জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এবারের আয়োজনে ১০টি ভিন্ন ভিন্ন বিভাগে ৭৫টি দেশের ২০৩টি চলচ্চিত্র দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল।
রোববার(১৯ জানুয়ারি) উৎসবের সমাপনী আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় `জলতরঙ্গ` ড্যান্স গ্রুপের পরিবেশনায়। পরে একে একে জুরি সদস্যরা বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার ঘোষণা করেন। সমাপনী চলচ্চিত্র হিসেবে দেখানো হয় ইকবাল এইচ চৌধুরী পরিচালিত ‘বলী’।
পুরস্কারের নাম ঘোষণা হতেই দেখা যায় কেউ কেউ আবেগে কেঁদে ফেলেন, আবার কারো চোখে খুশির ঝিলিক। উৎসবে শ্রেষ্ঠ শিশু চলচ্চিত্রে ‘বাদল রহমান পুরস্কার’ বিজয়ী হয়েছে মাইকেল লুকাচেভস্কি পরিচালিত রাশিয়ার সিনেমা ‘কিতালিকতাখ কিরদালিম’ (হোয়্যার দ্য হোয়াইট ক্র্যান্স ড্যান্স)।
বিশেষ অডিয়েন্স পুরস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র হয়েছে জোসেলিত অলতারেজোস নির্মিত ফিলিপাইনের সিনেমা ‘গুয়ার্দিয়া দ্য অনর’ (দ্য গার্ডিয়ান অব অনর)। সেরা অডিয়েন্স পুরস্কার জয়ী চলচ্চিত্র হয়েছে সৃজিত মুখার্জি পরিচালিত ভারতের সিনেমা ‘পদাতিক’।
উইমেন ফিল্মমেকারস সেকশনে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে ক্লাভদিয়া কোরশুনোভা পরিচালিত সিনেমা তাকোই ইমেনো ডেন (নট জাস্ট অ্যানি ডে)। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছেন দুটি দেশ মলডোভা ও রাশিয়া। সেরা শর্ট ফিল্ম পুরস্কার পেয়েছে মারিয়া বোবেভা নির্মিত বুলগেরিয়ার সিনেমা `স্কারলেট`।
সেরা ফিচার ফিল্ম পুরস্কার পেয়েছে ফ্রান্সের সিনেমা ‘কুমভা’ (হুইচ কাম ফ্রম সাইলেন্স), যার পরিচালক সারাহ মালেগোল। সেরা পরিচালক পুরস্কার পেয়েছে আগুস্টিনা সানচেজ গ্যাভিয়ের। সিনেমার নাম ‘নুয়েস্ত্রা সোমব্রা’ (আওয়ার ওউন শেডো)। সিনেমাটি আর্জেন্টিনা ও জার্মানির যৌথ প্রযোজনা।
স্পিরিচুয়াল ফিল্ম সেকশনে সেরা শর্ট ফিল্ম পুরস্কার পেয়েছে লুইস ক্যাম্পোস পরিচালিত পর্তুগালের সিনেমা ‘মন্টে ক্লেরিগো’। স্পেশাল মেনশন পুরস্কার পেয়েছে ভারতের সিনেমা `স্বাহা` (ইন দ্য নেম অব ফায়ার)। সিনেমার পরিচালক অভিলাষ শর্মা। সেরা ফিচার ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড জিতেছে ইভান সোসনিন পরিচালিত রাশিয়ার সিনেমা `প্রিশেলেক` (দ্য এলিয়েন)
বাংলাদেশ প্যানোরামা ট্যালেন্ট সেকশনে তিনটি সিনেমা পুরস্কৃত হয়েছে। সেরা চলচ্চিত্র (ফিপরেস্কি জুরি) হয়েছে মনন মুনতাকা পরিচালিত `আ লেজি মুন` সিনেমা। ফার্স্ট রানারআপ হয়েছে আসিফ ইউ হামিদ পরিচালিত ‘ফুলেরা পোশাক পরে না’ (ডিফাই) এবং সেকেন্ড রানার আপ হয়েছে মোবারক হোসেন পরিচালিত ‘পৈতৃক ভিটা’ (হেরেডিটারি হোমস্টেড)।
