বিশ্বের যে কোনো দেশের রাজনীতি নিয়ে কত শত সিনেমা তৈরি হয়। সেসব সিনেমায় উঠে আসে নির্বাচনের প্রসঙ্গও। তবে শুধু নির্বাচন কেন্দ্রিক সিনেমা কমই দেখা যায়। তাও যদি হয় সেটা বিশ্বমোড়ল খ্যাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন, তাহলে কৌতুহল বেড়ে যেতে পারে।
ইতোমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াই করছেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অনেক অঞ্চলে ভোটগ্রহণ চলছে। ফলাফল এখনও পাওয়া যায়নি। তবে ফলাফল পাওয়ার আগেই দেখে নিতে পারেন মার্কিন নির্বাচন নিয়ে দশটি আলোচিত সিনেমা। যেসব সিনেমায় উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের নানা দিক।
স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন: ঠিক ট্রাম্পের মতোই এক ধনকুবের রিপাবলিকান প্রার্থীর গল্প নিয়ে নির্মিত সিনেমা। যিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ১৯৪৮ সালে মুক্তি পাওয়া ফ্রাঙ্ক কাপরার এই সিনেমা সমালোচকদের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। এতে প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেন স্পেনসার ট্রেসি ও ক্যাথেরিন হেপবার্ন।
দ্য বেস্ট ম্যান: মার্কিন নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া ও পেছনের গল্প নিয়ে একটি নাটক অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটি নির্মিত হয় ১৯৬০ সালে। আর মুক্তি পায় ১৯৬৪ সালে। ফ্রাঙ্কলিন জি সাফনারের এ সিনেমায় অভিনয় করেন হেনরি ফন্ডা, ক্লিফ রবার্টসন ও লি ট্রেসি।
অল দ্য প্রেসিডেন্টস মেন: ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি কীভাবে রিচার্ড নিক্সনকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে, সেই কাহিনিই এই সিনেমায় তুলে এনেছেন অ্যানা জে পাকুলা। দুই অনুসন্ধানী সাংবাদিক কার্ল বার্নস্টেইন ও বব উডওয়ার্ডের লেখা বই অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। পর্দায় এই দুই সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করেন ডাস্টিন হফম্যান ও রবার্ট রেডফোর্ড। সমালোচকেরা মনে করেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেন জরুরি, তা দারুণভাবে উঠে এসেছে এ সিনেমায়। ছবিটি ১৯৭৬ সালে মুক্তি পায়।
দ্য ওয়ার রুম: এটা ক্রিস হেগেডাসের তথচিত্র। যা ১৯৯৩ সালে অস্কারে মনোনীত হয়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। ১৯৯২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বিল ক্লিনটনের প্রচারণাই ছিল যে তথ্যচিত্রের বিষয়বস্তু।
দ্য আমেরিকান প্রেসিডেন্ট: জনপ্রিয় এক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিপত্নীক। তিনি আবারও নির্বাচনে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে প্রেমে পড়েন এক পরিবেশবাদীর। এরপরের ঘটনা নিয়েই গল্প। যা নিয়ে তৈরি হওয়া সিনেমাটি বিপুল ব্যবসায়িক সাফল্যের সঙ্গে সমালোচকদের প্রশংসাও পায়। এতে প্রেসিডেন্ট চরিত্রে অভিনয় করেন মাইকেল ডগলাস। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটি পরিচালনা করেন রব রেইনার। ডগলাস ছাড়াও অভিনয় করেন অ্যানেট বেনিং, মার্টিন শিন।
ওয়াগ দ্য ডগ: মার্কিন নির্বাচনের ঠিক আগে এক যৌন কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেওয়ার ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয় সিনেমাটি। আদতে রাজনৈতিক বিদ্রূপাত্মক এই সিনেমা মুক্তি পায় ১৯৯৭ সালে। সমালোচকদের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত সিনেমাটিতে প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেন ডাস্টিন হফম্যান ও রবার্ট ডি নিরো। ২০২০ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের কতা সর্বকালের সেরা রাজনৈতিক সিনেমার তালিকায় এই সিনেমা ছবি ১২ নম্বরে।
প্রাইমারি কালারস: বিল ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে ১৯৯২ সালে নির্মিত হয়েছিল এই সিনেমা। মাইক নিকোলাসের কমেডি-ড্রামা এই সিনেমা জো ক্লেইনের লেখা ‘প্রাইমারি কালারস: আ নভেল অব পলিটিকস’ উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি করা হয়। অস্কারে দুই মনোনয়ন পাওয়া এ ছবিতে অভিনয় করেন জন ট্রাভেলটা, এমা থম্পসন, ক্যাথি বেটস প্রমুখ। সমালোচকদের কাছে সমাদৃত হয় সিনেমাটি। বেশিরভাগ সমালোচকদের মতে মার্কিন রাজনীতিতে কী হয়, সেটা এ ছবিতে ভালোভাবে উঠে এসেছে। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৮ সালে।
জার্নিস উইথ জর্জ: অ্যালেক্সান্দ্রা পেলোসি ও অ্যারন লুবারস্কির আলোচিত এই তথ্যচিত্রটি মুক্তি পায় ২০০৩ সালে। এটি নির্মিত হয়েছে ২০০০ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের দীর্ঘ নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে।
হেড অব স্টেট: ২০০৩ সালে এ ছবিটি দিয়েই পরিচালনায় অভিষেক হয় কৌতূকশিল্পী, অভিনেতা ক্রিস রকের। কমেডি ঘরানার এ ছবিতে ক্রিস রক অভিনয়ও করেছেন। প্রচারণার মধ্যে মারা যান এক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। তখন বিকল্প হিসেবে বেছে নেওয়া হয় এমন একজনকে, যার কথা প্রায় কেউই ভাবেননি। এরপর কী হয়, তা নিয়েই এগিয়েছে গল্প।
দ্য আইডিয়াজ অব মার্চ: জর্জ ক্লুনি বরাবরই রাজনৈতিক নানা বিষয় নিয়ে সোচ্চার। এবারের নির্বাচনে জর্জ ক্লুনি সরাসরিই কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করেছেন। তিনি ২০১১ সালে এই পলিটিক্যাল ড্রামা বানান। সিনেমাটির গল্পের শুরু স্টিফেন মেয়ার্সকে নিয়ে। যিনি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মাইক মরিসের জুনিয়র ক্যাম্পেইন ম্যানেজার। মাইককে একটি বড় রাজনৈতিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ফেলেন তিনি। যা প্রার্থীকে বড় বিপদে ফেলে দেয়। এরপর কী হয়, তা নিয়েই এগিয়েছে গল্প।
সিনেমাটিতে ক্লুনি ছাড়াও অভিনয় করেন রায়ান গসলিং, পল জিয়ামাটি, ইভান র্যাচেল উড। বক্স অফিসে সাফল্যের সঙ্গে অস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কারে মনোনীত হয় এই ছবি। প্রদর্শিত হয় প্রথম সারির চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে। সূত্র: বিবিসি