• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

গায়ক নোবেলের যত বিতর্কিত কর্মকাণ্ড


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মে ২০, ২০২৩, ১২:৫৭ পিএম
গায়ক নোবেলের যত বিতর্কিত কর্মকাণ্ড

ভারতীয় টিভি চ্যানেল জি বাংলার সংগীতবিষয়ক প্রতিযোগিতা ‘সা রে গা মা পা’-এ অংশ নিয়ে প্রথমে নজরে আসেন বাংলাদেশের প্রতিযোগী মাঈনুল আহসান নোবেল। তখন বাংলাদেশের মানুষের কাছে সা রে গা মা পা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল নোবেলের কারণেই। গান দিয়ে বাংলাদেশে ও কলকাতায় অসংখ্য ভক্ত তৈরি করেছেন নোবেল। শুধু  ওই শোয়ের বদৌলতেই বেশ কয়েকজন গীতিকার, সুরকার, গায়ক ও সংগীত পরিচালকের সঙ্গেও তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে জনপ্রিয়তা যেমন পেয়েছেন, তেমনি বিতর্কও দানা বেঁধেছে তাকে ঘিরে।

নোবেলের বিতর্ক শুরু হয় ২০১৯ সালে ‘সা রে গা মা পা’-এর প্রাথমিক ফলাফলে যখন তাকে তৃতীয় ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নোবেল-ভক্তদের ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা যায়। নোবেলকে নিয়ে প্রত্যাশা ছিল সব বিচারকেরও। কয়েকটি পর্বে নোবেলের গান শোনার পরই বিচারকরা তাকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম দাবিদার বলে ঘোষণা করেছিলেন। যদিও এই বিতর্কটা নোবেলের পক্ষে থাকলেও এর পর থেকে যেন বিতর্ক নোবেলকে ঘিরে ধরেছে।

এর আগে ‘সা রে গা মা পা’ অনুষ্ঠানে দেশের নামকরা গীতিকার ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদের লেখা ও সুর করা ‘মা’, ‘বাবা’, ‘এত কষ্ট কেন ভালোবাসায়’ শিরোনামের তিনটি গান গেয়ে শোনান তিনি। কিন্তু গানের শিল্পীদের নাম বললেও কোনোবারই নোবেল গান তিনটির স্রষ্টা প্রিন্স মাহমুদের নাম উল্লেখ করেননি। এ নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ ঝাড়েন প্রিন্স মাহমুদ। পরে অবশ্য সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত গীতিকারের জন্মদিনে উপস্থিত হয়ে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন নোবেল।

এই বিতর্ক শেষ না হতেই তিনি জড়িয়ে পড়েন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বিতর্কে। একটি লাইভ সাক্ষাৎকারে হাজির হয়ে নোবেল মন্তব্য করেন, “রবীন্দ্রনাথের লেখায় নয়, প্রিন্স মাহমুদের লেখায় আমার সোনার বাংলাকে বেশি ভালোভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। এই গানের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের আবেগ। বাংলাদেশের সঙ্গে, বাংলার মানুষের সঙ্গে এই সোনার বাংলার যোগ অনেক বেশি। এমনকি জেমসের ‘বাংলাদেশ’ গানটিই বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মিছিল হয়েছিল। আমিও এ বিষয়ে একমত।”

নোবেলের এই সাক্ষাৎকার প্রচার হওয়ার পর তা দেখে ফুঁসে ওঠেন স্বয়ং তার ভক্তরাই। যে নোবেলকে তারা ভালোবেসে মনের আসনে ঠাঁই দিয়েছিল, জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলায় সেই নোবেলকে তারা ছুড়ে ফেলে দেন।

জাতীয় সংগীত বিতর্কের মধ্যেই সামনে এসেছে আরও একাধিক বিতর্ক। ‘সা রে গা মা পা’-এর শো চলাকালীন এক বিচারককে নাকি নোবেল বলেছিলেন, ‘তার গান বিচার করার ক্ষমতা ওই বিচারকের নেই। যার কারণে জি বাংলা চ্যানেল কর্তৃপক্ষ কিছুদিনের জন্য নোবেলকে সাসপেন্ড করে রাখে। গুঞ্জন রয়েছে, শোয়ের বাকি প্রতিযোগীদের সঙ্গেও নোবেল বেশ নাকউঁচু ভাব নিয়ে চলতেন। এমনকি বাংলাদেশের কোনো শিল্পীকেই তার যথাযোগ্য মনে হয় না বলে নাকি মন্তব্য করেন।