এছাড়াও বাংলাদেশ প্যানোরমা পূর্ণ দৈর্ঘ্য বিভাগে সেরা চলচ্চিত্র (ফিপরেস্কি জুরি) হয়েছে মেহজাবীন চৌধুরী অভিনীত `প্রিয় মালতী` সিনেমা। সিনেমার পরিচালক শঙ্ক দাশ গুপ্ত। এশিয়ান ফিল্ম কম্পিটিশন সেকশনে সেরা চিত্রনাট্য পুরস্কার পেয়েছে তাকাতো নিশি ও নোরিকো ইউওসা। তাদের জাপানি সিনেমা ‘পারফর্মিং কাওরু’স ফিউনারেল` সিনেমার জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন।
সেরা চিত্রগ্রাহক পুরস্কার পেয়েছেন দিলসাত কানন। তুরস্কের `ডেমো কে পেলে গোজান বেনি জের` (হোয়্যান দ্য ওয়ালনাট লিভস টার্ন ইয়েলো) সিনেমার জন্য পুরস্কার পেয়েছেন। সেরা অভিনেত্রী পুরস্কার পেয়েছেন ডিমেন জান্ডি। ইরান ও তাজিকিস্তানের যৌথ প্রযোজনার সিনেমা `মেলডি`তে অভিনয় করে সেরার পুরস্কার পেয়েছেন।
সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন রায়ান সারলক। ইরানি সিনেমা `তাবেস্তান-ই হামান সাল` (সামার টাইম) এর জন্য পুরস্কার পেয়েছেন। এই সিনেমার জন্য বিশেষ মেনশন পুরস্কার পেয়েছেন পরিচালক মাহমুদ কালারি। সেরা পরিচালক পুরস্কার পেয়েছেন চীনা পরিচালক হাওফেং শু ও জুনফেং শু। তার সিনেমার নাম `ম্যান কিয়ান বাও দি` (১০০ ইয়ার্ডস)। সেরা চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছে শোকির খলিকভ পরিচালিত উজবেকিস্তানের সিনেমা ‘ইয়াকশানবা’ (সানডে)।
রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের উদ্যোগে ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’- স্লোগান সামনে রেখে গত ১১ই জানুয়ারি পর্দা উঠেছিল ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের। ঢাকার ৫টি ভেন্যুতে ৯ দিনব্যাপী আয়োজিত এই উৎসবে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন ৪৪ জন বিদেশি প্রতিনিধি।
উৎসবে চীন ও বাংলাদেশের ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কের উদযাপন লক্ষ্যে এবার উৎসবের ওয়াইড অ্যাঙ্গেল সেকশনটি চীনা চলচ্চিত্রের জন্য উৎসর্গ করা হয়। এর সাথে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন করিডরে চীনা চলচ্চিত্র পোস্টার এক্সিবিশনের বিশেষ আয়োজন করা হয়।
দুই দিনব্যাপী ‘সিনেমায় নারী’ শীর্ষক সম্মেলন ছিল উৎসবের একটি বিশেষ আকর্ষণ। এবার তৃতীয় বারের মতো আয়োজন করা হয় মাস্টারক্লাসের। বাংলাদেশসহ সার্বিয়া, চীন ও নরওয়ের চলচ্চিত্র বোদ্ধাগণ মাস্টারক্লাসটি পরিচালনা করেন। এটি তত্ত্বাবধান করেন বাংলাদেশি চলচ্চিত্র সমালোচক বিধান রিবেরু। এছাড়া এবার প্রখ্যাত রাশিয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক আলেক্সেই ফেদোরচেনকোর ‘রেট্রোস্পেকটিভ’ আয়োজন করা হয়।