• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগুনে পোড়া শহরে এসে র‌্যাপার বাদশাহ’র নীরবতা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৪, ১০:০৫ এএম
আগুনে পোড়া শহরে এসে র‌্যাপার বাদশাহ’র নীরবতা
আগুনে পোড়া শহরে এসে র‌্যাপার বাদশাহ’র নীরবতা। ছবি: সংগৃহীত

বলিউডের জনপ্রিয় র‌্যাপার বাদশায় মাতলো ঢাকা। বলিউড সুবাদে র‌্যাপার বাদশাহ গোটা দুনিয়াতেই এখন জনপ্রিয় এক পারফর্মার। সে হিসেবে বাংলাদেশের শ্রোতাদের কাছে তার কদর একটু বেশিই থাকবে, স্বাভাবিক। তার প্রতিধ্বনি মিললো বাদশাহর প্রথম ঢাকা দর্শনে।

শুক্রবার (১ মার্চ) রাজধানীর আইসিসিবি এক্সপো জোনে আয়োজিত ‘স্পার্ক টোয়েন্টি মিউজিক ফেস্ট’ সিরিজের ওপেন এয়ার কনসার্টে অংশ নেন বাদশাহ ও তার দল। এবারই প্রথম তার বাংলাদেশ সফর। ফলে নিজের, আয়োজকদের এবং ভক্তদের জন্য বিষয়টি ছিলো বিশেষ। জমজমাট কনসার্ট শেষে তিন পক্ষই যেন স্বস্তির ঢেঁকুর তুললো শুক্রবার মধ্যরাতে।

যদিও পুরো আয়োজনের দর্শক সারিতে টিকটকার আর কিশোর গ্যাং সদস্যদের উপস্থিতি, উন্মাদনা আর বিশৃঙ্খলা ছিলো চোখে লাগার মতো।

সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয়, ভেন্যু ফটকে সবার পকেট হাতিয়ে সিগারেটের প্যাকেট রেখে দিলেও ভেতরে ছিলো উন্মুক্ত সিগারেট ও গাঁজা সেবনের চিত্র। যা নিখাদ সংগীতপ্রেমিদের জন্য বিস্ময়কর ও বিব্রতকর ছিলো বটে। তবে এর সবটুকুই যেন ছাপিয়ে গেলো বাদশাহর উপস্থিতি, নীরবতা, কথোপকথন আর পারফরমেন্স।

রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ মঞ্চে ওঠেন বাদশাহ ও তার দল। বাংলাতেই বললেন, ‘আপনারা সবাই কেমন আছো?’

স্পষ্ট, বাংলা প্র্যাকটিসের সময় খুব একটা পাননি বাদশাহ। তবে এর পরের কথাগুলো মন ভোলানো। বললেন, ‘আমি বাংলাদেশকে খুব ভালোবাসি। ঢাকা, থ্যাংকইউ সো মাছ।’

এরপর হিন্দিতে বললেন, ‘একটা বিষয় আপনাদের আজ জানাতে চাই। আমার কোনও গান রিলিজ হলে প্রথমে বাংলাদেশের কথা মনে হয়। কারণ, এখানে আমার অনেক শ্রোতা। আর আজ আমি এখানে পারফর্ম করতে আসিনি, এসেছি আপনাদের সঙ্গে পার্টি করতে।’

থামলেন না। বলেই গেলেন, ‘মনে হচ্ছে না, আমি প্রথম এসেছি। মনে হচ্ছে আমি আমার ঘরে গান করছি। আমি গোটা দুনিয়ায় কনসার্ট করে বেড়াই। কিন্তু এখানে এসে কেন জানি নার্ভাস লাগছে।’

সম্ভবত, ঢাকায় তার প্রথম শো এবং এতো দর্শক দেখে বাদশাহ নিজেও মুগ্ধ, বিস্মিত এবং নার্ভাস ছিলেন। যদিও সেসব নার্ভাসের গল্প মুছে দিয়ে বাদশাহ হুট করে বাংলায় বলে উঠলেন, ‘খেলা হবে’। যে সংলাপ দিয়ে বাদশাহ যেন ঢাকার মঞ্চে তুলে নিলেন পশ্চিমবঙ্গের মমতা আর নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমানকে!

বাস্তবেও তিনি ঢাকার মঞ্চে পারফর্ম করতে সঙ্গে এনেছেন একদল মিউজিশিয়ানের সঙ্গে দুই দারুণ সহশিল্পী বাদল ও শার্লি। যারা দু’জন পুরোটা সময়জুড়ে বাদশাহকে সঙ্গ দিয়েছেন প্রায় সবগুলো গানে।

তবে আলাপ শেষে মূল গানে যাওয়ার আগেই বদশাহ মনে করলেন ২৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বেইলিরোডে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহারানো মানুষগুলোকে। তাদের এমন প্রস্থানে মাথানত করে পালন করলেন ৩০ সেকেন্ড নীরবতা। যদিও দর্শক সারিতে সেই নীরবতার ছাপ পড়েনি একটুও!

এরপর অনেকটা বিরামহীন গেয়ে শোনালো বাদশাহ ও তার দল- লাড়কি বিউটিফুল, ওয়াখরা সোয়াগ, রূপ তেরা মাস্তানা, ডিজেওয়ালা বাবু, চালো নাচো, হাই গারমি, কারলো রেহেম থোড়া, কালা চশমা, বড়লোকের বেটি লো প্রভৃতি। জানান দিলেন, তিনি সত্যিই বলিউডের র‌্যাপার বাদশাহ।
গানের ফাঁকে ফাঁকে দারুণ আলাপ করেন দর্শকদের সঙ্গে। এমনকি ভেন্যুর বাইরের নিকটবর্তী বাড়ির জানলা ও ছাদে থাকা শ্রোতাদের সঙ্গে গল্প করতেও ভোলেননি মজার বাদশাহ।

জানালেন, তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। গান গেয়ে এই পর্যায়ে আসতে পারবেন, সেটা ভাবেননি। তবে নিজেকে গোটা দুনিয়ার কাছে পরিচয় ঘটানোর একটা স্বপ্ন লালন করতেন ছোটবেলা থেকেই। বাদশাহ মনে করেন, তার সেই আত্মবিশ্বাসই নিয়ে এসেছে এই পর্যন্ত।

এদিকে কনসার্টের মূল চমক বাদশাহ হলেও ‘ওয়ার্মআপ’ শিল্পী হিসেবে এদিন মঞ্চে উঠেছিলেন দেশের নামজাদা বেশ ক’জন তারকা শিল্পী। এরমধ্যে রয়েছেন প্রীতম হাসান জেফার, ফুয়াদ এন্ড ফ্রেন্ডস, ব্ল্যাক জ্যাং ও সঞ্জয়। ফুয়াদের সঙ্গে দারুণ জমিয়েছেন মুত্তাকি হাসিব ও তাসনিম আনিকা। বিশেষ করে ফুয়াদের তৈরি মিলার গাওয়া বেশ কটি গান কণ্ঠে তুলে আনিকা অবাক মুগ্ধতায় ভাসালেন বাদশাহকে শুনতে আসা শ্রোতাদের।

এর বাইরে দিনের আলোয় প্রীতম ও জেফারের পরিবেশনাও ছিলো মুগ্ধকর। যদিও এই শিল্পীরা কেন ওয়ার্মআপ আর্টিস্ট হিসেবে বাদশাহ’র মঞ্চে উঠলেন, সেটি উপস্থিত অনেক শ্রোতার মনেই ছিলো বড় প্রশ্ন।

Link copied!