এই পৃথিবী একটি রঙ্গমঞ্চ, পুরোনো এই বাক্যটির যদি আধুনিকায়ন করি, তবে বলতে হয় দুনিয়াটা একটা সিনেমা। সেই সিনেমায়, পাদপ্রদীপের আলোর নিচে যেমন অন্ধকার থাকে, তেমনি ধনীদের নিচে থাকে দরিদ্র। আমি প্রতিদিন জুলিয়াস-লেবার-ব্রুকের যে স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠি, সেখানে শীতের জীর্ণ-মলিন-নোংরা কম্বল নিয়ে এক দরিদ্র মানুষ দেখি পড়ে পড়ে ঘুমোয়। মাঝে মাঝে তার আশপাশে অন্য লোকও থাকে। শিথান-পৈথানে গড়াগড়ি যায় বিয়ারের শূন্য খয়েড়ি বোতল। এই তীব্র শীতে নিরাশ্রয়ী মানুষের বড় আশ্রয় হয়ে ওঠে আধখোলা ছোট স্টেশনের কোনো এক কোনা। বড় স্টেশনে এটা করার সুযোগ কম, কারণ সেখানে নিরাপত্তা কড়া।
প্রতিদিন যখন পটসডেমার প্লাৎজ থেকে বাসায় ফিরি, তখন দেখি ট্রেনের ভেতর লোকজন ভিক্ষা করছে। আমি এই দুদিন আগে পঞ্চাশ পয়সা দিলাম এক ভিখারিনীকে। আরেক দল রয়েছে যারা পত্রিকা বিক্রির নামে আদতে ভিক্ষাই করে। গতকাল সে রকমই এক লোক, পত্রিকা বিক্কিরি হয়নি একটাও, জোরে কান্নাকাটি, চিৎকার করছে। পত্রিকা কিনছে না কেউ, একটা যেন কেনে। পত্রিকাগুলো ছিড়েটিরে গেছে। মলিন দশা। তারচেয়েও মলিন হয়ে আছে লোকটির চোখ। নেশাগ্রস্তও বটে। কিন্তু দয়া করে হলেও কেউ সেসব পত্রিকা কিনছে না। জার্মান ভাষার পত্রিকা। ইংরেজি হলে আমি কিনতাম। তাছাড়া লোকটি যেভাবে উদভ্রান্তের মতো করছিল, কাছে ডেকে পয়সা দিয়ে পত্রিকা নেব সেই সাহস পেলাম না।
উৎসবের ষষ্ঠ দিন, বেলা এগারোটায় আমার সাব-জুরি মিটিং। সকাল দশটা নাগাদ বেরিয়ে দেখি একেবারে রোদে ঝলমল করছে দুনিয়া। আর রাস্তার আনাচেকানাচে জমে থাকা বরফে সূর্যালোকের প্রতিফলন যেন দিনের ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েক গুণ। মনটা উৎফুল্ল হয়ে উঠল, যাক মুখগোমড়া করা আবহাওয়া দেখতে দেখতে নিজের মনটাই কেমন বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিল। রোদমাখা দিনে ভেন্যুতে গিয়ে কো-জুরি সারা ও অলিভিয়ার সাথে দেখা করলাম। দেখি অলিভিয়া হায়াত হোটেলের প্রেস লাউঞ্জের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে, কফি খাওয়ার জন্য। সারাও কফি নিলো। আমি তো কফি খাই না। লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অর্ধেক আলাপ হলো। বাকি আলাপ হলো লাইন থেকে বেরিয়ে। আমরা প্রত্যেকেই প্রায় নব্বই শতাংশ ছবি দেখে ফেলেছি আমাদের বিভাগের। বাকিটা নিয়ে আলাপে বসব ২০ ফেব্রুয়ারি, যাকে বলে ডেলিবারেশন ডে। ওদিনই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে, কোনটি হচ্ছে পার্সপেক্টিভস সেকশনের ফিপ্রেসি পুরস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র।