গান নিয়ে যতটা না আলোচিত হয়েছেন, বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে তার চেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছেন ‘সা রে গা মা পা’ খ্যাত গায়ক মাঈনুল আহসান নোবেল। ‘নগর বাউল’খ্যাত রকস্টার জেমসকে উদ্দেশ্য করে আপত্তিকর বক্তব্যের কারণে নতুন সমালোচনার ঝড় তৈরি করেন সংগীতাঙ্গনে। যদিও এসব বক্তব্যের কারণে ক্ষমা চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন নোবেল।

সে সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার অপরাধ তদন্ত বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম এক ফেসবুক বার্তায় বলেন, “গায়ক নোবেল ও তার ভেরিফায়েড পেজের আপত্তিকর ও অনভিপ্রেত পোস্ট নিয়ে আমরা ইতোমধ্যেই অবগত। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন মোতাবেক ও সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের সঙ্গে মতামত, সম্মতি ও পরামর্শক্রমে এ বিষয়ের একটা বিশ্বাসযোগ্য ও স্থায়ী সমাধানের জন্য আমরা আইনের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’ সাইবার বুলিং ও শিল্পী-সাংবাদিকসহ অন্যদের হেনস্তা করায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ ছাড়া নিজের কোনো গান প্রকাশের আগে ফেসবুকে একাধিক ইস্যুতে বিতর্কিত পোস্ট দিয়ে আলোচনায় এসেছেন নোবেল। জানা গেছে গান প্রচারণার অংশ হিসেবেই হয়তো এমন বিতর্কিত পোস্ট তার। তবে নোবেলের দাবি ছিল তার ফেসবুক পেজ হ্যাক হওয়ার কারণে এমনটি হয়েছিল। এর রেশ ধরেই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সাউন্ডটেক নোবেলের এসব আচরণের কারণে তার সঙ্গে হওয়া ২২ গানের চুক্তি বাতিল করেছে। এ ছাড়া নোবেলকে একাধিক সিনেমার প্লেব্যাক থেকে বাদ দেওয়া হয়।

এরপরও বিতর্কিত কর্মকাণ্ড বন্ধ করেননি নোবেল। মাদক নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দেন তারকা এই সংগীতশিল্পি। তার প্রাক্তন স্ত্রী সালসাবিল বলেন, “মাদকদ্রব্য ছাড়ার কথা এবং চিকিৎসা নেওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করলে সে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয় সে কখনো মাদক ছাড়বে না এবং বলে—নেশা ছাড়লে তো আগেই ছাড়তাম। এরপর আমি আমার পারিবারিক সিদ্ধান্তে আমার ডিভোর্স রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করি।”

সম্প্রতি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের ৫০ বছরপূর্তি ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কণ্ঠশিল্পী নোবেল গান গাওয়ার জন্য আমন্ত্রিত ছিলেন। গান গাওয়ার জন্য মঞ্চে উঠেই মাতলামি শুরু করেন। এ সময় তাকে উদ্দেশ করে দর্শকরা জুতা ও পানির বোতল নিক্ষেপ করে। পরে সামাজিক মাধ্যম এবং সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। পরে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে।

শনিবার প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় গায়ক নোবেলকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। মতিঝিল থানায় করা প্রতারণা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, নোবেলের বিরুদ্ধে তার স্ত্রীর অভিযোগ আছে। তার বিরুদ্ধে মামলাও আছে।

জানা গেছে, অগ্রিম টাকা নিয়ে অনুষ্ঠানে না গিয়ে প্রতারণার অভিযোগে নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬-এর প্রতিনিধি মো. সাফায়েত ইসলাম। ১৭ মে আদালত এ মামলার এজাহার গ্রহণ করে ৯ জুলাই প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

Link copied!