• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
শনিবার বিকেল

‘হলি আর্টিজানে সেদিন একটি টেবিল আমাদের নামে বুকিং ছিল’


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩, ১০:৪২ এএম
‘হলি আর্টিজানে সেদিন একটি টেবিল আমাদের নামে বুকিং ছিল’

চার বছর ধরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে আটকে আছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’। ঢাকার বহুল আলোচিত হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ছবিটি বানিয়েছেন তিনি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ছবিটিকে ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা দেয় সেন্সর বোর্ড! বছরের পর বছর যায়, ফারুকী ও সতীর্থরা নানাভাবে আবেদন করে যাচ্ছেন, কিন্তু ফল কিছুই হয় না।

বিপরীতে একই ঘটনার রেশ ধরে নির্মিত বলিউডের ‘ফারাজ’ মুক্তি পাচ্ছে ৩ ফেব্রুয়ারি। ফারুকীর দাবি, এই ছবিটির আগেই যেন তার ছবিটি মুক্তি দেওয়া হয়। অনেকটা একই দাবি নিয়ে স্মৃতিকাতর তরুণ নায়িকা জাহারা মিতু। ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি জানান, হলি আর্টিজান বেকারিতে যেদিন (২০১৬ সালের ১ জুলাই) হামলাটি হয় সেদিন তার জন্য একটি টেবিল বুকিং ছিল। সেদিন যদি তিনি মাঝপথে বাসায় না নেমে যেতেন, তবে তিনি হয়তো মারা যেতেন।  

এ প্রসঙ্গে মিতু তার ফেসবুকে এ নিয়ে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন। মিম লিখেন, “হলি আর্টিজানের একটি টেবিল সেদিন আমাদের নামে বুকিং ছিল। হলি আর্টিজানের ঘটনার দিন আমি ইসলাম গ্রুপে কর্মরত ছিলাম। ডেনমার্ক থেকে সেদিন বেস্টসেলার এর জেডিওয়াই ব্র্যান্ড ম্যানেজার পারনিল এবং ক্রিসটিন এসেছি ফ্যাক্টরি ভিজিট করতে। একেতো রোজার মাস, তার উপর এতোগুলো ফ্লোরে ভিজিট এবং সারাদিন মিটিং করার পর শরীর আর চলছিল না। রোজায় ধরা যাকে বলে, আমার অবস্থা ঠিক যেন তাই। আমি, মার্চেন্ডাইজিং ম্যানেজার আমিনুর ভাই এবং বায়ার দুজন মিটিং শেষ করে আশুলিয়ার জামগড়া থেকে একটি প্রাইভেট কারে রওনা দিলাম গুলশানের উদ্দেশ্যে। গন্তব্য হলি আর্টিজান। আগে থেকেই আমাদের নামে টেবিল বুকিং দেওয়া ছিল। ওখানকার ফ্রেঞ্চ ব্রেড আমাদের ইউরোপীয়ান বায়ারদের খুব পছন্দের ছিল।”

আভিনেত্রী আরও লিখেন, “কিছুদূর যাবার পর আমার পেটে ব্যথা শুরু হলো। আমিনুর ভাইয়ের কানে কানে বললাম, আজ আমার না গেলে হয় না? উনি বললেন, ‘স্যার তো রাগ করতে পারে। দায়িত্ব তো আপনার’।”

মিতু লিখেন, “জানিনা আমার সেই গলার স্বর পারনিল বুঝতে পেরেছিল কিনা, সে বললো আজ আর আমরা বাহিরে না বসি। হোটেল থেকেই কিছু একটা অর্ডার করে খেয়ে নিবো। সে যাত্রায় এভাবেই আমাদের রক্ষা। আমি নেমে গেলাম উত্তরা আমার বাসার সামনে। ইফতার করে, মোবাইল চার্জে দিয়ে নামাজ না পড়েই ঘুমিয়ে গেলাম। যখন ঘুম ভাঙলো তখন দেখি আমার ছোটবোন আমাকে জড়িয়ে ধরে চিল্লাপাল্লা শুরু করেছে। এতোগুলো ফোন দেয়ার পরও ফোন ধরিনি কেন। ও ফিরছিল নিউমার্কেট থেকে। বনানীতে সব গাড়ি আটকে দেয়ায়, ও বনানী থেকে উত্তরা এসেছিল প্রচুর কষ্টে। আমি বাসায় নাকি গুলশান খোঁজ নেয়ার জন্য। আব্বু-আম্মু তখন চট্টগ্রাম থাকতো। আমি আর সেতু ঢাকায়। এখনও ভাবি যদি সত্যিই ওখানে সেদিন যাওয়া হতো! আমি কি বেঁচে থাকতাম? আমি আর আমিনুর ভাই দোয়া পড়ি, হয়তো দয়া করে ছেড়ে দিলেও দিতো, বায়ার দুজন কি বাঁচতো?”

এর পরে কোনো রেস্টুরেন্ট তার নিরাপদ মনে হয়না উল্লেখ্য করে মিতু লিখেন, “এই ঘটনার পর থেকে কোনো রেস্টুরেন্টে বসে থাকা আমার কাছে সেইফ মনে হয় না। আমি খুব আতঙ্কে থাকি রেস্টুরেন্টে গেলে, একটা মানসিক ট্রমা বলা যেতে পারে। এখন লিখতে অনেক সহজ লাগে, তখন কিভাবে দিনকাল কাটিয়েছি আমি জানি। যেই ঘটনার প্রত্যক্ষ ছাপ আমার জীবনে রয়েছে, সেই ঘটনা নিয়ে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে ছবি অবশ্যই আমরা দেখতে চাই। ভালো লেগেছে ফারাজ এর মতন ন্যাশনাল হিরোকে নিয়ে যখন অন্য ইন্ডাস্ট্রি ছবি বানায়, তবে এটাও ভালো লাগবে যদি সেই সঙ্গে ‘শনিবার বিকেল’ টাও আমরা দেখতে পারি। ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তি পাক, যদি কোনো সংশোধনের জায়গা থাকে, তবে সেটাও করা হোক।”

মিতু অভিনীত ‘জয়বাংলা’ সিনেমাটি গতবছরের শেষ শুক্রবার সারা দেশে মুক্তি পায়। এছাড়া মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তার একাধিক সিনেমা।

 

Link copied!