• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্পীর চোখে গুলি-হত্যা, রক্তে রঞ্জিত রাজপথ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২৪, ০৬:০৪ পিএম
শিল্পীর চোখে গুলি-হত্যা, রক্তে রঞ্জিত রাজপথ
আস্থা-অনাস্থা পারফরমেন্স আর্ট পরিবেশনা। ছবি: সংগৃহীত

সকাল থেকে রাজধানীতে চলছে অঝোর ধারার বৃষ্টি। এর মধ্যেই শত শত শিল্পী দাঁড়িয়েছেন সড়কের ওপর। এক সময় শুরু হয় মিছিল। হঠাৎ সেই মিছিলে চলে গুলিবর্ষণ। লাল রঙে রঞ্জিত হয়ে ওঠে শিল্পীদের শরীর। বৃষ্টির ধারায় মনে হচ্ছিল যেন রক্ত ঝরে পড়ছে শরীর থেকে।

এরপর মাইকে গুলিতে নিহত আবু সাঈদসহ একেক জন নিহত মানুষের নাম ডাকা হতে থাকে। স্কুলে যেমন প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের ‘রোল কল’ করা হয়, ঠিক তেমন করে। আর অংশগ্রহণকারীরা ‘উপস্থিত’ বলে সাড়া দিতে থাকেন। নাম না জানাদের জন্য বলা হয়েছে ‘অজ্ঞাত’। শিল্পীদের সঙ্গে জনতাও ‘উপস্থিত’ বলে সাড়া দেন।

না, এটা বাস্তব কোনো ঘটনা নয়, শিল্পীদের পরিবেশিত ‘আস্থা-অনাস্থা’ নামের আবেগময় ‘পারফরম্যান্স আর্ট’। ‘গণহত্যা ও নিপীড়নবিরোধী শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে শুক্রবার (২ আগস্ট) বেলা ১১টায় ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে আবাহনী মাঠের সামনে আয়োজিত প্রতিরোধী শিল্পীদের ব্যতিক্রমী পরিবেশনা।

এসময় সময় তীব্র বেদনাবিধুর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের জের ধরে অকালে ঝরে যাওয়া সন্তানদের কথা স্মরণ করে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সাধারণ মানুষও তাদের হত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন এসময়।

পারফরম্যান্সে অংশ নেন অসিত রায়, নুজহাত তাবাসসুম, আয়মান, আনন, জোহান, সাজন, জাহিদ ইসলাম, জাকির হোসেন, সোহেলী, আফসানা শারমিন, অপূর্ব, অনিকা, আদৃতা, অহর্নিশ, শেহজাদ চৌধুরীসহ অনেকে।

এর আগে শিল্পীরা কোটা আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য নিয়ে দীর্ঘ ক্যানভাসে লাল রঙের প্রতিবাদী চিত্র অঙ্কন করেন। বৃষ্টির কারণে অঙ্কন দ্রুত শেষ করতে হয়। তবে তারপরই তারা পারফরম্যান্স আর্ট পরিবেশন করেন। পথচলতি শত শত মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যতিক্রমী প্রতিবাদী আয়োজনে অংশ নেন।

পারফরমেন্স আর্টে রক্তাক্ত রাজপথ। ছবি: সংগৃহীত

ছুটির দিনে সকাল থেকেই বৃষ্টি ঝরছিল। সেই বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সমাবেশে দৃশ্যশিল্পী, আলোকচিত্রশিল্পী, পারফরম্যান্স–শিল্পী, সংগীতশিল্পী, কবি, লেখক, গবেষক, স্থপতি, শিল্প সংগঠকসহ সাধারণ নাগরিক অংশ নেন।

শত শত শিল্পী ও সাধারণ মানুষ ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানান। তারা নিহত হওয়ার সঠিক সংখ্যা প্রকাশ, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত, বিচার ও হত্যার দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগের দাবি তোলেন।

সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে ধীরে ধীরে সমাবেশ বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে তা দীর্ঘ মানববন্ধনের পরিণত হয়। আয়োজকদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও স্লোগানে কণ্ঠ মেলান। চারপাশে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তারা আয়োজনে কোনো বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেনি।

‘প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা। ছবি: সংগৃহীত

‘পারফরম্যান্স আর্ট’ পরিবেশন ছাড়াও সংগীতশিল্পীরা উদ্দীপনাময় গণসংগীত ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন। আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য ‘জনতায় আস্থা, স্বৈরাচারে অনাস্থা’ এই স্লোগানসহ ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ এমন বিভিন্ন স্লোগানে এলাকা মুখর করে তোলা হয়। গান, আবৃত্তি, স্লোগান ঘোষণা পাঠের মাঝেমধ্যে বক্তব্য দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। 

Link copied!