প্রয়াত বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক সাদি মহম্মদ। বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বাদ জোহর মোহাম্মদপুর জামে মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর ওই মসজিদেরই কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে বুধবার রাত ৯টার দিকে সাদি মহম্মদের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়। তার ছোট ভাই নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ জানান, ইফতার সেরে সাদি সংগীত চর্চা করেন। এর কিছু সময় পর হঠাৎ দেখেন ঘরের দরজা বন্ধ। তখন দরজা ভেঙে সাদির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের এডিসি মৃত্যুঞ্জয় দে সজল গণমাধ্যমকে জানান, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা, শিল্পী সাদি মহম্মদ আত্মহত্যা করেছেন।’ পরে তার মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়।
১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন সাদি মহম্মদ। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে শহীদ পিতার সন্তান। তার বাবার নাম শহীদ সলিমউল্লাহ। মায়ের নাম জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ। ১৯৭৩ সালে বাবা-মায়ের ইচ্ছায় বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলেন সাদি মহম্মদ। তবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মন বসাতে পারেননি এই সংগীতশিল্পী।
১৯৭৫ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াকালে গানের টানে স্কলারশিপ নিয়ে শান্তিনিকেতনে সংগীত নিয়ে পড়তে চলে যান সাদি মহম্মদ। বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্রসংগীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। সেই থেকে গানের জগতে পথচলা শুরু সাদি মহম্মদের।
রবীন্দ্রসংগীতে সাদি মহম্মদের মূল পরিচিতি গড়ে উঠলেও আধুনিক গানেও সমান গুরুত্বপূর্ণ। অসংখ্য রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে তার কণ্ঠে। সঙ্গে আধুনিক গানও। এ ছাড়াও তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।
২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মধ্যদিয়ে সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সাদি মহম্মদ। এছাড়া ২০০৯ সালে তার ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে তার ‘সার্থক জনম আমার’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।
১৯৭১ সালে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সি-১২/১০ বাড়িটি ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সলিমউল্লাহর বাড়িতে নিয়মিত বৈঠকে আসতেন দলের শীর্ষ নেতারাসহ শেখ কামালও।
একাত্তরের ২৬ মার্চ অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে সলিমউল্লাহর বাড়ি। পুড়িয়ে দেওয়া হয় তাদের পুরো বাড়ি। পাশাপাশি গুলি করে হত্যা করা হয় সাদি মহম্মদের বাবা সলিমউল্লাহকে। পরবর্তীতে তার বাবার নামেই ঢাকার মোহাম্মদপুরের সলিমউল্লাহ রোডের নামকরণ করা হয়।
২০১২ সালে তাকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করে চ্যানেল আই। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি থেকে পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার।