• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

‘বাংলার গ্যালিলিও’ চলে যাওয়ার দুই বছর আজ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২২, ০৩:৩৮ পিএম
‘বাংলার গ্যালিলিও’ চলে যাওয়ার দুই বছর আজ

মঞ্চপ্রিয় মানুষের কাছে তিনি ‘বাংলার গ্যালিলিও’, টিভি দর্শকের হৃদয়ে ‘বড় চাচা’। এগুলো সেই কাগুজে চরিত্র, যেগুলোকে তিনি নিপুণ অভিনয়শৈলিতে জীবন্ত করে তুলেছেন। যার মাধ্যমে দর্শক-মনে পোক্তভাবে গেঁথে গেছেন তিনি। ফলে দিন-মাস পেরিয়ে বছর যায়, দশক থেকে যুগ যায়, কিন্তু তিনি ও তার চরিত্রেরা ঘুরে বেড়ান এ তল্লাটের মানুষের ভেতরে, অন্তরের গহীনে।

মুগ্ধতার স্থায়ী আবেশ ছড়িয়ে যাওয়া সেই মানুষটির নাম আলী যাকের। বাস্তবিক দৃষ্টিতে তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ক্যানসারের কাছে হার মেনে দু’বছর আগে ইতি টানেন বর্ণিল জীবনের। কিন্তু দেশের শিল্পজগতে তার উপস্থিতি, অস্তিত্ব চিরকালের। ব্যক্তি হিসেবে নশ্বর জীবন কাটিয়ে গেলেও কাজের ভুবনে, মঞ্চে ও নাটকের পর্দায় তিনি অবিনশ্বর।



রোববার (২৭ নভেম্বর) আলী যাকেরের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। ২০২০ সালের এই দিনে তিনি মারা গিয়েছিলেন।

ঢাকার সংস্কৃতি পাড়া মাতিয়ে রাখা আলী যাকেরের জন্ম চট্টগ্রামের রতনপুরে, ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর। বাবার চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শৈশব কেটেছে তার। তবে শিক্ষাজীবনের বড় ধাপ থেকে পেশাজীবন, সব ঢাকাতেই। সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, নটর ডেম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক লাভ করেন।

আলী যাকের নিজেকে শুধু পড়াশোনায় আটকে রাখেননি। জড়িয়ে পড়েন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। দেশ স্বাধীনের লড়াইয়েও ছিলেন সক্রিয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক ছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালে ‘আরণ্যক’ নাট্যদলে যোগ দেন আলী যাকের। এই দলের হয়ে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় মুনীর চৌধুরী রচিত ‘কবর’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেছিলেন তিনি।

তবে বেশিদিন ‘আরণ্যক’-এ থাকেননি আলী যাকের। ১৯৭২ সালের জুন মাসেই তিনি যুক্ত হন ‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়’-এ। এই দল থেকেই তার উত্থান। একে একে ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’, ‘বাকি ইতিহাস’, ‘সৎ মানুষের খোঁজে’, ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’, ‘কোপেনিকের ক্যাপ্টেন’, ‘গ্যালিলিও’, ‘ম্যাকবেথ’সহ অনেক আলোচিত মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন তিনি, পাশাপাশি নির্দেশক হিসেবেও কামিয়েছিলেন নাম।

টিভি নাটকেও আলী যাকেরের অভিনয় কালজয়ী হয়ে আছে। ‘আজ রবিবার’, ‘বহুব্রীহি’, ‘তথাপি’, ‘পাথর দেয়াল’সহ অসংখ্য নাটক তার অভিনয়ে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। লেখক হিসেবেও নিজেকে উপস্থাপন করেছিলেন গুণী এই ব্যক্তি। তার লেখা বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘সেই অরুণোদয় থেকে’, ‘নির্মল জ্যোতির জয়’ প্রভৃতি।

সিনেমার পর্দায় অবশ্য সেভাবে পাওয়া যায়নি আলী যাকেরকে। তার নামের পাশে মোটে চারটি ছবির নাম- ‘আগামী’, ‘নদীর নাম মধুমতী’, ‘লালসালু’ ও ‘রাবেয়া’। তবে এই অভিনেতার আরেকটি বড় সফলতা বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন তরঙ্গে। কারণ, তার হাত ধরেই গড়ে উঠেছে দেশের প্রধানতম বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক।

শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হয়েছিলেন আলী যাকের। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদক এবং মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে আলী যাকের বিয়ে করেছেন অভিনেত্রী সারা যাকেরকে। নন্দিত এই দম্পতির দুই সন্তান, পুত্র ইরেশ যাকের ও কন্যা শ্রিয়া সর্বজয়া।
 

Link copied!