সাবজুরি মিটিং শেষ করে আমরা তিনজনই গেলাম বার্লিনালের একটি সাব-অফিসে, যেখান থেকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট জুরিদের সমন্বয় করা হচ্ছে। বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের হয়ে ক্রিটিক জুরিদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিলেন ওখানকারই একজন, নাম মাইকে। তো আমরা দেখলাম, অফিসটি সিনেম্যাক্সের উল্টোদিকে। অবশ্য মাইকে আমাকে আগে থেকেই ওদের অফিসের লোকেশন জানিয়ে রেখেছিল। এমনকি অফিসের সামনের ছবিও পাঠিয়ে দিয়েছিল চেনার সুবিধার্থে।
আমরা ঢোকার সাথে সাথে মাইকে আমাদের বলল, তোমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। ছোট্ট অফিসটাতে নিয়ে ও আমাদের বসাল। সবুজ-চা খাওয়াল। আর আফসোস করল এবারের বার্লিনালের পোস্টার নিয়ে। আমিও বললাম, তোমাদের এবারের পোস্টারে ভালুকটা মিসিং। মাইকে বলল, নতুন ডিরেক্টরের আইডিয়া হতে পারে। আরো হতাশা ব্যক্ত করল, বং জু-হ’র নতুন ছবি ‘মাইকি সেভেনটিন’ নিয়ে। ভালো লাগেনি। আমি বললাম, বং জু-হো আমার কাছে ওভার রেটেড ফিল্মমেকার। মাইকে আগ্রহী হয়ে উঠল। ব্যাখ্যা করলাম, ওর ‘প্যারাসাইট’, ‘ওকজা’, ‘স্নোপিয়ার্সার’ ইত্যাদি ছবি দিয়ে। এটা নিয়ে আমি একটা প্রবন্ধও লিখেছিলাম বছর ছয়েক আগে। মাইকে আরো আগ্রহী হয়ে বলল, ও আমার লেখাটি পড়তে চায়। বললাম, আরে ওটা তো বাংলায় লেখা। বলল, সমস্যা নেই, বাংলায় হলেও দাও, তোমার লেখাটা ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। নিমরাজি হলাম। এরপর অফিসটাতে ছবিটবি তুলে সারা, অলিভিয়া ও আমি, তিনজন তিনদিকে দৌড়ালাম। সবারই স্ক্রিনিং আছে।
আমি এদিনই প্রথমবারের মতো কিউবিক্সে ছবি দেখতে গেলাম। পটসডেমার প্লাৎজ থেকে ইউ-টু ট্রেনে চেপে যেতে হবে আলেক্সান্দার প্লাৎজে। সেই স্টেশন থেকে তিন মিনিটের হাঁটা পথ। গুগলেশ্বরী আমাকে সহায়তা করল। রোদ ওঠার কারণে, ঠাণ্ডা থাকলেও, হেঁটে যেতে কোনো সমস্যা হয়নি। অন্তত বরফগুলো জমে নেই রাস্তায়, নয় তো হাঁটতে ভীষণ সমস্যা হয়। অসাবধান হলেই দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কোথাও কোথাও অবশ্য বরফ জমাট বেধে পিচ্ছিল হয়ে আছে, সেসব জায়গা দেখে সাবধানে এড়িয়ে চলছি।
কিউবিক্সে এসে দেখলাম এখানে নয়টি সিনেপ্লেক্স রয়েছে। আমি চারতলায় উঠছি, দুপুর একটার ছবি ‘ওঁ ভ্যু খোয়া’ বা ‘উই বিলিভ ইউ’ (২০২৫) দেখব। বেলজিয়ামের ছবিটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন শার্লোট ডেভিলার্স ও আর্নোড দুফে। চিত্রনাট্যও রচনা করেছেন তারা দুজন। এক ব্যতিক্রমী ও যে বিষয় নিয়ে সহজে কেউ কথা বলে না, সেটি নিয়েই তারা ছবি নির্মাণ করেছেন। কোর্টরুম ড্রামা। পিরন নামের এক ভদ্রমহিলা কিশোরী বালিকা ও এক বাচ্চা ছেলেকে নিয়ে পারিবারিক আদালতে এসেছে। বাচ্চাগুলোর বাবাও এসেছে। সে তার বাচ্চাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে চায়, কিন্তু মা সেটা দিচ্ছে না। দেবে কেমন করে, বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ তো গুরুতর। নিজের ছেলে সন্তানকে বলাৎকার-চেষ্টার অভিযোগ। এটি নিয়ে ক্লোজ ক্যামেরায় মা কথা বলে, বাবা কথা বলে, আইনজীবী যখন যুক্তি উপস্থাপন করে তখনও ক্যামেরা স্থির থাকে তাদের উপর, রিয়্যাকশন শট নেয়। চরিত্রদের প্রতিক্রিয়া দেখে দর্শক। অনেকটা যেন কুরোসাওয়ার ‘রশোমন’ এবং কিয়ারোস্তামির ‘শিরিনে’র সম্মিলিত মেজাজ পেলাম ছবিটি দেখে। তারপরও বলবো, যথেষ্ট শক্তিশালী চিত্রনাট্য। বিশেষ করে মায়ের সংলাপগুলো। অভিনয়ের কথা আলাদা করে বলতেই হয়, বেলজিয়ান মঞ্চাভিনেত্রী মাইরিয়েম আখেদ্যু মায়ের চরিত্র যে অভিনয় করেছেন, এক কথায় অপূর্ব।
পার্সপেক্টিভস সেকশনের ছবিগুলো আসলেই ভিন্নধর্মী ও দেখেও আরামবোধ করছি। এই ছবিটি শুরুর আগে বাইরে দেখা হয়েছিল ফিপ্রেসির অন্য বিভাগের দুই জুরির সাথে। তারাই ডেকে নিয়ে বসাল। জিজ্ঞেস করল আমার সেকশনের অবস্থা। উনারা প্যানোরামা সেকশনের বিচারক। ওরাও বলতে বাধ্য হলো, এবার ভালো ছবির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এই পার্সপেক্টিভস সেকশনেই। যাহোক, পরবর্তী ছবি সেই পটসডেমার প্লাৎজ, মূল ভেন্যুতে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। মাঝে কিছু সময় পাওয়া গেল। এবং আমি এদিন আমার প্রিয় জায়গা বইয়ের দোকানে দীর্ঘ একটা সময় কাটালাম। ওদের প্রতিটা শপিংমলেই বইয়ের দোকান আছে। আর সেখানে শুধু বই নয়, আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্রও বিক্রি করে। যেমন- খাতাকলম তো আছেই, আরো আছে রাতে আলো জ্বেলে পড়ার ছোট ছোট চার্জেবল রিডিং লাইট, বিভিন্ন ডিজাইনের। আমার এই জিনিটা খুব পছন্দের। বার্লিন থেকেই দুটি কিনেছি। বাসায় আমার দেখাদেখি, ঘুমানোর আগে, মনেও রাতে বাতি জ্বালিয়ে বই পড়ে। দুটো কেনার কারণ মনে, আমারটা নিয়ে যেন টানাটানি না করে!
স্টেজ ব্লুম্যাক্স থিয়েটারে সন্ধ্যার ছবিটির নাম ‘দ্য সেটেলমেন্ট’ (২০২৫), মোহামেদ রাশাদ পরিচালিত ছবিটি মিশরের ছবি। তবে মিশরের সাথে যৌথ প্রযোজনায় রয়েছে ফ্রান্স, জার্মানি, কাতার ও সৌদি আরব। ছবির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে ২৩ বছর বয়সী হোশামকে কেন্দ্র করে। আলেক্সান্দ্রিয়ার এক কারখানায় দুর্ঘটনায় বাবা মারা যাওয়ার পর, তার জায়গাতেই কাজ করার সুযোগ পায় হোশাম। এর আগে সে বন্ধুবান্ধবের সাথে মিশে বিপথে চলে গিয়েছিল। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর সে যেন একটি নতুন জীবন পায়। কারখানায় ঢুকে সে বুঝতে পারে, তার বাবার মৃত্যু নিখাদ দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ছিল না। সেটা ছিল কারখানা মালিকের অবহেলার কারণে মৃত্যু। কারণ তার বাবা যে যন্ত্রটি চালাত সেটি অনেকদিন ধরেই নষ্ট। নষ্ট যন্ত্রের কারণেই লোকটির মৃত্যু হয়।
হোশাম যখন যন্ত্রের ত্রুটি আবিষ্কার করল, তখন সে নিজে কাজ করার ঝুঁকি না নিয়ে কারখানার প্রকৌশলীকে বলল, ঠিক করতে। সেটা করতে গিয়ে প্রকৌশলী মারা যায়। ছবির শুরু থেকেই হোশামের সঙ্গে ছোট ভাই মারু ছিল ছায়ার মতো। স্কুলটুল বাদ দিয়ে সেও কারখানায় এসে টুকটাক কাজ করতে থাকে বড় ভাইয়ের সাথে। হোশাম ধীরে ধীরে তাকে বাবার মতোই স্নেহ করতে থাকে। কিন্তু শেষে যখন প্রকৌশলী মারা যায়, হোশাম ভয় পেয়ে