ফের বিয়ে করছেন দেশের জনপ্রিয় গায়ক ও অভিনেতা তাহসান খান। খবরটি প্রকাশের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এরপর তাহসান জানান, এখনো বিয়ে করেননি। এবার নতুন একটি ছবি প্রকাশ করেছেন তাহসান। ছবিটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
সিঙ্গেল লাইফের অবসান ঘটিয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন এই অভিনেতা। পাত্রী যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনা করা মেকআপ আর্টিস্ট রোজা আহমেদ। শনিবার (৪ জানুয়ারি) ফেসবুকে স্ত্রীর ছবি শেয়ার করে তাহসান জানান দেন নিজের নতুন জীবনের। এর আগে সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাহসান ও রোজার একাধিক ছবি ভাইরাল হয়।
এদিকে, তাহসানের নববধূ রোজা আহমেদের পরিচয় জানতে গতকাল সকাল থেকেই মুখিয়ে ছিলেন অনেকেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে হইচই পড়ে যায়। এরই মধ্যে খবর ছড়ায়, বরিশালের এক সময়ের যুবলীগ নেতা ফারুক আহাম্মদ ওরফে ‘পানামা ফারুক’ তাহসানের শ্বশুর। ২০১৪ সালে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন পানামা ফারুক। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়। এ আলোচনার মাঝেই বাবা সম্পর্কে রোজার আবেগঘন এক স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়েছে। পোস্টটি গত বছরের জুন মাসে করেছিলেন রোজা।
রোজার ফেসবুক পেজ ‘রোজাস ব্রাইডাল মেকওভার’ পেজে এ স্ট্যাটাসটি দেয়া হয়।
যেখানে বাবাকে নিয়ে আবেগঘন কথা লিখেছেন রোজা আহমেদ। বাবাকে হারানোর পর কি কষ্টে জীবন গিয়েছিল তার সে কথা জানিয়েছেন রোজা। নিজের দীর্ঘ স্ট্যাটাসে রোজা লিখেছেন, ‘সেলফিটা একটু আগেই তুলেছি। সাধারণত আমার অনেক ছবি তোলা হয়। কিন্তু আজ এই সেলফিটা তোলার সময় চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছিল।
অনেক সময় ধরে কাঁদলাম। কিন্তু কি মনে করে কাঁদছি বা কেন কাঁদছি তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমি বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। তাই সব থেকে আদরের ছিলাম সবার। আর বাবা আমাকে সব সময় বলতেন ‘আমার ছোট্ট পরীটা কইরে’। সেই সময় বরিশাল শহরে আমাদের পরিবারের বেশ প্রভাব ছিল। ছোট বেলায় কখনো কমতি পাইনি। এর বাসায় দাওয়াত, তার বাসায় দাওয়াত আর যেতেই হবে কারণ আমাদের ছাড়া দাওয়াত অসম্পূর্ণ হবে। এমন দিন গিয়েছে দিনে ৪টা দাওয়াতেও অংশ নিয়েছি। শুধু দেখা করে আসার জন্য। ’
রোজা লেখেন, ‘হঠাৎ বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ওপারে। যতদিনের হায়াত তিনি নিয়ে এসেছেন ততোদিন ছিলেন আমাদের সাথে। অভিযোগ তো অনেক জমা আছে, বাবার সেই ছোট্ট পরীটার, কিন্তু অভিযোগ কার কাছে করব? আর বাবা শুধু আমাদের ছেড়ে চলে যাননি, সাথে সাথে যে মানুষগুলো আমাদের এতো সম্মান করতেন তাদের ভালোবাসাও চলে গেল আমাদের ওপর থেকে। আর সেই দিনটাতেই প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম, যে ভালোবাসা আমরা পেয়েছি তা সবই বাবাকে ঘিরে আর সাথে অনেক অনেক স্বার্থ। বাবা চলে যাওয়ারি ঠিক ২ মাসের মাথায় আমার এক রিলেটিভের বিয়ে।
আমরা অনেক ঘনিষ্ঠ ছিলাম একে ওপরের, কিন্তু বিয়েতে দাওয়াত পেলাম না। যে রিলেটিভরা সেই বিয়েতে অংশ নিয়েছে সবাই ফোন করতে শুরু করল মাকে। কেন আমরা গেলাম না, কোথায় আমরা? বরিশালে আছি কিনা এই সেই। সেদিন সারারাত বসে দেখেছি মায়ের সেই সরল মনের কান্না। আপনারা লেখাটা পড়ে ভাবতে পারেন, দাওয়াত পাইনি বলে কাঁদছি? কিন্তু দাওয়াতের জন্য নয়, একই দালানে সবাই আনন্দ করছে, আমি, মা আর ছোটো ভাই উৎস তখন বাসার এক কোণে। খুব চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল, বাবা তুমি একটু দেখে যাও, যাদের জন্য এতো করেছ তারা আমাদের সব ফিরিয়ে দিচ্ছে। ’
