• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩০, ৭ রজব ১৪৪৬

চিত্রনায়িকা অঞ্জনার বর্ণাঢ্য জীবন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০২৫, ০৩:৪৮ পিএম
চিত্রনায়িকা অঞ্জনার বর্ণাঢ্য জীবন
অঞ্জনা রহমান। ছবি: ফেসবুক থেকে

অঞ্জনা রহমান। বরেণ্য অভিনেত্রী। ডাগর চোখের এ অভিনেত্রী নিজ যোগ্যতায় ঢালিউডে কাজ করেছেন। তার সময়ে বহাল তবিয়তে শাবানা, ববিতা, কবরী, অলিভিয়া-দের মতো প্রভাব বিস্তারকারী তারকারা ছিলেন। তাদের মধ্য থেকেও তিনি নিজের যোগ্যতায় দর্শক মন জয় করেন। ন্যাচারাল অভিনয় তো করতেনই পাশাপাশি নাচেও ছিলেন পারদর্শী। নৃত্যশিল্পী হয়ে মঞ্চে কাজ শুরু করেন। নাচে তিনবার পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কারও ।

অঞ্জনার জন্ম ২৭ জুন ১৯৬৫। চাঁদপুর জেলায় বাড়ি। তার প্রথম ছবি ‘সেতু’ কিন্তু পর্দায় আসেন ‘দস্যু বনহুর’ ছবিতে অভিনয়ে। ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনাও করেছেন কিছু ছবি। অঞ্জনা ছিল হিন্তু পরিবারের মেয়ে। ঢালিউড সিনেমার এক সময়ের প্রভাবশালী প্রযোজক-পরিচালক আজিজুর রহমান বুলিকে ভালোবেসে বিয়ে করে মুসলিম হোন। নাম পরিবর্তন করে  অঞ্জনা সাহা থেকে হয়ে যান অঞ্জনা রহমান। পরিবারে তার একছেল ও এক মেয়ে রয়েছে।

অসুস্থ স্বামী আজিজুর রহমান বুলির পাশে অঞ্জনা

অঞ্জনা রহমান প্রায় ৩০০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি মধ্যে রয়েছে-  ‘দস্যু বনহুর’, সেতু, অশিক্ষিত, প্রিয় বান্ধবী, গাঙচিল, চোখের মণি, জিণ্ঞ্জির, ছোট মা, রূপালি সৈকতে, সখি তুমি কার, যাদুনগর, রজনীগন্ধা, আখেরি নিশান, অন্ধবধূ, অংশীদার, মাসুম, অভিযান, ফুলেশ্বরী, গুণাই বিবি, গাঙচিল, পরিণীতা, আপোষ, আনারকলি, রাজবাড়ি, ভাইজান, রাম রহিম জন, বিধাতা, দেশ বিদেশ, নেপালী মেয়ে, হুংকার, বিষকন্যার প্রেম, অগ্নিপুরুষ, সিন্দাবাদ, হুঁশিয়ার, বৌরাণী, নান্টু ঘটক, বিচারপতি, প্রতিরোধ, মোহনা, হিমালয়ের বুকে, আশার প্রদীপ ইত্যাদি।

তার সিনেমা যত জনপ্রিয় গান :

ঢাকা শহর আইসা আমার আশা পুরাইছে – অশিক্ষিত
চলে আমার সাইকেল – নান্টু ঘটক
ও মিষ্টি ভাবী রে – রজনীগন্ধা
মাই লাভ এমেরিকা – দেশ বিদেশ
বাবারে বাবা কই দিলা বিয়া – অভিযান
জীবনের গল্প এত ছোট নয় – রাম রহিম জন

অঞ্জনার মধ্যে সৌন্দর্য, অভিনয়গুণ দুটোই ছিল। তার সময়ের প্রথম সারির নায়ক রাজ্জাক, আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, জসিমদের সাথেই কাজ করেছেন। লাক্সের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবেও দেখা গেছে তাকে। এশিয়া মহাদেশীয় নৃত্য প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে হরর ঘরানার ছবি মাত্র কয়েকটি হয়েছে। এর মধ্যে সাদাকালো সময়ে কাজী হায়াৎ নির্মিত অসাধারণ হরর ছবি ‘রাজবাড়ি’-র নায়িকা ছিলেন অঞ্জনা। ডাবল রোলের এ ছবিতে তার অভিনয় অসাধারণ ছিল।

এ ছবিতে তার হরিণী চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগে। চরিত্রটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ছবিতে তার অসাধারণ একটি গান আছে। ছবির ফিনিশিং-এ অঞ্জনার চরিত্রটি বিশেষত্ব পেয়েছে। নায়করাজ রাজ্জাকের সাথে প্রায় ২৭ টি ছবির মধ্যে ‘অভিযান’ ছবিটি ছিল সবচেয়ে ব্যতিক্রমী কাজ তার।

নায়ক জসিম প্রযোজিত ‘ভাইজান’ ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তার চরিত্র। ছবি ব্যবসাসফল হলে পার্টি দেয়ার কথা ছিল জসিমের। ছবি হিট হয়ে যায়। প্রায় ২ কোটির মতো লাভ হয় সেখান থেকে ৫ লাখ টাকার চেক পাঠিয়েছিল অঞ্জনাকে, পার্টিও দিয়েছিল। ভারতের সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তীর সাথে ‘অর্জুন’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি প্রশংসিত হন। যৌথ প্রযোজনার একাধিক ছবিতে দেখা গেছে তাকে এমনকি বিগ বাজেটের ছবি যেগুলো বিদেশে চিত্রায়িত এ ধরনের ছবিতে তাকে বেশ দেখা গেছে।

অঞ্জনা রহমান প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ‘গাঙচিল’ ছবিতে ১৯৮১ সালে। দ্বিতীয়বার ১৯৮৬ সালে ‘পরিণীতা’ ছবির ললিতা চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য।বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি ‘বাচসাস’ পুরস্কার পান তিনবার।

বরেণ্য এই অভিনেত্রী বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কার ছবিতে অভিনয় করেছেন। দেশের বাইরে মিঠুন (ভারত), নাদিম, জাভেদ শেখ, ফয়সাল (পাকিস্তান), শিবশ্রেষ্ঠা (নেপাল) একাধিক নায়কদের সাথে অভিনয় করেছেন। তার একটি সফল অধ্যায় সমৃদ্ধ করেছে আমাদের চলচ্চিত্রকে।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাত ১টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

Link copied!