বরেণ্য অভিনেতা সাদেক বাচ্চুর মৃত্যুবার্ষিকী শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর)। ২০২০ সালের আজকের এই দিনে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান জনপ্রিয় এই অভিনেতা।
সাদেক বাচ্চুর জন্ম ঢাকায়। ১৯৫৫ সালের ১ জানুয়ারি তিনি পৃথিবীতে এসেছিলেন। যদিও তার পৈতৃক নিবাস চাঁদপুরে; তবে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। তার বাবা ছিলেন ডাক বিভাগের কর্মকর্তা। কিন্তু মাধ্যমিক পাস করার কিছুদিন পরই বাবাকে হারান সাদেক বাচ্চু। তাই মাত্র ১৫ বছর বয়সেই চাকরিতে যোগ দেন তিনি। বাবার পথ ধরে ডাক বিভাগেই চাকরি নেন তিনি। সেই চাকরি তিনি ২০১৩ সাল পর্যন্ত করেছেন।
সাদেক বাচ্চুর আসল নাম মাহবুব আহমেদ সাদেক। সিনেমার জন্য তাকে ‘সাদেক বাচ্চু’ নামটি দিয়েছেন কালজয়ী নির্মাতা এহতেশাম। ‘চাঁদনী’ সিনেমায় অভিনয়ের সময় তাকে এই নাম দেন তিনি। চাকরিতে যোগ দেয়ার আগে থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন সাদেক বাচ্চু। ১৯৬৩ সালে বেতারে অভিনয়ের মাধ্যমে তার এই রঙিন জীবনের সূচনা। তার অভিনীত প্রথম নাটক ছিল ‘খেলাঘর’। বছর দশেক তিনি বেতারে কাজ করেন। এরপর ১৯৭২ সালের দিকে ‘গণনাট্য পরিষদ’ নামে একটি থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন।
সেখানে নিজের অভিনয় আরও পাকাপোক্ত করে নেন সাদেক বাচ্চু। পরবর্তীতে তিনি ‘উন্মোচন’ নামে আরও একটি নাট্যদলের সঙ্গে কাজ করেছেন। এছাড়া সাদেক বাচ্চু নিজেও ‘প্রথম পদক্ষেপ’ নামে একটি দল করেছিলেন। এরপর ১৯৮৪ সালে তিনি ‘মতিঝিল থিয়েটার’ নামে আরেকটি দল গঠন করেন। এই দলের হয়ে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করে গেছেন।
বেতারে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছিলেন সাদেক বাচ্চু। তার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হন বিটিভির তৎকালীন প্রযোজক আব্দুল্লাহ ইউসুফ ইমাম। এরপর ১৯৭৪ সালে তাকে বিটিভির ‘প্রথম অঙ্গীকার’ নাটকে অভিনয়ের জন্য নির্বাচিত করেন। এর মাধ্যমেই সাদেক বাচ্চুর টিভি ভুবনের যাত্রা শুরু হয়। বর্ণিল সেই পথচলা ছিল অনেক দীর্ঘ। অন্তত ১ হাজার নাটকে অভিনয় করেছেন সাদেক বাচ্চু। যার মধ্যে রয়েছে ‘ঝুমকা’, ‘পূর্ব রাত্রি পূর্ব দিন’, ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’, ‘নকশী কাঁথার মাঠ’, ‘জোনাকী জ্বলে’ এবং ‘গ্রন্থিক গণ কহে’-এর মতো দর্শকনন্দিত নাটক।
সিনেমার পর্দায় সাদেক বাচ্চুর অভিষেক হয় ১৯৮৫ সালে। তার অভিনীত প্রথম সিনেমার নাম ‘রামের সুমতি’। ওই সময়ে তিনি নায়ক চরিত্রে অভিনয় করতেন। বেশ কয়েকটি সিনেমায় নায়কের ভূমিকায় অভিনয়ের পর ‘সুখের সন্ধানে’র মাধ্যমে খল চরিত্রে আসেন সাদেক বাচ্চু। আর এই চরিত্রই তাকে নিয়ে যায় খ্যাতির শীর্ষে। নেতিবাচক চরিত্রে তিনি হয়ে ওঠেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা।
বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে সাদেক বাচ্চু প্রায় ৫০০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। আশির দশক থেকে বর্তমান সময়ের প্রায় সব অভিনেতা-অভিনেত্রীর সঙ্গেই কাজের অভিজ্ঞতা ছিল তার।
সাদেক বাচ্চু অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সুজন সখি’, ‘ডিসকো ড্যান্সার’, ‘প্রিয়জন’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘লাল বাদশা’, ‘কে আমার বাবা’, ‘মরণ কামড়’, ‘বন্ধু যখন শত্রু’, ‘পিতা মাতার আমানত’, ‘কোটি টাকার কাবিন’, ‘আমার প্রাণের স্বামী’, ‘ময়দান’, ‘বধূবরণ’, ‘মায়ের হাতে বেহেস্তের চাবি’, ‘মন বসে না পড়ার টেবিলে’, ‘এক জবান’, ‘আমার স্বপ্ন আমার সংসার’, ‘মায়ের চোখ’, ‘বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না’, ‘জিদ্দি মামা’, ‘জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার’, ‘ঢাকা টু বোম্বে’, ‘জোর করে ভালোবাসা হয় না’, ‘তোমার মাঝে আমি’, ‘ভালোবাসা জিন্দাবাদ’, ‘রাজাবাবু- দ্য পাওয়ার’, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী ২’, ‘লাভ ম্যারেজ’, ‘ভালোবাসা সীমাহীন’, ‘আরো ভালোবাসবো তোমায়’, ‘রাজা ৪২০’, ‘বসগিরি’, ‘ধ্যাততেরিকি’, ‘ইন্দুবালা’, ‘পদ্মার প্রেম’ ও ‘বেপরোয়া’ ইত্যাদি।
দীর্ঘ অভিনয় জীবনে সাদেক বাচ্চুর প্রাপ্তি বলতে দর্শকদের অকৃত্রিম ভালোবাসা। এর বাইরে তিনি কেবল একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৮ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ খল অভিনেতা হিসেবে ‘একটি সিনেমার গল্প’-এর জন্য পুরস্কার লাভ করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে সাদেক বাচ্চু বিয়ে করেছিলেন শাহানাজ জাহানকে। তাদের সংসারে দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে।