• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাউল-ফকিরদের ওপর নির্যাতন, বিশ্বজিৎ, মাকসুদ, ফারুকীসহ ৫৫ ব্যক্তির প্রতিবাদ


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২৪, ০৮:৩৩ এএম
বাউল-ফকিরদের ওপর নির্যাতন, বিশ্বজিৎ, মাকসুদ, ফারুকীসহ ৫৫ ব্যক্তির প্রতিবাদ

বাউল-ফকিরদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ ও তাদের সুরক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করার দাবি জানিয়েছেন কুমার বিশ্বজিৎ, মাকসুদুল হক (মাকসুদ), প্রিন্স মাহমুদ, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, শেখ মনিরুল আলম টিপু, বাপ্পা মজুমদার, শহীদ মাহমুদ জঙ্গীসহ ৫৫ শিল্পী-সাহিত্যিক। 

গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন ‘বাংলা ফাইভ’ ব্যান্ডের ভোকালিস্ট সিনা হাসান।

বিবৃতিতে বলা হয়, “২৬ জুন সকালে দুর্বৃত্তরা লালন অনুসারী চায়না বেগমের বাড়িঘর ভাঙচুর করে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধন করেছে। এমনকি রাতের আঁধারে সেখানে তাকে পেলে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে আমরা লক্ষ্য করি যে বাউল, ফকির, সাধকদের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া, তাদের ঘরবাড়ি ও বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর করা, তাদেরকে বিতাড়িত করা, সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করাসহ নানান রকমের আগ্রাসন ঘটে।’

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, “বাউল, ফকির, বয়াতি, লালন অনুসারী এবং স্বভাবকবিদের ওপর আগ্রাসন ও নির্যাতন মধ্যযুগে, ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শাসনামলে ছিল, কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে মানবতাবাদী এই মানুষদের ওপর নির্যাতনের বা আগ্রাসনের ঘটনা মোটেও কাম্য নয়। মধ্যযুগে মুসলিম ও হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বাউল ও ফকিরদের ব্যাপক প্রভাব ছিল। তারা সাধারণত সমাজের প্রান্তিক মানুষদের মধ্যে থেকে উঠে আসতেন এবং তাদের জীবনযাত্রা ও দর্শনের মাধ্যমে সমাজে শান্তি, মানবতা ও প্রেমের বার্তা প্রচার করতেন। ব্রিটিশ সরকার তাদের কার্যক্রমকে বিপ্লবী ও বিদ্রোহী হিসেবে দেখত এবং তাদের দমন করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করত। স্বাধীনতার পরেও বাউল ও ফকিরদের ওপর নির্যাতনের বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন সময় তারা জালিম, দখলদার স্বার্থান্বেষী মহল ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু আজকের এই যুগে তাদের ওপর যে আগ্রাসন হচ্ছে, তা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা মনে করি, এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের বিশেষ নজর দেয়া উচিত এবং তাদের সুরক্ষার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা আবশ্যক।”

বিবৃতিতে শিল্পীরা বলেন, “আমরা বাংলাদেশের শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী ও সাহিত্যিকরা উক্ত বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমরা অবগত আছি যে স্থানীয় প্রশাসন লালন অনুসারী চায়না বেগমের ঘটনাটি আমলে নিয়েছেন, কিন্তু এ ধরনের ঘটনা যেন আর কোথাও আর কখনো না ঘটে সেজন্য আমরা রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ প্রত্যাশা করি। আমরা মনে করি এই আগ্রাসন শুধু সাংস্কৃতিক আগ্রাসনই নয়, বরং এটি আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও জনগণের প্রতি সম্মানকেও খর্ব করে। তাই আমাদের আহ্বান এই যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার যেন অবিলম্বে বাউল-ফকির নির্যাতনের ঘটনা রোধে কঠোর নির্দেশনা দেয় এবং তাদের সুরক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে।

রাষ্ট্র বা সরকারের কাছে বিবৃতিদাতারা কয়েকটি দাবির কথা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো—(১) নিরাপত্তার নিশ্চয়তা: বাউল, ফকির, বয়াতি ও লালন অনুসারীদের নিরাপত্তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ। (২) আইনি সুরক্ষা: তাদের ওপর যেকোনো আক্রমণ বা নির্যাতনের দ্রুত বিচার ও শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করা। (৩) সাংস্কৃতিক সম্মান: তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধা না দিয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান। (৪) সচেতনতা বৃদ্ধি: সাধারণ জনগণের মধ্যে বাউল, ফকির, বয়াতি ও লালন অনুসারীদের সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।”

শেষে বলা হয়, “বাউল, ফকির, বয়াতি, লালন অনুসারী এবং গ্রামীণ স্বভাবকবিরা আমাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। তাদের নির্যাতন ও অবমাননা শুধুমাত্র তাদের ব্যক্তিগত জীবনে আঘাত হানে না, বরং এটি আমাদের জাতীয় গৌরব ও সংস্কৃতিতে আঘাত হানে। তাই আমরা অবিলম্বে তাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করার জন্য রাষ্ট্রের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের এবং তাদের সুরক্ষার ব্যাপারে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনকে নির্দেশনা প্রদান করার আহ্বান জানাচ্ছি এবং তাদের সম্মান নিশ্চিত করার জন্য জোর দাবি করছি।”

বৃতিতে সম্মতি প্রকাশ করা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্য রয়েছেন কুমার বিশ্বজিৎ (সংগীত শিল্পী), প্রিন্স মাহমুদ (সংগীতজ্ঞ), মাকসুদুল হক (সংগীতশিল্পী, মাকসুদ ও ঢাকা), শারমিন লাকী (আবৃত্তিশিল্পী), বাপ্পা মজুমদার (সংগীতশিল্পী, দলছুট), মনোজ প্রামাণিক (অভিনেতা ও শিক্ষক), মোস্তফা সরয়ার ফারুকী (চলচ্চিত্র নির্মাতা), রাহুল আনন্দ (শিল্পী, জলের গান), শফিক তুহিন (গীতিকার, সুরকার, সংগীত শিল্পী), মানস চৌধুরী (শিক্ষক ও সাহিত্যিক), কিশোর দাশ (সংগীত শিল্পী), জয় শাহরিয়ার (সংগীতশিল্পী), আহমেদ হাসান সানি (সংগীতশিল্পী), আলতাফ শাহনেওয়াজ (সাহিত্যিক), আরিফুর রহমান (চলচ্চিত্র নির্মাতা), আরমীন মূসা (সংগীতশিল্পী), উন্মেষ রায় (শিক্ষক), কনক আদিত্য (শিল্পী), কে পি রাজিব (সংগীতশিল্পী), কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় (চলচ্চিত্র নির্মাতা), গৌতম কে শুভ (সংগীত গবেষক), জর্জ লিংকন ডি কস্টা (সংগীতশিল্পী, আর্টসেল), জিয়াউর রহমান (সংগীতশিল্পী, শিরোনামহীন), জুয়েল কলিন্দ (কবি), রাশেদ জামান (চিত্রগ্রাহক), রেজাউল করিম লিমন (সংগীতশিল্পী), শঙ্খ দাশগুপ্ত (চলচ্চিত্র নির্মাতা), শবনম ফেরদৌসী (চলচ্চিত্র নির্মাতা), শর্মি হোসেন (সংগীতশিল্পী), শহীদ মাহমুদ জঙ্গী (গীতিকবি), শাহরিয়ার শাওন (শিল্পী), শেখ মনিরুল আলম টিপু (সংগীতশিল্পী, ওয়্যারফেজ), শিবু কুমার শীল (সংগীতশিল্পী, মেঘদল) প্রমুখ।

Link copied!