নব্বইয়ের দশকের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ। তার স্টাইল, ফ্যাশন সেন্স এখনো মুগ্ধ করে দর্শকদের। ১৯৭১ সালের এই দিনে (১৯ সেপ্টেম্বর) সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন ক্ষণজন্মা নায়ক সালমান শাহ। বেঁচে থাকলে আজ তিনি পা রাখতেন ৫৪-তে। বিশেষ এই দিনটিতে সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের অনেকে স্মরণ করছেন তাদের প্রিয় নায়ককে।
ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব হওয়া এ নায়ক ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তবে অল্প ক’দিনের ক্যারিয়ারেই জায়গা করে নিয়েছেন দর্শক হৃদয়ে। যে কারণে মৃত্যুর এত বছর পরও তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ সিনেমা প্রেমীরা।
সালমান শাহর মৃত্যুর রহস্য এখনও অজানা। তিনি কি আত্মহত্যা করেছেন নাকি খুন হয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন আছে ভক্তদের হৃদয়ে। মৃত্যুর পর থেকে তাকে পরিকল্পিতভাবে ‘হত্যা’ করা হয়েছে, এমন অভিযোগ করছেন সালমানের মা নীলা চৌধুরী।
অভিনেতার মার দাবি, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেনি। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, কিছুদিন আগেই লন্ডন থেকে এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানান তারকার মা। সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে তার মায়ের এমন দাবিতে বারবার আঙুল ওঠে অভিনেতার স্ত্রী সামিরার দিকে।
কেননা তার মা এ ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। যেখানে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে সালমানের স্ত্রী সামিরাকে। বিষয়টি নিয়ে বারবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সালমান শাহ হত্যায় তার স্ত্রীকে দোষারোপ করা হয়ে আসলেও কখনো এ নিয়ে কথা বলেননি সামিরা হক।
অভিনেতার স্ত্রী বারবার নিজেকে আড়াল রাখতে চেয়েছেন। তবে যা বলার তা আদালতে বলেছেন। কখনো সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে দেখা যায়নি তাকে। তবে এবার সংবাদ মাধ্যমে সালমান শাহ হত্যা নিয়ে কথা বলেছেন সামিরা।
মৌসুমী ছিলেন সালমান শাহর প্রথম নায়িকা। কিন্তু খুব বেশি সিনেমাতে দেখা যায়নি তাকে। সালমান শাহর বেশিরভাগ সিনেমার নায়িকা ছিলেন শাবনূর। পরবর্তী সময়ে সালমান শাহ এবং শাবনূরের প্রেমের গুঞ্জনও শোনা যায়। কীভাবে শাবনূরের সঙ্গে সালমান শাহর অভিনয়ের শুরু সে প্রসঙ্গে সামিরা বলেন, ‘সালমান শাহ এবং মৌসুমী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অভিনয় না করার। এই ঘটনার শুরু একটা সিনেমার শুটিং সেট থেকে। শুটিং এর সময়ে খুব ছোট একটা বিষয় নিয়ে মৌসুমীর মা এবং সালমান শাহয়ের মায়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরবর্তীতে সালমান শাহ এবং মৌসুমী সিদ্ধান্ত নেয় তারা একসঙ্গে সিনেমা করবে না। এরপর আমরা নায়িকার সংকটের মধ্যে দিয়ে যাই। তখন শাবনাজ এবং নাইম বিয়ে করেন। বিয়ের পর গুজব শুরু হয় শাবনাজ অভিনয় ছেড়ে দিবেন। তখন তাই নতুন নায়িকা খুঁজতে হয়। পরে আমরা শাবনূরকে দেখার পর সিদ্ধান্ত নেই ওর সঙ্গেই কাজ করা হবে।’
সালমান শাহ এবং শাবনূরের প্রেমের গুঞ্জন নিয়ে সামিরা বলেন, “এই বিষয়টা এতো সহজে বলা যায় না। এর পেছনে অনেক বড় গল্প আছে। সেই গল্পটা আমি শুরু করলে শেষ করতে অনেক সময় লেগে যাবে। তবে সহজ প্রশ্নে কেউ যদি জানতে চায় সালমান শাহ এবং শাবনূরের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা তাহলে আমি এক বাক্যে বলবো, যে হ্যাঁ তাদের সম্পর্ক ছিল।”
শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্কের রেশ ধরে সালমান শাহর সঙ্গে সমস্যা হতো কিনা সে প্রসঙ্গে সামিরা বলেন, “হ্যাঁ এই বিষয়টা নিয়ে সমস্যা হয়েছে। আমি রাগ করে আমার বাবার বাসাতেও চলে গিয়েছিলাম। সালমান শাহ আমাকে অনেক বুঝিয়েছে, মাফও চেয়েছিল। পরে আমাকে মানিয়ে নিয়ে আসে। আমি দুইমাস পর ঢাকায় আমাদের বাসায় ফিরে আসি। সালমান শাহ আমাকে বলেছিল সে শাবনূরের সঙ্গে যে সিনেমাগুলোর চুক্তি আছে সেগুলো শেষ হলেই তার সঙ্গে আর কোনো সিনেমায় কাজ করবে না। এবং আমরা নতুন নায়িকা খুঁজবো। সে সব কথাগুলো রেখেছিল। ”
১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় সালমান শাহের। স্মার্টনেস ও ব্যক্তিত্ববোধের কারণে রাতারাতি তরুণ প্রজন্মের আইকনে পরিণত হন তিনি। চার বছরের ক্যারিয়ারে ২৭টি ছবিতে অভিনয় করেন এই নায়ক। যার অধিকাংশই সুপারহিট।
সোহানুর রহমান সোহানের পরিচালনায় নায়িকা মৌসুমীর বিপরীতে প্রথম সিনেমা ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ করে ১৯৯৩ সালে বাজিমাত করে দেন সালমান। এই সিনেমার মাধ্যমে ঢাকাই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি উপহার পায় সালমান-মৌসুমী জুটি। তবে সালমানের ক্যারিয়ারের ২৭টি সিনেমার ১৩টির নায়িকাই ছিলেন শাবনূর।
‘তুমি আমার’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘সুজন সখী’, ‘বিক্ষোভ’, ‘স্নেহ’, ‘প্রেম যুদ্ধ’, ‘কন্যাদান’, ‘দেনমোহর’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘আঞ্জুমান’, ‘মহামিলন’, ‘আশা ভালোবাসা’, ‘বিচার হবে’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘প্রিয়জন’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘জীবন সংসার’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেমপিয়াসী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘শুধু তুমি’, ‘আনন্দ অশ্রু’ ও ‘বুকের ভেতর আগুন’ সালমানের উল্লেখযোগ্য কাজ।
সিনেমায় আসার আগেই সামিরা হককে বিয়ে করেছিলেন সালমান। ১৯৯৬ সালে ৬ সেপ্টেম্বর ইস্কাটনে সালমান শাহর বাসা থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় মামলা করেন সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরিবারের পক্ষ থেকে বরাবরই দাবি করা হয়েছে সালমানকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু সালমান শাহর মৃত্যু এখনো তার ভক্তদের কাছে রহস্যজনক।