল্মের প্রযোজক হিসেবে অভিষিক্ত হচ্ছেন নির্মাতা–প্রযোজক আদনান আল রাজীব। নির্মাতা হিসেবেই অধিক পরিচিত তিনি। তবে প্রযোজনাতেও সিদ্ধহস্ত রাজীব। এর আগে অনেকগুলো ওটিটি কনটেন্ট প্রযোজনা করেছেন তিনি।
এবার সিনেমা প্রযোজনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রিয় মালতী’র গল্পটা এতটাই আলাদা যে, মনে হয়েছে এই সিনেমাটি হওয়া দরকার, সেই তাগিদ থেকেই সিনেমাটির সঙ্গে যুক্ত হওয়া। আর শঙ্খ এবং তার ভালো সিনেমা বানানোর প্রতি যে চেষ্টা, তা সবসময়ই আমাকে আকৃষ্ট করেছে। একজন সহকর্মী চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে, আমি মনে করি একে অপরকে সমর্থন করা এবং একসঙ্গে বেড়ে ওঠা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
আদনান আল রাজীব জানান, ‘যারা সিনেমাটি দেখবেন, তারা একটা অনুভূতি নিয়ে বের হবেন। যারা গল্পের সিনেমা পছন্দ করেন, অনেকদিন প্রেক্ষাগৃহে আসেন না, তাদের সিনেমাটি ভালো লাগবে বলে মনে করেন তিনি।’
‘প্রিয় মালতী’ সিনেমাটি এরই মধ্যে প্রদর্শিত হয়েছে কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এবং ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়াতে। মর্যাদাপূর্ণ দুই উৎসবেই অফিসিয়ালি সিলেক্ট হওয়া ‘প্রিয় মালতী’ পুরস্কার না পেলেও পেয়েছে প্রশংসা।