পালিয়ে যায় এবং শেষ দৃশ্যে ছোটভাই মারু নিজ বাসায় ছুরি হাতে নেয়, তখন ছবিটি নামের স্বার্থকতা প্রকাশ করে। অর্থাৎ এই কারখানা মালিকদের যে অবহেলা, শ্রমিকদের প্রতি, সেটা বন্দোবস্ত করার প্রত্যয় ফুটে ওঠে ছোট ছেলেটির চোখে। গোটা ছবিতে শোষক ও শোষিতের সমীকরণ জারি ছিল। ইচ্ছাকৃত কি না জানি না, তবে আশ্চর্য সমাপতন, হোশাম যে যন্ত্রটিতে কাজ করে কারখানায়, সেটির গায়ে ছোট করে লেখা ছিল ‘মেইড ইন ইউএসএসআর’, অর্থাৎ যন্ত্রটি তৈরি সোভিয়েত ইউনিয়নে। পরিচালক রাশাদ মার্কসবাদ বা লেনিনবাদে বিশ্বাসী কি না জানি না, তবে ছবিটির ভেতর নিচুতলার মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম ও মালিকশ্রেণির শোষণের চিত্র আঁকা রয়েছে ভালোভাবেই।
ষষ্ঠ দিনে আর কোনো ছবি ছিল না। কিন্তু কুড়ি ও একুশ তারিখ আবার ধর্মঘট ডেকেছে রেল ও বাসের কর্মচারীরা, কাজেই সেদিন যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হবে। এবং আমার কুড়ি তারিখের ছবিটি দেখতে যেতে হতো আলেক্সান্দার প্লাৎজে, তো ইউ-টু ট্রেন সেদিন সব বন্ধ থাকবে। কাজেই আমি এদিনই রাত সাড়ে নয়টার স্ক্রিনিং বুক করলাম সিনেম্যাক্সে। কুড়ি তারিখের ছবি নিয়ে এলাম আঠার তারিখে। এদিনের শেষ স্ক্রিনিংয়ে যাওয়ার আগের সময়টা বইটই পড়ে, সময় মতো গিয়ে হাজির হলাম হলে। ছবির নাম ‘ব্ল্যাক নিউজ (BLKNWS): টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস’ (২০২৫)। যুক্তরাষ্ট্র ও ঘানার যৌথ প্রযোজনার ছবিটি পরিচালনা করেছেন খলিল জোসেফ। কোয়াজি-ডকুমেন্টারি বলা যায় ছবিটিকে, তবে ভাবনা উদ্রেককারী চলচ্চিত্র।
পরিচালক একটা সাইফাই গল্প বলার চেষ্টা করলেন, কিন্তু সেখানে কৃষ্ণাঙ্গদের দেড়শ বছরের কালেক্টিভ মেমোরি, যা যা নানা আকারে সংরক্ষিত আছে, মানে ভিডিও, স্থিরচিত্র, খবর, ইতিহাস ইত্যাদি, সবকিছুর একটা খতিয়ান হাজির করলেন নির্মাতা। অসম্ভব রকমের নিরীক্ষাধর্মী এই ছবিতে দেখা যায় ভবিষ্যতের এক জলযান ‘নাউটিকা’য় উড়ে উড়ে যাত্রীরা পরিভ্রমণ করছে সময়ের ভেতর। যেখানে তারা প্রত্যক্ষ করে কৃষ্ণাঙ্গ বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদ, রাজনৈতিক নেতা, দার্শনিক ও লেখকদের চিন্তার পূর্বাপর। এই ছবিটি আসলে ভিন্নধরনের অভিজ্ঞতা দেয় দর্শককে। যদিও ফিকশনের চেয়ে অনেক বেশি এক্টিভিজম মনে হয়েছে, তারপরও পার্সপেক্টিভস সেকশন বলে কথা, এখানে নিরীক্ষার চূড়ান্ত সব ছবি নির্বাচিত হয়েছে। দারুণ লেগেছে ছবিটি।
তো তিনটি ছবি শেষ করে দেখি রাত সাড়ে এগারো বাজে। স্টেশনে যেতে যেতে পৌনে বারো। এবং আমার প্রতিদিনকার রুটের ট্রেন আর নেই। কাজেই ভিন্ন ট্রেনে চড়ে বাসায় ফিরতে হলো। যখন ফিরি, মজার বিষয়, নিজের পায়ের আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। এতোটাই শুনশান। আরো মজার বিষয়, চুরি-ছিনতাই-রাহাজানির ভয় করে না। অথচ ইদানিং ঢাকায় সন্ধ্যা নামলেই অপরাধীরা কিলবিল করে বেরিয়ে আসতে থাকে মাটির উপরে। চলে ছিনতাই, কোপাকুপি!