মুম্বাইয়ের পূর্ব বান্দ্রায় ছেলের অফিসের বাইরের রাস্তায় গুলি করে মারা হয়েছে মহারাষ্ট্রের সাবেক মন্ত্রী তথা এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকিকে। ভারতের সাবেক এই মন্ত্রীকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক স্ট্যাটাসে তারা লিখেছে, “আমাদের কারও সঙ্গে শত্রুতা নেই। কিন্তু সালমান খান বা দাউদ ইব্রাহিমকে যে বা যারা সাহায্য করবেন, তারা এখন থেকে দিন গুনতে শুরু করুন।’
জানা গেছে, মাস দুয়েক আগেই নাকি খুনের হুমকি পেয়েছিলেন প্রয়াত নেতা। তার মৃত্যুর পর সালমান খানের নিরাপত্তা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, ভাইজানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণেই খুন হয়েছেন বাবা সিদ্দিক।
প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুসংবাদে ভেঙে পড়েছেন সালমান। সাবেক এই মন্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, খবর পাওয়ামাত্র শনিবার ‘বিগ বস্ ১৮’-এর শুটিং বন্ধ করে দেন তিনি।
এদিকে বিপর্যস্ত নায়কের ছবি ভাইরাল হতেই বলিউডে প্রশ্ন, বন্ধুর মৃত্যুর জন্য নিজেকেই কি দায়ী করছেন সালমান? ভক্তরাও তাই মনে করছেন। বাবা সিদ্দিকের এই মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। ক্ষমা করতে পারছেন না নিজেকে।
কারণ লরেন্স লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের নিশানায় দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছেন সালমান খান। তাকে খুনের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি ঘনিষ্ঠদেরও একইভাবে হুমকি দিচ্ছেন গ্যাংয়ের লোকেরা। সেই হুমকি থেকেই কিনা বাবা সিদ্দিকিকে হত্যা!
বাবা সিদ্দিক হত্যার পর দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে মুম্বাই পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারা নিজেদের লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্য বলে পরিচয় দিয়েছেন। পুলিশও বলছে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত রয়েছেন এই গ্যাংয়ের সদস্যরা। ধারণা করা হয়, বিষ্ণোই গ্যাংয়ে অস্ত্র চালাতে দক্ষ এমন ৭০০ সদস্য রয়েছেন। তাই গতকালের ঘটনার পর গ্যাংটি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
লরেন্স বিষ্ণোইয়ের বয়স বেশি নয়। ১৯৯৩ সালে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে জন্ম তার। ২০১০ সাল পর্যন্ত তার জীবন কেটেছে রাজ্যের আবোহার শহরে। এরপর তিনি ডিএভি কলেজে ভর্তি হতে চণ্ডিগড়ে পাড়ি জমান। ২০১১ সালে যোগ দেন পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস স্টুডেন্টস কাউন্সিলে। সেখানে তার পরিচয় হয় ‘গ্যাংস্টার’ গোল্ডি ব্রারের সঙ্গে। এরপর ধীরে ধীরে অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
বিষ্ণোইয়ের বিরুদ্ধে দুই ডজনের বেশি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। রয়েছে হত্যা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ। যদিও এসব অভিযোগের কোনোটাই স্বীকার করেননি তিনি। আগেই বলা হয়েছে, ভারতজুড়ে তার গ্যাংয়ে ৭০০ বন্দুকধারী রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। নিজের গ্যাংয়ের এই সদস্যদের মাধ্যমে কারাগারে বসেও বাইরের অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি।
পড়ে। পরে তার গ্যাং মদ বেচকেনা ও অস্ত্র চোরাচালানে অর্থ লগ্নি করা শুরু করেন। হত্যাকারীসহ ভয়ংকর সব অপরাধীদেরও আশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়ে আসছেন তারা।
২০১৪ সালে রাজস্থান পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হয় লরেন্স বিষ্ণোইয়ের। এরপর তিনি কারাবন্দী হন। সেখান থেকেই আরও সংঘবদ্ধভাবে অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। কারাগারে থাকাকালে জস্বিন্দর সিং ওরফে রকি নামের আরেক অপরাধীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তাঁর। ২০১৬ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন রকি।
বন্দী অবস্থায়ও লরেন্স বিষ্ণোইয়ের প্রভাব-প্রতিপত্তি বেড়েই চলেছিল। রাজস্থানের ভারতপুর জেলায় যে কারাগারে তিনি বন্দী ছিলেন, সেখানকার কর্মকর্তাদের হাত করে নানা কার্যসিদ্ধি করতেন। ২০২১ সালে তাকে সেখান থেকে দিল্লির তিহার কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হয়। এই কারাগারের কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, আইপি কলের মাধ্যমে গ্যাংয়ের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন বিষ্ণোই।
সালমান খানকে সরাসরি হত্যার হুমকিও দিয়েছিলেন লরেন্স বিষ্ণোই। ভারতের যোধপুরে আদালতে এক শুনানি চলাকালে তিনি বলেছিলেন, ‘সালমান খানকে এই যোধপুরেই হত্যা করা হবে। তারপর তিনি আমাদের সত্যিকারের পরিচয় জানতে পারবেন।’
এরপর ২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় সালমান খানের বাসার বাইরে গুলি চালানো হয়। এই এলাকাতেই রোববার হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বাবা সিদ্দিক। সালমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও ছিল তার। সালমানের বাসার বাইরে গুলির পর সে সময় পুলিশ জানিয়েছিল, এ কাজের জন্য দুজনকে ভাড়া করেছিল বিষ্ণোই গ্যাং।