• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮ ফাল্গুন ১৪৩০, ২৩ শা'বান ১৪৪৬

দুই কিংবদন্তির চলে যাওয়ার দিন আজ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫, ০১:০৯ পিএম
দুই কিংবদন্তির চলে যাওয়ার দিন আজ
গোলাম মুস্তাফা ও এটিএম শামসুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

দেশের সিনেমার দুই কিংবদন্তি অভিনেতার চলে যাওয়ার দিন আজ। ঠিক এই দিনে তারা চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে। আর চলচ্চিত্রকে ফেলে গেছেন এক বিশাল শূন্যতার মাঝে।

অভিনেতা গোলাম মুস্তাফা

২০০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি চলে গেছেন দুনিয়ার রঙ্গমঞ্চ ছেড়ে। গোলাম মুস্তাফা ১৯৩৫ সালের ২ মার্চ বরিশাল জেলার পিরোজপুর মহাকুমায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকায় আসেন পঞ্চাশের দশকের মধ্য সময়ে। বেতারের অভিনেত্রী হোসনে আরার সঙ্গে ভালোবেসে ১৯৫৮ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ব্যক্তিজীবনে তিনি ২ কন্যার জনক। 

তার জ্যেষ্ঠ কন্যা সুবর্ণা মুস্তাফা দেশবরেণ্য অভিনেত্রী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে বরিশাল অশ্বিনী কুমার টাউন হল মঞ্চে বিডি হাবিবুল্লাহ রচিত ‘পল্লীমঙ্গল’ নাটকে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। একই বছর বরিশাল জিলা স্কুলে ফাতেহা ইয়াজদাহম উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘ঐ নাম’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন এবং আবৃত্তিকার হিসেবে তিনি দর্শকদের নজর কাড়েন। গোলাম মুস্তাফা পঞ্চাশের দশকের মধ্য সময়ে ঢাকায় আসেন এবং নাট্যাভিনয় শুরু করেন। তিনি প্রথমে চিত্রজগতে আসেন প্রামাণ্যচিত্র ‘এক একর জমি’তে অভিনয়ের মাধ্যমে। 

প্রথম অভিনীত সিনেমা এহতেশাম পরিচালিত ‘রাজধানীর বুকে’। তিনি নায়ক, সহায়ক, খলনায়কসহ বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন। বাংলা ও উর্দু মিলে প্রায় তিনশ চলচ্চিত্রে নায়ক, সহনায়ক, খলনায়কসহ বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী এই অভিনেতা। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য বাংলা চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে সীমানা পেরিয়ে, তিতাস একটি নদীর নাম, পদ্মা নদীর মাঝি, এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী, শুভদা, শ্রাবণ মেঘের দিন, ধীরে বহে মেঘনা, চন্দ্রনাথ, দেবদাস ইত্যাদি। 

অনেক বিজ্ঞাপনচিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। তবে তিনি অভিনয়জীবনে খলনায়ক হিসেবেই বেশি সফল হয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হারানো দিন’ ছবিতে মদ্যপ জমিদারের ভূমিকায় তার অভিনয়ের কথা অনেকের স্মৃতিতে এখনও অমলিন। গোলাম মুস্তাফা ১৯৮০ সালে এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্বচরিত্র অভিনেতা এবং ১৯৮৬ সালে শুভদা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। চলচ্চিত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০০১ সালে একুশে পদক সম্মানে ভূষিত হন। তিনি বাচসাস পুরস্কারও লাভ করেন। ২০০৩ সালে তার মৃত্যুর পর থেকে প্রতিবছর ‘গোলাম মুস্তাফা স্মরণ ও একুশের প্রথম প্রহর’ উদযাপন করে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ।

অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান

আরেক কিংবদন্তি এবং বহু গুণের অধিকারী এটিএম শামসুজ্জামানও ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালে চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। দেশজুড়ে তার পরিচিতি একজন সু-অভিনেতা হিসেবে। কিন্তু এই একটি পরিচয়ে সীমাবদ্ধ ছিলেন না তিনি। নির্মাণ করেছেন চিত্রনাট্য, লিখেছেন নাটক এবং সাহিত্য অঙ্গনেও রেখেছেন তার মুনশিয়ানার ছাপ। নন্দিত এই অভিনয়শিল্পীর পুরো নাম আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান। ইচ্ছা ছিল লেখক হবেন। কিন্তু লিখতে গিয়ে ঘটনাক্রমে জড়িয়ে পড়েন অভিনয়ে। আর এই ভুবনই তাকে দিয়েছে খ্যাতি, জনপ্রিয়তা। প্রায় ছয় দশক মিশে ছিলেন শোবিজে। 

অভিনয়ের মাধ্যমে কখনও দর্শককে হাসিয়েছেন, কখনও আপ্লুত করেছেন, কখনও আবার ভয় ধরিয়েছেন ভিলেন হয়ে। সব চরিত্রেই নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। এর বাইরে শতাধিক সিনেমার কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। লিখেছেন নিজের আত্মজীবনীও, যেটার নাম ‘শিল্প সংস্কৃতি ও আমার শিল্পী জীবন’। 

এটিএম শামসুজ্জামানের জন্ম ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীতে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন জগন্নাথ কলেজে। ১৯৬১ সালে উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে রুপালি জগতে কাজ শুরু করেন তিনি। অভিনয়ের শুরুটা হয় ‘নয়া জিন্দেগানি’ নামের একটি ছবির মাধ্যমে। তবে সেটি মুক্তি পায়নি। এটিএমকে প্রথম পর্দায় দেখা যায় ১৯৬৮ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘এতটুকু আশা’ সিনেমায়। এক খবরের কাগজ বিক্রেতার ভূমিকায় হাজির হন তিনি। সেই ছোট্ট চরিত্র থেকে নাটক-সিনেমার অন্যতম দাপুটে অভিনেতায় প্রতিষ্ঠিত হন গুণী এই শিল্পী।

 এটিএম শামসুজ্জামান অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমা হলোÑ ‘ওরা ১১ জন’, ‘লাঠিয়াল’, ‘নয়নমণি’, ‘অশিক্ষিত’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘দোলনা’, ‘ম্যাডাম ফুলি’, ‘চুড়িওয়ালা’, ‘হাজার বছর ধরে’, ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘মন বসে না পড়ার টেবিলে’, ‘গেরিলা’, ‘চোরাবালি’ ইত্যাদি। টিভি নাটকেও অনন্য এটিএম। বহু ধারাবাহিক ও একক নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। 

এর মধ্যে কালজয়ী কয়েকটি নাটক হলোÑ ‘রঙের মানুষ’, ‘ভবের হাট’, ‘ঘরকুটুম’, ‘নোয়াশাল’, ‘শীল বাড়ি’ ইত্যাদি। শিল্পকলায় অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন এটিএম শামসুজ্জামান। এ ছাড়া বর্ণাঢ্য সিনে জীবনে ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। একই আয়োজনে পেয়েছেন আজীবন সম্মাননাও।

Link copied!