• ঢাকা
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মহানায়ক মান্নার মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪, ০৯:২৪ এএম
মহানায়ক মান্নার মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
চিত্রনায়ক মান্না। ছবি: কোলাজ

১৯৮৪ সালে বিএফডিসি আয়োজিত ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সিনেমায় অভিষেক। এরপর টাঙ্গাইলের আসলাম তালুকদার থেকে হয়ে ওঠেন চিত্রনায়ক মান্না। একে একে অভিনয় করেন প্রায় সাড়ে তিনশ সিনেমায়। আজ তার মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৮ সালের এই দিনে অসংখ্য ভক্তকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান এক সময়ের ঢালিউড কিং। মৃত্যুবার্ষিকীতে মান্নার আলোচিত ১০ সিনেমা নিয়ে প্রতিবেদন-

আম্মাজান (১৯৯৯)

মান্নার সেরা সিনেমার তালিকায় সবার ওপরেই রয়েছে এটি। নাম ভূমিকায় শবনম থাকলেও মান্না নিজস্ব অভিনয় দক্ষতায় দৃষ্টি তার দিকেই নিয়ে গেছেন। মাতৃভক্ত এক ছেলের অসাধারণ সমাজসচেতন, প্রতিবাদী ভূমিকা এ ছবির প্রাণ। পরিচালনার পাশাপাশি এর চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন কাজী হায়াৎ নিজেই। ছবিতে আরও অভিনয় করেন মৌসুমী, আমিন খান, ডিপজল, মিজু আহমেদসহ অনেকে।

যন্ত্রণা (১৯৮৮)

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই এ ছবিতে অভিনয় করেন মান্না। স্বাধীনতার পর সুবিধাবাদী শ্রেণির উত্থানে যেভাবে দেশে অরাজকতা তৈরি হয়েছিল, বেকারত্ব বেড়ে গিয়েছিল এবং এর প্রভাবে তরুণ সমাজ অপরাধের পথে পা বাড়িয়েছিলÑ তারই একটি চিত্র উঠে আসে গল্পে। মান্না ও তার বন্ধুদের বাস্তবতার কাছে পরাজয় মানতে হয় অপরাধ করতে গিয়ে। ছবির শেষটা প্যাথেটিক। এটি নির্মাণ করেন কাজী হায়াৎ।

দাঙ্গা (১৯৯১)

কাজী হায়াৎ পরিচালিত এ ছবি স্বাধীনতাপরবর্তী বাংলাদেশের অবস্থা নিয়ে নির্মিত হয়। সুবিধাবাদী নেতাদের রাজত্ব, সন্ত্রাসের করাল গ্রাস, স্বাধীন দেশে নিম্নবিত্তের পরাধীন জীবন, ধর্ষণ, খুন ইত্যাদি সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে একজন সৎ পুলিশের সংগ্রাম ছিল ছবির গল্প। এতে মান্নার অভিনয় বেশ প্রশংসিত হয়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার উপস্থাপনায় মান্নার মুখে ‘আর একটি কবিতা লিখতে পারো না কবি’ সংলাপটি ছিল সেরা এবং নির্মম বাস্তবতা।

ত্রাস (১৯৯২)

শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, কলুষিত ছাত্র-রাজনীতি, অসৎ নেতাদের সুবিধাবাদী আচরণ নিয়ে নির্মিত এ সিনেমা পরিচালনা করেন কাজী হায়াৎ। এতে অবস্থার বিপরীতে মান্না সাধারণ ছাত্র থেকে হয়ে ওঠে বিপ্লবী ছাত্রনেতা। অপরাধধর্মী গল্পের চলচ্চিত্রটি তার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের প্রধান চরিত্রের অন্যতম সফল হিসেবে বিবেচিত। বিভিন্ন চরিত্রে আরও অভিনয় করেন সুচরিতা, বুলবুল আহমেদ, রাজিব, দিলদার প্রমুখ।

দেশদ্রোহী (১৯৯৭)

