কলকাতায় বঙ্গীয় গ্রন্থাগার পরিষদের শতবর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অতিথিদের সশরীরে অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বরেণ্য সংগীতশিল্পী কবীর সুমন। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) এক অডিও বার্তায় ভারত ও বাংলাদেশের জনপ্রিয় এই শিল্পী বলেছেন, ‘আমার লজ্জা করছে। ধিক্কার জানাচ্ছি’। যেসব ছাত্র এই কাজটি করেছেন, তারা অন্যায় করেছেন।
কবির সুমন বলেন “তারা কিন্তু আসলে ভারতের যে স্পিরিট, ভারত আত্মার বিরোধিতা করেছেন। তারা ভারতকে ছোট করেছেন। ভারতকে যদি তারা তাদের মাতৃভূমি মনে করেন, সে মাতৃভূমির মুখ ম্লান করে দিয়েছেন।”
তিন দিনব্যাপী ওই অনুষ্ঠান শুরু হয় শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষী সভাগৃহে। তাতে আয়োজকদের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ থেকে চারজন কলকাতায় যান।
ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘এইসময়’-এর খবরে বলা হয়, “চারজন ডেলিগেট ঢাকা থেকে কলকাতায় পৌঁছেছেন। যথাযথ ভিসা, পাসপোর্ট নিয়েই এসেছেন তারা। অনুষ্ঠানে নানা বিষয়ে নিজেদের গবেষণাপত্র পাঠ করার কথা ছিল তাদের।”
খবরে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের অতিথিদের অংশগ্রহণের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিলেন ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও দাবি, তারা নিজস্ব সূত্রে খবর পেয়েছেন যে, ক্যাম্পাসে অশান্তির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
“দুইয়ে মিলে ক্যাম্পাসে একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি ডেলিগেটদের সশরীর হাজিরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।”
কবীর সুমন তার অডিও বার্তায় সংবাদমাধ্যমের এসব খবরও উদ্ধৃত করেন। তার বার্তাটি প্রকাশ পায় শান্তিসেতু (ShantiSetu) নামের একটি সংবাদমাধ্যমের ফেইসবুক পেইজে।
সেখানে তিনি বলেন, “সবাইকে নমস্কার ও আদাব জানাচ্ছি। আমার নাম কবীর সুমন; আমি কলকাতায় থাকি।
“খবর- বঙ্গীয় গ্রন্থাগার পরিষদের শতবর্ষ উপলক্ষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল শুক্রবার২০ ডিসেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর। আলোচনা, সেমিনার আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা থেকে ডেলিগেটরা এসেছেন।”
সংগীতশিল্পী কবীর সুমন বলেন, “বোধ হয় সন্ধ্যাবেলা একদল ছাত্র উপাচার্যের কাছে গিয়ে আপত্তি জানান। ক্যাম্পাসে বাংলাদেশিদের অ্যালাউ করা হবে না বলে জানায় তারা। তাদের একজনের নাম রনি ঘোষ।
“রনি ঘোষ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ভয় পেয়ে যান। ক্যাম্পাসে গোলমাল বিক্ষোভের ভয়। বাংলাদেশি ডেলিগেটদের বাদ দিয়ে অনুষ্ঠান হবে। যারা চলে এসেছেন তাদের হোটেল থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিতে বলা হয়েছে।”
এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে কবীর সুমন বলেন, “আমি ধিক্কার জানাচ্ছি। আমার বয়স ৭৬ চলছে। আমি এদেশের, ভারতের একজন আয়কর দাতা। আমার লজ্জা করছে এ খবরটা জেনে এবং সে সঙ্গে ভয় করছে।
“বাংলাদেশ ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র এবং প্রতিবেশী; প্রত্যক্ষ প্রতিবেশী। শ্রীলঙ্কা যেমন, বাংলাদেশ তেমনি প্রত্যক্ষ প্রতিবেশী। আমাদের অভিন্ন সীমান্ত রয়েছে। আমাদের অভিন্ন ভাষা, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের গান।”
বরেণ্য এই শিল্পী বলেন, “তৃণমূলের যিনি ছাত্র পরিষদের নেতা, রনি ঘোষ তিনি যদি ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি কোথাও শুনেও থাকেন, গাইবেন এমন আশা করতে পারছি না। যদি কোথাও শুনে থাকেন, জানবেন এ গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান। এটা বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শান্তা দত্ত দের বরাতে এই সময়ের খবরে লেখা হয়, “ছাত্রদের কাছ থেকে আপত্তি ওঠার পরে তিনি নিজস্ব সূত্রে খোঁজখবর নেন। তার দাবি, এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি নাগরিকদের উপস্থিতিকে হাতিয়ার করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও গোলমাল পাকাতে চাইছে কেউ কেউ।
“শান্তার কথায়, ‘আমরা প্রথমে ছাত্রছাত্রীদের বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু পরে বুঝতে পারি, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাই আসল। ক্যাম্পাসের কোনো ক্ষয়ক্ষতি আমরা চাই না। তাই বাংলাদেশের নাগরিকদের বাদ রেখেই এই অনুষ্ঠান করার জন্য আয়োজকদের বলা হয়েছে’।”
কবীর সুমন তার অডিও বার্তায় বলেন, “এর বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। এর বেশি কিছু আর বলার নেই। আমার ইচ্ছে করছে রাস্তায় নামতে। কিন্তু সম্ভব না আমার শারীরিক কারণে।
তিনি বলেন “আমার শরীর বিকল। অনেক বিধিনিষেধের মধ্যে ভাবতে হয়। আমার শরীর যদি একটুও সচল হত বা হয়ে ওঠে, আমি রাস্তায় নামব।”
‘শান্তিসেতু’ তাদের ওয়েবসাইটে নিজেদের পরিচয়ে লিখেছে, “শান্তিসেতু হল ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি সংবাদ সেতু, যা উভয় দেশের সাম্প্রতিক খবর, ঘটনাবলি এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আসছে।”
শিল্পী কবীর সুমন এর মূল উদ্যোক্তাদের একজন। ‘শান্তিসেতুর’ উদ্দেশ্য সম্পর্কে ওয়েবসাইটে তিনি লিখেছেন, “আমাদের লক্ষ্য হল দুই দেশের মানুষের মধ্যে সমঝোতা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা।”