চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের কাছে এক বিস্ময়ের নাম ঋত্বিক ঘটক। আজ শনিবার (৪ নভেম্বর) নন্দিত এই চলচ্চিত্র নির্মাতার ৯৮তম জন্মদিন।
উল্কার মতোই জ্বলে ওঠে ধুপ করে নিভে যাওয়া এক খ্যাপা শিল্পস্রষ্টা ঋত্বিক ঘটক। চলচ্চিত্র পাগল এক মানুষ ছিলেন তিনি। ঋত্বিক সিনেমা নির্মাণ করতেন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। নিজের বক্তব্য মানুষের কাছে পৌঁছানোর। কখনও খ্যাতি কিংবা পুরস্কারের কাছে মাথা নত করেননি।
১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকার ঋষিকেশ দাশ লেনে জন্মগ্রহণ করেন ঋত্বিক ঘটক। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তার পরিবারের সঙ্গে তিনি কলকাতায় চলে যান। তবে নিজের জন্মভূমি ত্যাগ করে শরণার্থী হওয়ার মর্মবেদনা ঋত্বিক কোনো দিন ভুলতে পারেননি এবং তার জীবন-দর্শন নির্মাণে এই ঘটনা ছিল সবচেয়ে বড় প্রভাবক, যা পরবর্তীকালে তার সৃষ্টির মধ্যে বারবার ফুটে উঠেছে।
মাত্র ৫১ বছরের জীবদ্দশায় ঋত্বিক কুমার ঘটক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পেরেছিলেন ৮টি। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, তথ্যচিত্র এবং প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন ১০টি। আরও অনেকগুলো কাহিনীচিত্র, তথ্যচিত্রের কাজে হাত দিয়েও শেষ করতে পারেননি। এই হাতে গোনা কয়েকটি চলচ্চিত্র দিয়েই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকারদের কাতারে নিজের স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি।
ষাটের দশকে স্বল্প সময়ের জন্যে পুনেতে বসবাস করতে শুরু করেন ঋত্বিক। ১৯৬৫ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীকালে সেখানকার ভাইস-প্রিন্সিপালও হন। সেখানে থাকা অবস্থায় তিনি শিক্ষার্থীদের নির্মিত দুটি চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত ছিলেন।
এরও প্রায় এক যুগ পর ১৯৭২ সালে আবার চলচ্চিত্রে ফেরেন ঋত্বিক। এ সময় তিনি অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ন করেন।
তবে এ সবকিছুই থেমে যায় ১৯৭৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। মাত্র ৫০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম এ ধ্রুবতারা। সারাজীবন তিনি কাজ করেছেন নিজের তাড়নায়। জনপ্রিয়তার মোহে তিনি চলচ্চিত্র তৈরি করেননি, কাজ করেছেন নিজের মতো করে। চলচ্চিত্রপ্রেমী বাঙালির মানস্পটে অসাধারণ সব সিনেমার রূপকার হিসেবে তিনি চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।