অসৎ নেতারা কীভাবে নিজেদের কাজে ক্যাডারদের ব্যবহার করে এবং সুবিধা শেষ হলে ছুড়ে ফেলে দেয়Ñ তারই একটা নমুনা দেখানো হয় এ ছবিতে। মান্না মস্তানের চরিত্রে অভিনয় করেন। সুবিধাবাদী নেতা রাজিবকে উচিত শিক্ষা দিতে গিয়ে দেশদ্রোহী বানানো হয় তাকে। ফাঁসির আসামি করা হয়। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে জনগণের উদ্দেশে তার বক্তব্য ছিল পর্দা কাঁপানো। ছবিটি নির্মাণ করেন কাজী হায়াৎ।

লুটতরাজ (১৯৯৭)

কাজী হায়াৎ পরিচালিত আরেকটি জনপ্রিয় সিনেমা। সন্ত্রাস, কালোবাজারি, আইনের বাস্তবতার মতো বিষয়গুলোকে এত নিখুঁতভাবে ছবিতে দেখানো হয়েছে যে, কমার্শিয়ালি অনেকে এটিকে মাস্টারপিস বলে থাকেন। এ ছবিতেও নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সঙ্গে মান্না অসাধারণ অভিনয় করেন। আইনের ফাঁকফোকর নিয়েও মাথা উঁচু করে কথা বলতে দেখা যায় তাকে।

তেজী (১৯৯৮)

কাজ না পাওয়া বেকার এক ছেলেকে সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেখা যায় এ সিনেমার গল্পে। তার মনের মধ্যে যে সাহস, সেটা ছিল ছবির নামের পরিপূরক। তেজী, সাহসী সাধারণ ছেলেটিকে নেতারা কাজে লাগাতে চায়। বিভিন্ন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে ডিপজলের মোকাবিলা করে মান্নাকে আবার নতুন জীবন শুরু করতে হয়। ছবিটি পরিচালনা করেন কাজী হায়াৎ।

ধর (১৯৯৯)

অনেকের মতে, নির্মাণের জন্যই এ সিনেমা মাস্টারপিস পর্যায়ের। সমাজে টোকাই পরিচয় থেকে উঠে আসা ভাসমান একটি ছেলে ঠোকর খেতে খেতে কীভাবে সন্ত্রাসের পথে পা বাড়ায়Ñ সেটাই ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে। ডিপজলের গ্রুপে ঢোকার পর মান্নার অপরাধী জীবন শুরু হয়। সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের আর্তনাদ তুলে ধরেন। পুরো ছবিতে একটা জমজমাট আবহ আছে এবং মান্নাই তার কেন্দ্রবিন্দু।

উত্তরের খেপ (২০০০)

শাহজাহান চৌধুরী পরিচালিত এ সিনেমা শওকত আলীর উপন্যাস থেকে নির্মিত। ডিভোর্সি দুজন মানুষ মান্না ও চম্পার বেদনাময় জীবনযাপনের করুণ গল্প এতে উঠে এসেছে। মান্না এতে একটা ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে অভিনয় করে গেছেন। দরাজ কণ্ঠে যার এত দখল, সেই তাকেই ছবিটিতে শান্ত অভিনয় করতে দেখা গেছে এবং তা অসাধারণ ছিল। অনেকে এই সিনেমাকে মান্নার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা বলে আখ্যায়িত করেন।

কষ্ট (২০০০)

ছোটবেলায় করুণ বাস্তবতায় পড়ে মা-বাবা হারানো একটি ছেলে বড় হওয়ার পর প্রতি মুহূর্তে একটা ভয়ের মধ্যে বাস করে। ছবিতে কিছুটা সাইকো ক্যারেক্টার ছিল মান্নার। মৌসুমীকে বিয়ের পর সবসময় আগলে রাখতে চায় পাগলামি করে। গল্পে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল এটা, যখন নিজের ভেতরের কষ্টের কথা মৌসুমী-শাকিলকে বলে মান্না। সব মিলিয়ে বেশ চমৎকার একটি সিনেমা। নির্মাণ করেন কাজী হায়াৎ।

 

 

Link copied!