বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল চলচ্চিত্রশিল্পের আবাসস্থল হয়ে উঠছে মধ্যপ্রাচ্য। ক্রমবর্ধমান সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ এই অঞ্চলকে বিশ্ব চলচ্চিত্রে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে চলচ্চিত্রশিল্পে এ অঞ্চলের সবচেয়ে সফল দেশ সৌদি আরব। বিনোদনশিল্পে দেশটির প্রতিটি পরিকল্পনার ঈর্ষণীয় সাফল্য দেশটির অর্থনীতির পালে দিয়েছে নতুন হাওয়া।
দেশটির পরিকল্পনাকে আদর্শ মেনে নিজেদের চলচ্চিত্রশিল্পকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে উপসাগরীয় আরও কয়েকটি দেশ। রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেট ডটকম তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০৩৩ সালের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের সিনেমার বাজার ৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে, ২০২৪ সালে যা ছিল ১ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ছয় বছর হয় বিনোদনশিল্পের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে সৌদি আরব। রক্ষণশীলতার ঘেরাটোপ থেকে সৌদি সমাজকে বের করে আনার চেষ্টায় ২০১৮ সালে বিনোদনজগৎ থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
হাতে নেন ভিশন ২০৩০ পরিকল্পনা। অর্থনীতিতে তেলনির্ভরতা কমিয়ে শিল্প ও পর্যটনের দিকে নজর বাড়িয়ে বেশ চমক দেখিয়েছে সৌদি আরব। এ সময়ের মধ্যে শুধু সিনেমাশিল্প থেকেই সৌদির আয় এক বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় দুই কোটি সিনেমাপ্রেমীর জন্য ৩৫০টি সিনেমা হল বানানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সৌদি আরব। যেখানে পর্দার সংখ্যা হবে দুই হাজারের বেশি। এরই মধ্যে ২২টি শহরে ৬৬টি সিনেমা হলে সিনেমা প্রদর্শন শুরু হয়েছে। নিজেদের সিনেমা উন্নয়ন ও তরুণ প্রতিভাদের খুঁজে আনতে দেশটি ১০০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান দিয়েছে।
সৌদি সিনেমাগুলোও পিছিয়ে নেই। দেশটির প্রযোজনা সংস্থা ‘তেলফাজ ১১’ গত বছরের শুরুতে নিয়ে আসে তাদের প্রথম ফিচার ফিল্ম সাত্তার। সাড়া ফেলে এই সিনেমা। মুক্তির প্রথম ১২ দিনেই বক্স অফিস থেকে সিনেমাটি আয় করে ২২ লাখ মার্কিন ডলার। চলচ্চিত্রবিষয়ক মার্কিন গণমাধ্যম হলিউড রিপোর্টার-এর তথ্যমতে, সৌদিতে সিনেমাটি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে গেছেন ৯ লাখ ৩০ হাজারের বেশি দর্শক। বিশ্বজুড়ে সিনেমাটি আয় করেছে ১১ মিলিয়ন ডলারের বেশি, সৌদি সিনেমার ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য উপসাগরীয় দেশেও চলচ্চিত্রশিল্পে একই রকম সাফল্য দেখা গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের সিনেমা বাজারের ৩০ শতাংশ দখলের দাবি করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। চিত্রগ্রহণের জন্য বিশ্বব্যাপী নির্মাতাদের জনপ্রিয় স্থান দেশটির দুবাই শহর।
বাহরাইন, কুয়েত ও ওমানের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও সেসব দেশের সরকার সৌদিকে আদর্শ মেনে বিনোদনজগতে বিনিয়োগের পরিকল্পনাও করছে। ওমানের শহর বারকাতে একটি ফিল্ম সিটিতে ৩০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছে দেশটির সরকার।
দেশটির স্থানীয় দৈনিক ওমান অবজারভার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল খাতে ৩১ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলারের তহবিল অনুমোদন দিয়েছে ওমানের ক্রীড়া, সংস্কৃতি এবং যুব মন্ত্রণালয়। এর আওতায় নির্মাণ করা হচ্ছে অত্যাধুনিক ফিল্ম সিটি। প্রকল্পটির সম্ভাব্য প্রভাব তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি নাদের আল রাওয়াহি সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, ‘ফিল্ম সিটি শুধু স্থানীয় চলচ্চিত্রশিল্পকে উন্নত করবে না, আন্তর্জাতিক প্রযোজকদেরও আকর্ষণ করবে।’
তথ্যসূত্র: আরব নিউজ, গালফ বিজনেস