হলিউড-বলিউডে অভিনেতা–অভিনেত্রীদের সন্তানদের চলচ্চিত্রে নাম লেখানোর ব্যাপারটি বেশ দেখা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র একদমই আলাদা। আলমগীর, ববিতা, কবরী, শাবানা, জসিম, ফারুকের মত অনেক সুপারস্টার আছেন, যারা নিজেদের সময়ে সিনেমায় দাপট দেখালেও তাদের সন্তানরা রুপালী পর্দা থেকে দূরে রয়েছেন। এই নিয়ে আক্ষেপ ঝরেছে চিত্রনায়িকা মৌসুমীর কথায়। প্রিয়দর্শিনীখ্যাত এ নায়িকার সন্তানরাও অভিনয়ে নেই।
একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলাপ করেছেন এক সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা। মৌসুমী বলেন, “ছেলেসন্তানদের ক্ষেত্রে বাধা না থাকলেও কন্যাসন্তানদের নায়িকা হতে দিতে চাইছেন না শিল্পীরা। সব নায়ক-নায়িকাকে দেখি তাদের ছেলেরা যদি সিনেমা করতে চায়, তাদেরকে না করেন না। কিন্তু মেয়ে কখনো যদি নায়িকা হতে চায়, সেটা নিয়ে সবাই একটু অমত পোষণ করেন।”
ঢাকাই সিনেমার সোনালী সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন ববিতা, সুচরিতা, কবরী, রোজিনা, শাবানা, অঞ্জনা, নূতন, পারভীন সুলতানা দিতি, চম্পা। এই নায়িকাদের মধ্যে কেউ প্রয়াত হয়েছে বাকিরা প্রায় সবাই অভিনয় থেকে দূরে রয়েছেন। তবে তাদের কারো সন্তানদের অভিনয়ে দেখা যায়নি। অভিনয়ে দেখা না গেলেও চলতি বছরে সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন দিতির মেয়ে লামিয়া চৌধুরী।
অন্যদিকে মান্না, জসীম, ইলিয়াস কাঞ্চন, রাজ্জাক, আলমগীর, জাফর ইকবাল, বুলবুল আহমেদ, রিয়াজ আহমেদ, ফেরদৌস—জনপ্রিয় এই অভিনেতাদের সন্তানদেরও রুপালি জগতের এই পেশাকে বাছাই করতে দেখা যায়নি।
এই তারকাদের মধ্যে মান্নার ছেলে সিয়াম ইলতিমাসকে নির্মাণে দেখা যাবে এমন খবর পাওয়া গেছে। নায়করাজ রাজ্জাকের দুই সন্তান বাপ্পারাজ ও সম্রাট দুজনকেই অভিনয়ে পাওয়া গেছে।
বুলবুল আহমেদের মেয়ে ঐন্দ্রিলা আহমেদকে কয়েক বছর আগে বিনোদন অঙ্গনে দেখা গেলেও বর্তমানে তিনি অনিয়মিত। অভিনেতা জসীমের সন্তানদের অভিনয়ে পাওয়া যায়নি, তবে সংগীতের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন তারা।
আলমগীরের মেয়ে আঁখি আলমগীর ‘ভাত দে’ সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছিলেন। যদিও পরে গানে নিয়মিত হলেও অভিনয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে মৌসুমী বলেন, “আঁখি আলমগীর খুব সম্ভাবনাময় ছিল। তাকে কিন্তু ভাইয়া (আলমগীর) কাজ করতে দেননি। ও খুবই সুন্দর মিষ্টি দেখতে ছিল। সে সময় একঝাঁক নতুন মুখ আসছিল। কিন্তু আঁখিকে দেওয়া হয়নি। তাকে পেলে আমরা খুব ভালো একজন নায়িকা পেতাম। চম্পা আপার মেয়েও কিন্তু অনেক কিউট। চম্পা আপা তাকে কখনো নায়িকা হতে উৎসাহ দেননি। দেখা যায় যে আমাদের অনেকেরই মেয়ে আছে, যাদের আগ্রহ থাকার পরও সিনেমায় আসতে দেওয়া হয়নি। অন্যভাবে বড় করা হয়েছে। কেন যেন আর্টিস্ট হওয়ার ব্যাপারে সবার বাধা।”
মৌসুমী আরও বলেন, “এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন দোয়েল আপা, তিনি অনেক সময় দিতেন (প্রার্থনা ফারদিন দীঘি) দীঘিকে। আপা আমাকে বলেছিলেন, আমার খুব ইচ্ছা দীঘিকে নায়িকা হিসেবে তৈরি করার। আমি নিজে যা মেইনটেইন করতে পারিনি। আমি বড় জায়গায় যেতে পারতাম। এত সাপোর্ট পেয়েও আমি আমার জায়গাটা ধরে রাখতে পারিনি। এটা আমি দীঘির মধ্যে দেখতে চাই।
সে সময় আপাকে আমি প্রশ্ন করলাম, দীঘির পড়াশোনার ক্ষতি হবে না? তখন বললেন, উঠতি বয়সে তাকে একটা ব্রেক দেব, গ্যাপ দেব। তারপর আবার যখন ফিরবে তখন নায়িকা হয়ে ফিরবে। তাকে একদম তৈরি করে ফেরাব। আমার খুব ভালো লেগেছিল এটা শুনে। একটা মেয়ে বাচ্চাকে নিয়ে যখন এমন প্ল্যান করা হয়, তাকে একদম ছেড়ে না দিয়ে, তার সঙ্গে সাপোর্টিভ হয়ে যদি একটা কিছু করা যায়, অবশ্যই ভালো রেজাল্ট আসে।”