আমাদের জাতীয় সংগীতে আঘাত এলে আমরা তার প্রতিবাদ করবই বলে মন্তব্য করেছেন উদীচীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা দায়বদ্ধ মানুষের প্রতি। আমাদের অর্জন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যখনই কোনো আঘাত আসবে, আমরা তার প্রতিবাদ করব। আমাদের জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা কারও দানে পাওয়া নয়। লাখো শহীদের রক্তে পাওয়া এ আমাদের অর্জন। এই অর্জনকে কোনোভাবেই কলঙ্কিত করা যাবে না। যখনই কেউ মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সংগীতে আঘাত করবে। আমরা তার প্রতিবাদ করবই।’
শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীত পাশের সড়কে একসঙ্গে জাতীয় সংগীত কণ্ঠে তুলে কর্মসূচিতে অংশ নেয় উদীচী, জাতীয় খেলাঘর আসরসহ বিভিন্ন সংগঠন। সেখানে তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় সংগীত নিয়ে একটি তর্কের শুরু হয়েছে। সে তর্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছেড়ে এখন প্রাণ পাচ্ছে বাস্তব জীবনেও। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় সংগীত নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানিয়ে একযোগে জাতীয় সংগীত গাওয়ার কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
সম্প্রতি এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতকে ‘স্বাধীনতার অস্তিত্বের পরিপন্থি’ আখ্যা দিয়ে তা পরিবর্তনের দাবি জানান জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়েও। বাহাত্তরের সংবিধান ‘বৈধ নয়’ মন্তব্য করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করারও দাবি জানান সেনাবাহিনীর সাবেক এই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল।
এর প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল প্রতিবাদ জানান অনেকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সকাল ১০টায় দেশের সর্বত্র একযোগে ‘উন্মুক্ত স্থানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীত গাওয়া কর্মসূচি’হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
শুক্রবার সকালে দেশের সব জেলা ও বিদেশে উদীচীর শাখা সংসদের শিল্পী-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ একসঙ্গে এই জাতীয় সংগীত কর্মসূচি পালন করেছে বলেও জানায় সংগঠনটি। ঢাকায় কেন্দ্রীয় আয়োজনে সূচনা বক্তব্য দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। পরে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন সবাই।
এ সময় সাধারণ মানুষও শিল্পীদের সঙ্গে জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলান। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকাও উত্তোলন করা হয়। শিল্পীরা সম্মিলিত কণ্ঠে একে একে গেয়ে শোনান মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা জোগানো দেশাত্মবোধক গান ‘মাগো ভাবনা কেন’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে’ গানগুলো। সবশেষে আবারও জাতীয় সংগীত গেয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
অনুষ্ঠানে উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, “প্রগতিশীল সব আন্দোলন-সংগ্রামে উদীচী সামনে থেকেছে। যখনই দেশের ওপর, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ওপর আঘাত এসেছে– আমরা প্রতিবাদ করেছি। এবারও জাতীয় সংগীত গেয়ে এই কর্মসূচি, সেই ধারাবাহিক প্রতিবাদেরই অংশ।”
উদীচী লিখিত বক্তব্যে জানায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীতসহ এ দেশের আপামর জনসাধারণের প্রাণের সব বিষয় নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র দেখা যাচ্ছে।
গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, একটি ধর্মান্ধ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মূল সুরকে বিকৃত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এরা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার বিরোধিতা করা থেকে শুরু করে জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকার ওপর আঘাত হানতে শুরু করেছে। চক্রান্তের প্রতিবাদ এবং এর সঙ্গে জড়িতদের রুখে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে শুক্রবার সকাল ১০টায় দেশের সর্বত্র একযোগে ‘উন্মুক্ত স্থানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীত গাওয়া কর্মসূচি’ হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।