দেশের সিনেমার প্রথম স্টাইল আইকন। তিনি জাফর ইকবাল। তাকে বলা হয় চিরসবুজ নায়ক। সময়ের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে ছিলেন তিনি। তার ফ্যাশন ধারণা অবাক করে দিয়েছিল আশির দশকের তরুণ-তরুণীদের। সিনেমার নায়কদের জন্য তিনি দেখিয়েছেন নতুন পথ। যার ফলে তাকে বলা হয়রোমান্টিক কিংবা কোনো টগবগে রাগী তরুণের ভূমিকায় অভিনয় করে দর্শকদের হৃদয় জয় করা এই অভিনেতার চলে যাওয়ার দিন আজ। ১৯৯২ সালের ৮ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
জাফর ইকবালের জন্ম ১৯৫০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায়। তবে তার পৈতৃক নিবাস সিরাজগঞ্জে। জাফর ইকবালের বেড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক পরিবারে। তার বড় ভাই আনোয়ার পারভেজ ছিলেন দেশের খ্যাতিমান সংগীত পরিচালক। এছাড়া তার ছোট বোন দেশবরেণ্য কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ। ভাই-বোনের মতো জাফর ইকবালও গান দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। গায়ক হিসেবে তিনি অসাধারণ প্রতিভাবান ছিলেন।
১৯৬৬ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে বন্ধু তোতা, মাহমুদ ও ফারুককে নিয়ে একটি ব্যান্ড গঠন করেছিলেন জাফর ইকবাল। সে ব্যান্ডের নাম ছিল ‘রোলিং স্টোন’। এরপর ভাই আনোয়ার পারভেজের হাত ধরে প্লে-ব্যাক গায়ক হিসেবে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন জাফর ইকবাল। তার গাওয়া প্রথম প্লেব্যাক ছিল ‘হয় যদি বদনাম হোক আরও’। সেই সময় গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
যার সুবাদে বহু সিনেমায় গান করেছিলেন জাফর ইকবাল। কিংবদন্তি সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী তাকে দিয়ে অসংখ্য সিনেমায় গান করিয়েছিলেন। জাফর ইকবালের গাওয়া কালজয়ী তিনটি গান হচ্ছে—‘সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী’, ‘তুমি আমার জীবন, আমি তোমার জীবন’, ‘এক হৃদয়হীনার কাছে হৃদয়ের দাম কী আছে’ এবং ‘হয় যদি বদনাম হোক আরও’। এছাড়া তিনি ‘কেন তুমি কাঁদালে’ শিরোনামে একটি অডিও অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলেন।
জাফর ইকবাল নায়ক হিসেবে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৬৯ সালে। সিনেমার নাম ‘আপন পর’। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন কবরী। তবে জাফর ইকবালের সঙ্গে ববিতার জুটি সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছিল। তারা একসঙ্গে প্রায় ৩০টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
জাফর ইকবাল ক্যারিয়ার শুরু করার এক বছর পরই দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। সেই দুঃসময়ে তিনি বসে থাকেননি। তিনি অংশ নিয়েছিলেন যুদ্ধে। বীর যোদ্ধা হিসেবে স্বাধীন করেছেন দেশ।
স্বাধীনতার পর জাফর ইকবাল পুনরায় সিনেমায় নিয়মিত হন। তবে তার ক্যারিয়ারে উল্লেখযোগ্য প্রথম সাফল্য আসে ১৯৭৫ সালে ‘মাস্তান’ সিনেমা দিয়ে। এই সিনেমা তাকে প্রথম সারির জনপ্রিয় নায়কে পরিণত করে।
বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে জাফর ইকবাল দেড় শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে—‘বাঁদি থেকে বেগম’, ‘সুর্য সংগ্রাম’, ‘দিনের পর দিন’, ‘অংশীদার’, ‘মেঘ বিজলী বাদল’, ‘আশীর্বাদ’, ‘মর্যাদা’, ‘নয়নের আলো’, ‘মিস লংকা’, ‘প্রেমিক’, ‘অপেক্ষা’, ‘যোগাযোগ’, ‘অবুঝ হৃদয়’, ‘বদনাম’, ‘গর্জন’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’ ও ‘অবদান’ ইত্যাদি।
পারিবারিক জীবনে নায়ক জাফর ইকবাল সোনিয়া নামে একজনকে বিয়ে করেছিলেন। তাদের দুই সন্তান রয়েছে।