তাহসানের নববধূ আরও লিখেছেন, ‘বাবা আমাদের জন্য অনেক কিছুই রেখে গেছেন, দাদা ভাইয়ের অনেক আছে কিন্তু কিছুই গোছানো না, কে বুঝেছেন যে এতো অকালে উনি চলে যাবেন আমাদের ছেড়ে! আর দাদার সব সম্পত্তিতেই চাচা-ফুফুদের ভাগ আছে। মায়ের খুব অল্প বয়সেই বিয়ে হয়েছে। পড়াশোনার সুযোগ পায়নি। আর আমি চলে আসি তাদের কোলে। আমার মা খুব সরল মনের, দিন-দুনিয়ার কিছুই বোঝে না। সে যে নিজের ভয়েস রেইজ করবে বা তার সেটা রেইজ করার অধিকার আছে সেটা তার ধারণার বাইরে। কখনো তার সেই সাহসটাই ছিল না যে তার শ্বশুরকে বলবে, বাবা আমাদের সম্পত্তিটুকু আমাদের বুঝিয়ে দিন। আর উৎস তো তখন অনেক ছোট। আমরা দুই ভাই-বোন তখন পিচ্চি পিচ্চি। আমাদের পড়াশোনার খরচ তখন একদম হিসাব করে টায় টায় দেওয়া হতো মায়ের হাতে। তাই কিছু খেতে ইচ্ছে করলে বলতাম না যাতে উৎস যেটা চায় সেটা যাতে পায়। আমার দিক থেকে একটু কম হলেও সমস্যা নেই। ’
‘বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই প্রস্তাব আসা শুরু করে। এই রিলেটিভ একে আনে ওই রিলেটিভ ওকে আনে। সেই সময় আমি প্রথম ভয়েস রেইজ করেছি যে, আমার বয়স কম আর বাবা মারা গেছেন তো কি হয়েছে! বাবার আর আমার স্বপ্ন তো মারা যায়নি! ওই দিন কথাটায় খুব মাইন্ড করেছিল আমার কাছের লোকজন। বড়দের মুখে মুখে কথা, আমি আর মানুষ হব না। আর সেই থেকেই রটানো হয় কতো কথা। সারাদিন নাকি ছেলেদের সাথে ঘুরি, আমার বন্ধু-বান্ধব সার্কেল ভালো না, পর্দা করি না আরও কতো কি! মেয়ে তো নিশ্চয়ই প্রেম করে আর না হলে এতো ভালো প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়? আর প্রতিদিন এভাবেই বাসায় অভিযোগ আসা শুরু করে। কিন্তু আমার ভয়েস রেইজে সবাই এভাবে রিঅ্যাক্ট করবে বুঝতে পারিনি।
আমার মা এতো অভিযোগ শুনতে শুনতে বললেন, তুই আমাকে ছুঁয়ে বল এসব অভিযোগ কি সত্যি? আমি মাকে ছুঁয়ে বললাম, না মা সব মিথ্যে। আমি তো স্কুল আর বাসা বাদে কোথাও যাই না। এই বলে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলাম মায়ের সাথে। ওইদিনের পর থেকে মা আমার সাথে নিয়মিত কোচিং-এ যেতেন আবার এসে বাসার সবার জন্য রান্না করতে হতো, খুব কষ্ট হয়ে যেত তার। তখন নিজের কাছে মনে হত আমি সবার জন্য একটা বোঝা, সব ক্ষেত্রেই আমার দোষ। দিনের পর দিন এভাবেই চলতে থাকে। হঠাৎ দাদাভাই অসুস্থ হয়ে পড়েন, আর সেই থেকে আমার সাথে কোচিং-এ যাওয়া বন্ধ করে দেন মা। কারণ তাদের সেবা যত্ন করতে হতো মাকেই। তখন থেকেই একা একা চলা শুরু করলাম। ’
জানা গেছে, রোজার বাবার নাম ফারুক আহম্মেদ ওরফে পানামা ফারুক। যিনি ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন।
স্থানীয়রা জানায়, ১৯৯৩ সাল থেকে ফারুক আহম্মেদ ওরফে ‘পানামা ফারুক’ যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় এলে দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে পানামা ফারুক এক আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়ায়। তবে ২০০১ সালের পর দীর্ঘ ৫ বছর পানামা ফারুক আত্মগোপনে ছিলেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলেও তাকে ওইভাবে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। তবে ২০১৩ সালের দিকে নিজের অবস্থান জানান দিতে গিয়ে আলোচনায় আসেন পানামা ফারুক।