• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জীবন্ত কিংবদন্তী আশা ভোঁসলে


আরাফাত শান্ত
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩, ১১:১৪ এএম
জীবন্ত কিংবদন্তী আশা ভোঁসলে
আশা ভোঁসলে

হিন্দি ছবির গানে তখন লতা, নূরজাহান, গীতা দত্তদের দাপট। সব ছবিতে তারা গাওয়ার পর যেসব গান থাকতো সেগুলো দেওয়া হতো আশা ভোঁসলেকে। সোজা কথায় ‘বি’ বা ‘সি’ গ্রেডের গানগুলোই পেতেন তিনি। অথচ কণ্ঠ কারো চেয়ে কম নয়। পণ্ডিত যশরাজ তাকে বলেছিলেন,  বাণিজ্যিক ছবির গান ছেড়ে ক্লাসিক্যাল গাওয়া শুরু করতে। কিন্তু সেটা করলে যে তিন সন্তানকে বড় করা যাবে না। গান গাওয়া তো সে কারণেই।  

গান গাইলে কণ্ঠ যাতে লতা, নূরজাহান, শামসাদ বেগম বা গীতা দত্তর মতো না শোনায় সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হতো আশাকে। চেষ্টা করে স্বতন্ত্র একটা গায়কী ঠিক করলেন। তা সত্ত্বেও বলার মতো সুযোগ পেতে লেগে গেল অনেকদিন।

১০ বছর বয়সে গেয়েছিলেন প্রথম গান। তার ৯ বছর পর একটি ছবিতে গান। একে একে বিমল রায়ের পরিণীতা, রাজ কাপুরের বুট পালিশ, রফির সঙ্গে ‘নানহে মুন্নে বাচ্চে’ গেয়ে কিছু শ্রোতার মন পেলেন। তবে দিলীপ কুমার-বৈজয়ন্তীমালার ‘নয়া দৌড়’ ছবিতে ‘মাঙ্গকে সাথ তুমহারা’ গাওয়ার পর লোকে তার নাম জানলো। কিন্তু একটা সময় পর্যন্ত ক্যাবারে, বিশেষত হেলেনের নাচ মানেই তার গান—এই ছিল পরিচয়।

এরপর ওপি নায়ারের সুরেই তার জাত চেনা গেল। ‘নয়া দৌড়’-এ সাহির লুধিয়ানভির কথায় রফির সঙ্গে ‘মাঙকে সাথ তুমহারা’, ‘সাথি হাথ বাড়হানা’ আর ‘উড়ে যব যব জুলফে তেরি’—এই তিনটি গান গেয়ে প্রথম বড় সাফল্য পেয়েছিলেন। তারপর ওয়াক্ত, গুমরাহ, হামরাজ, আদমি অউর ইনসান, হাওড়া ব্রিজ, মেরে সনম, এক মুসাফির এক হাসিনা, তুমসা নেহি দেখা, কাশ্মীর কি কলিতে তার কণ্ঠের জাদু বোঝা গেল।

ওই সময় বোন লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে কথা বন্ধ। সামান্য ভুল বোঝাবুঝির জন্য শচীন দেব বর্মণের সঙ্গে অনেক দিন কাজ করেননি লতা। পারিবারিক জীবনে অশান্তি শুরু হওয়ায় সঙ্গীত জগত থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে থাকেন গীতা দত্ত। সুযোগ যেমন পেলেন তেমনি নিজের মুনশিয়ানা প্রমাণ করলেন কালা পানি, কালা বাজার, ইনসান জাগ উঠা, লাজবন্তি, সুজাতা এবং তিন দেবিয়া ছবিতে।

ওই সুযোগ না পেলে উপমহাদেশের সংগীত আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র হতেন কিনা জানা নেই। হয়তো রাহুল দেব বর্মণের সংস্পর্শে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। ক্যাবারে, রক, ডিসকো,গজল, ভারতীয় ক্লাসিক্যাল রাহুলের সুরে কী না গেয়েছেন তিনি।

শুরুর দিকে ভালো গানের জন্য হাপিত্যেশ করতে হয়েছে তাঁকে। অথচ কত টাকা নেবেন তাই নিয়ে ভাবতে ভাবতে ‘উমরাও জান’ ছবিটা করবেন কিনা তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছিল পরিচালক মুজাফ্ফর আলীর মনে। কম বাজেটের ছবি। অথচ ছবির গানগুলোর জন্য আশা ভোঁসলেকে তার চাই-ই চাই। কিন্তু আশার চাহিদামতো টাকা দিতে পারবেন না বলে সরাসরি কিছু বলতেও পারছিলেন না। আশার মেয়ের সঙ্গে পরিচয় ছিল। কিছু না ভেবে ধরলেন তাকে। বর্ষা মা-কে শুধু বলেছিল, গানগুলি শুনে পছন্দ না হলে গেয়ো না। গান আর তার কথা শুনে আশাও না বলতে পারেননি। আসলে এই গান গাওয়ার জন্যই সারা জীবন অপেক্ষা করেছিলেন আশা। কিন্তু তাতেও পরিচালকের সমস্যা মিটল না। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তার পছন্দ ছিল রেখাকে। কিন্তু টাকার অঙ্ক শুনে রেখা আগ্রহ দেখাননি। এই কথা শুনে আশা রেখাকে ফোন করে বলেছিলেন, উমরাও জান ছবির কাহিনী এবং গানগুলি শুনো, এতে তোমায় অভিনয় করতে হবে। আশার কথায় রেখাও রাজি হলেন। বাকিটা তো ইতিহাস।

একটা সময় ছিল যখন লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে তুলনা এড়ানোর উপায় খুঁজতে হত আশাকে। কণ্ঠ, গায়কী অন্যরকম রাখতে কী কসরত করেছেন সেটা না বললেও চলে। স্বকীয়তা খুঁজে পেয়েছিলেন বলেই সংগীত ভুবনে আজ তিনি সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

Link copied!