• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

যে কারণে কখনো জন্মদিন পালন করেননি ফারুক আহমেদ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৪, ০৬:০০ পিএম
যে কারণে কখনো জন্মদিন পালন করেননি ফারুক আহমেদ
ফারুক আহমেদ। ছবিঃ সংগৃহীত

নাটক থেকে চলচ্চিত্র সব খানেই সবর উপস্থিতি ও অবাধ বিচরণ অভিনেতা ফারুক আহমেদের। শুরু করেছিলেন ঢাকা থিয়েটার দিয়ে মাঝখানটায় আলো জ্বেলেছিলেন হুমায়ূন আহমেদের নাটকেও। এখনো নিয়মিত অভিনয় করে যাচ্ছেন তিনি। তার বলা অসংখ্য সংলাপ পছন্দ করেন এই সময়ের তরুণেরা। মুখে মুখে ফেরে তার বলা সংলাপগুলি। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি এখন চাকরিও করছেন একটি প্রতিষ্ঠানে। তাই বলে অভিনয় থেকে দূরে নন তিনি।

আজ ২৫ মার্চ এই গুণী অভিনেতার জন্মদিন। কিন্তু তিনি জন্মদিন পালন করেন না। মানিকগঞ্জে জন্ম নেয়া এই অভিনেতার জন্মদিন পালন না করার কারণটা তিনি আজ ফেসবুকে লিখেছেন। তিনি লেখেন, ‘জন্মদিনে আমার কোন প্রোগ্রাম নাই।

বেশ কয়েক বছর আগে আমি ঘোষনা দিয়ে সকলকে জানিয়েছি, আমি আমার জন্মদিন (২৫ মার্চ) কখনও ঘটা করে পালন করবো না।’

কারণ হিসেবে ২৫ মার্চের একটা ভয়াল স্মৃতি তুলে ধরেন এই অভিনেতা। তিনি লেখেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ। আমরা তখন ছিলাম পুরান ঢাকার কাগজীটোলায় আমার চাচাতো ভাইয়ের বাসায়। ২৪ মার্চ রাত ১১ টার দিকে বাসার সবাই ঘুমিয়ে পরেছি।

১২ টার কিছুক্ষণ পর তীব্র গোলাগুলির শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙে গেলো। আমরা তখন বুঝতে পারিছিলাম না। ঘটনা কি? কেন এত গোলাগুলির শব্দ! বাসার সবাই ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে রইলাম। অনবরত গুলির শব্দে আমাদের কান বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। আমরা ছিলাম টিনসেড বাসায়। কোন দিক থেকে টিন ভেদ করে আমাদের শরীরে এসে গুলি লাগে  এই ভয়ে আমার মা আমাদের চার ভাই বোনকে চৌকির নিচে বসিয়ে রাখলেন। ভোরের দিকে এক লোক দৌড়ে  এসে আমাদের জানালেন, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী  রাত ১২টা থেকে ঢাকা শহরে আক্রমণ শুরু করেছে। নির্বিচারে নিরীহ  মানুষ হত্যা করছে। রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ঢুকে গুলি চালিয়ে ছাত্র-ছাত্রী হত্যা করছে। রাস্তা ঘাটে যাকে পাচ্ছে তাকে হত্যা করছে। ঢাকার রাজপথ রক্তে ভেসে গেছে। লোকটির কথা শুনে বাসার সবাই হতভম্ব। লোকটি এক নিশ্বাসে কথাগুলি বলে আবার দৌড়ে চলে গেল।’
এরপর কি হলো? ফারুক আহমেদ বলেন, ‘সকালবেলা মা আমাদের চৌকির নিচ থেকে বের করে আনলেন। সামান্য কিছু নাস্তা দিলেন। আমরা নাস্তা খেয়ে আবার চৌকির নিচে মাথা নিচু করে বসে রইলাম। গোলাগুলির শব্দ তখন আরও তীব্র হয়েছে। পাশাপাশি বসেও একজনের কথা আর একজন শুনতে পাচ্ছিলাম না। এভাবেই আমাদের ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রি এবং সারাদিন ভয়াবহ আতংকের মধ্যে কেটেছে। আজও ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, ভয়াল কালরাত্রি আমার চেখের সামনে ভেসে উঠে। আমি বুকের মধ্যে এক তীব্র বেদনা অনুভব করি।’

এই তীব্র বেদনার কারণেই তিনি আর কখনো জন্মদিন পালন করেননি। তিনি বলেন,‘তাই আমি প্রতিজ্ঞা করেছি জীবনে ২৫ মার্চ আমি আমার জন্মদিন পালন করবো না।’

তবে যারা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানান এই অভিনেতা। একই সঙ্গে এই কালোরাত্রিতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনায় হাজার শহীদকে স্মরণ করেন তিনি।

Link copied!