• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনৈতিক পালাবদলে আলোচিত তারকারা


মো. বাবুল
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪, ০৬:০২ পিএম
রাজনৈতিক পালাবদলে আলোচিত তারকারা
শোবিজ অঙ্গনে বছরজুড়ে যারা ছিলেন আলোচনায়।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন শোবিজের অনেক তারকা। তারা প্রকাশ্যে রাজপথে থেকে সরকারকে হটিয়েছেন। এক পর্যায়ে ছাত্র-জনতার তোপের মুখে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। গঠন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরপর থেকেই শুরু হয় রাজনৈতিক পালাবদল। যে পালা বদলের খেলায় আত্নগোপনে গেছেন অনেক তারকা। আবার আলোচনাতেও রয়েছেন অনেকে। রাজনৈতিক পালাবদলে বছরের আলোচিত তারকাদের নিয়ে এই প্রতিবেদন।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
২০২৪ সালের রাজনৈতিক পালাবদলে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছেন জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সামাজিক মাধ্যমে তিনি যেমন সরব ছিলেন, তেমনি রাজপথেও দেখা গেছে তাকে। ছাত্র-জনতার তোপের মুখে শেখ হাসিনা দেশে ছাড়ার পর সংস্কার নিয়ে অনেক বেশি সরব ছিলেন ফারকী। সামাজিকমাধ্যমে একের পর এক মন্তব্য করার সুবাদে ডাক আসে উপদেষ্টা হওয়ার। এক্ষেত্রে সফল হন ফারুকী। এখন তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। এই নিয়েও চলছে আলোচনা। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া তার ‘৮৪০’ সিনেমা দিয়েও আলোচনায় রয়েছেন জনপ্রিয় এই চিত্রপরিচালক।

নির্মাতা আশফাক নিপুন
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজপথসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সরব ছিলেন নির্মাতা আশফাক নিপুন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাকে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য করা হয়। যদিও পরে ব্যস্ততা দেখিয়ে তিনি সরে যান সদস্য পদ থেকে। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনায় ছিলেন নিপুন।             

কনক চাঁপা
বরেণ্য সংগীতশিল্পী কনক চাঁপা। বিগত সরকারের আমলে কোণঠাসা ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রান্না করে সময় কাটাতেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরই ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হলে সংস্কার করা হয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ড। সেখানে নতুন সদস্য হয়েছেন কোকিলকণ্ঠী এই গায়িকা। এছাড়া বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যও করা হয়েছে তাকে। এই নিয়ে হঠাৎ করেই ব্যাপক আলোচনায় আসে গুণী এই সংগীতশিল্পী।

বেবী নাজনীন
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজনীতির পালাবদল ঘটলে দীর্ঘ ৮ বছর পর দেশে ফিরেই আলোচনায় আসেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনি দেশে ফিরেছেন গত ১০ নভেম্বর। বিমানবন্দরে তাকে স্লোগানে স্লোগানে স্বাগত জানান বিএনপির একদল কর্মী। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে নিজের পেশাগত কাজকর্মে বার বার নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিলেন বেবী নাজনীন। বাংলাদেশ বেতার-টিভি-মঞ্চ কোনো মাধ্যমেই স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারেননি। একপর্যায়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বেবী নাজনীন। তবে দেশে ফিরেই বর্তমানে স্টেজ ও গান রেকর্ডিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এই শিল্পী। তার ফিরে আসাটা ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে।

আজমেরী হক বাঁধন
জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও লাক্স সুপারস্টার আজমেরী হক বাঁধন। ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমা দিয়ে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছেন কান চলচ্চিত্র উৎসবে। বাঁধনের ব্যক্তি জীবনে ও রূপালী পর্দায় সাহসের সেই ছাপ সুস্পষ্ট। ছাত্র-জনতার আন্দোলন থেকে শুরু করে ভয়াল বন্যা পরিস্থিতিতেও তার সক্রিয় ভূমিকা দেখা গেছে। বাঁধন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই ছিলেন সরব।

শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই নয়, দেশ সংস্কারের দাবিতেও রাজপথে নেমেছিলেন। ছাত্র-জনতার পক্ষে হত্যা, গুম, নির্যাতনসহ সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে ব্যাপক আলোচনায় ছিলেন অভিনেত্রী। শুধু তাই নয়, সংস্কৃতি ও নারী অঙ্গণে তার প্রতিবাদ ছিল লক্ষণীয়। নারীদের নিয়ে ‘শেকল ভাঙার পদযাত্রা’ স্লোগানে মধ্যরাতে পথে নেমে ব্যাপক আলোচনায় ছিল বাঁধন। সবশেষ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারকের দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়ে শেষ আলোচনায় আসেন এই অভিনেত্রী।

সিয়াম আহমেদ
দেশের অপশক্তিকে রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ব্যাপক আলোচনায় ছিলেন চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তার সরব উপস্থিতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব বিষয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন চিত্রনায়ক সিয়াম। তাদের সঙ্গে মাঠে নেমে সোচ্চারও ছিলেন।

কাজী নওশাবা আহমেদ
শিল্পী কনক চাঁপা ছাড়াও শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য করা হয়েছে অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদকে। তিনি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জেল খেটেছিলেন। তখন থেকেই তিনি ছিলেন আলোচনায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আরও বেশি আলোচনায় আসেন। এরপরই তিনি ‘বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট’ এর সদস্য পদ পান। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালে ব্যাপক আলোচনায় ছিলেন কাজী নওশাবা।

 সাদিয়া আয়মান
বেলী’ কিংবা ‘মায়াশালিক’ নামে দর্শকমহলে বেশি পরিচিত সাদিয়া আয়মান। অল্প সময়ের ক্যারিয়ারে নানামাত্রিক চরিত্রে অভিনয় করে ইতোমধ্যেই দারুণ দর্শকপ্রিয়তা কুড়িয়েছেন তরুণ এই অভিনেত্রী। কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছিল দেশের শিল্পী সমাজ। সাদিয়া ছিলেন নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগকারী শিক্ষার্থীদের দলে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে উচ্ছ্বসিত অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান দেশত্যাগী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলেন, “ম্যাডাম, আপনি গেছেন ভালো কথা, কিন্তু যারা জাতীয় পুরস্কারের আশায় ছিল, তাদের পুরস্কারটা দিয়ে যাইতেন।”

তার আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহত শিক্ষার্থীদের প্রতি সমবেদনা না জানিয়ে বিটিভি ভবনের ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে যাওয়া অভিনয়শিল্পীদের সমালোচনা করে ফেসবুক পোস্টে সাদিয়া লিখেছিলেন, “শেম অন ইউ গাইজ।” বিটিভি প্রাঙ্গণে যাওয়া শিল্পীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও লিখেছিলেন, “নব্বই দশকে যাদের অভিনয় টিভি স্ক্রিনে দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি, এখন তাদের বাস্তব জীবনের কর্ম দেখে আমরা বিস্মিত এবং লজ্জিত।”

সাদিয়া আরও লেখেন, “দুঃখের সহিত জানাচ্ছি, আপনাদের প্রতি শ্রদ্ধা হয়তো আর কখনো ফিরে আসবে না।” তরুণ অভিনেত্রীর এমন স্ট্যাটাসে সাহসের প্রশংসা করেছেন অনেক ভক্ত। ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পালাবদলের পরিপ্রেক্ষিতে অভিনেত্রীর এসব মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

গায়ক তাসরিফ খান
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সবর থাকেন এই সংগীতশিল্পী। কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে নানা ধরনের স্ট্যাটাস দিয়েও আলোচনায় ছিলেন তাসরিফ খান।

Link copied!